পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোট সামনে রেখে রোববার রাজধানী ইসলামাবাদে সমাবেশ করেছে তাঁর দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। খবর ডনের
ইসলামাবাদের প্যারেড গ্রাউন্ডের এ সমাবেশকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে উল্লেখ করেছে পিটিআই। পাকিস্তানের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরাও একে ইমরানের দলের শক্তি প্রদর্শনের মহড়া হিসেবে দেখছেন।
সমাবেশে পিটিআইয়ের সমর্থকদের উদ্দেশে ভাষণ দেন দলটির নেতারা। ভাষণে দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ধন্যবাদ জানান ইমরান খান। তিনি বলেন, ‘পার্লামেন্টে আমার দলের সদস্যদের প্রশংসা করছি। আপনাদের অর্থের প্রলোভন দেখানো হয়েছে ও ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে সে পথে না গিয়ে আপনারা আমাকে খুশি করেছেন। আমি আপনাদের নিয়ে গর্ব করি।’
ইমরানের বিরুদ্ধে ৮ মার্চ পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেয় বিরোধী দলগুলো। প্রস্তাবের ওপর গত শুক্রবার ভোটাভুটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভোটের আগেই সোমবার বিকেল চারটা পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবির ঘোষণা দেন স্পিকার আসাদ কায়সার।
বিরোধী দল ছাড়াও ইমরানের নিজ দলের অনেক আইনপ্রণেতা তাঁর পাশে নেই বলে গুঞ্জন রয়েছে। এ ছাড়া সরকারের শরিক দলগুলোও ইমরানের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারে। সরকার পতনের হুমকির মুখে রোববার বিশাল জনসভার আয়োজন করল পিটিআই। বিভিন্ন এলাকা থেকে জনসভায় যোগ দেন দলের বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থক। পিটিআইয়ের টুইটার অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, হেলিকপ্টারে করে ইমরান জনসভাস্থলে আসেন।
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, ‘বিদেশি অর্থ ব্যবহার করে পাকিস্তানে সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের লোকজনকে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিছু লোক আমাদের বিরুদ্ধে অর্থ ব্যবহার করছে। আমাদের চাপ দিতে কোন জায়গা থেকে এসব চেষ্টা করা হচ্ছে, তা আমরা জানি। আমাদের লিখিতভাবেও হুমকি দেওয়া হয়েছে। তবে জাতীয় স্বার্থে আপস করব না।’
সমাবেশে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে ইমরান বলেন, ‘আমি আপনাদের সমাবেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছি এই বিষয়ে জোর দিতে যে পাকিস্তান ইসলামি রাষ্ট্রের আদর্শে গড়ে উঠেছিল। আমাদের দেশকে মদিনা সনদের ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা দরকার ছিল।’
তাঁর আগে ক্ষমতায় থাকা তিন নেতাকে ‘থ্রি স্টুজেস’ (তিন ভাঁড়) উল্লেখ করে ইমরান বলেন, ‘এই তিনজন পাকিস্তানে বছরের পর বছর লুটপাট করেছেন। জেনারেল পারভেজ মোশাররফের মতো আমাকেও আত্মসমর্পণ করাতে নাটক (অনাস্থা প্রস্তাব) সাজানো হয়েছে। তাঁরা সরকারকে ব্ল্যাকমেল করতে চাইছেন। জেনারেল মোশাররফ এই চোরদের সাধারণ ক্ষমার সুযোগ করে দিয়ে নিজের দল রক্ষার চেষ্টা করেছিলেন। তবে এর ফল পাকিস্তানে ধ্বংস ডেকে আনে। আমার সরকারের পতন হলে বা আমার প্রাণ গেলেও আমি তাঁদের ক্ষমা করব না।’
এর আগে পাঞ্জাবের কামালিয়া শহরে জনসভায় ইমরান বলেন, ‘এই অপরাধীদের (বিরোধীদের) লুটপাট ও লুণ্ঠনের দিন যে শেষ হয়েছে, সেই বার্তা দিতে রোববার রাজধানীতে বড় জনসমুদ্র তৈরি হবে।’