ধারণা বিশ্লেষকদের

নতুন সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের কৌশল ইমরানের

পার্লামেন্টের অধিবেশনে বক্তব্য দিচ্ছেন ইমরান খান
ফাইল ছবি: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে।

পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে বিদায় নিয়েছেন ইমরান খান। পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন শাহবাজ শরিফ। তবে দেশটিতে রাজনৈতিক সংকট এখনো কাটেনি। নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের সময় পার্লামেন্টের ভোটাভুটি বর্জন করেন ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সাংসদেরা। এ সময় তাঁরা পার্লামেন্ট থেকে একযোগে পদত্যাগ করারও ঘোষণা দেন। পিটিআইয়ের সাংসদদের গণপদত্যাগে দেশটিতে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক অচলায়তন আরও জোরালো হতে পারে বলে বিশ্লেষকদের অনেকের মত। খবর এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের

মাসখানেক আগে থেকে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে সরব ছিলেন বিরোধীরা। তবে এর মাঝেও পাকিস্তানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা চলছিল। পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে থাকে ইমরান খানের পরামর্শে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার ঘোষণায়। সুপ্রিম কোর্ট এ ঘোষণাকে ‘অসাংবিধানিক’ উল্লেখ করে পার্লামেন্ট বহাল রাখেন। নানা নাটকীয়তার পর গত শনিবার মধ্যরাতে অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হয়। ইমরানকে ক্ষমতা থেকে হটাতে ১৭২ জনের সমর্থন প্রয়োজন ছিল। ইমরানের বিপক্ষে ভোট দেন ১৭৪ জন। এরপর সোমবার পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শাহবাজ শরিফ।

সদ্য প্রধানমন্ত্রিত্ব হারানো ইমরান খানের একটি পোস্টার

তবে পিটিআইয়ের সাংসদেরা গণপদত্যাগে বিলম্ব করতে পারেন। কেননা পাকিস্তানের আইনে পদত্যাগের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া নেই। পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব লেজিসলেটিভ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রান্সপারেন্সির (পিআইএলডিএটি) প্রেসিডেন্ট আহমেদ বিলাল মেহবুব বলেন, পার্লামেন্টের বর্তমান স্পিকার কিংবা নতুন সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত স্পিকার তাঁদের (পিটিআইয়ের সাংসদ) কাছে নিজেদের অবস্থানের ব্যাখ্যা চাইতে পারেন। তখন বিষয়টি নিষ্পত্তি হতে পারে। জানা যেতে পারে তাঁরা কবে গণপদত্যাগ করবেন, নাকি করবেন না।

যদি পিটিআইয়ের সাংসদেরা পদত্যাগপত্র জমা দেন, তখন স্পিকার প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলতে পারেন। এতেও অনেক সময় লাগবে বলে মনে করছেন আহমেদ বিলাল মেহবুব। তিনি বলেন, এরপরও সাংসদেরা নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকলে স্পিকার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে আইন মেনে বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানাবেন। তখন শূন্য আসনে উপনির্বাচন আয়োজন করবে কমিশন।

ইমরান খানের নেতৃত্বে পিটিআইয়ের সাংসদেরা একযোগে পদত্যাগ করলে পার্লামেন্টে বিরোধী দল বলে আর কেউ থাকবে না। আহমেদ বিলাল মেহবুবের মতে, এটা দুর্ভাগ্যজনক ও গণতন্ত্রের জন্য মোটেও সুখকর নয়। তবে এতে শাহবাজ শরিফের সরকারের কার্যক্রম এগিয়ে নিতে কোনো সমস্যা হবে না।

যদি উপনির্বাচন আয়োজন করতেই হয়, তাতে পিটিআই অংশ নেবে কি না, সেটাও ভাবতে হবে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনকে। এ জন্য আগে থেকেই সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আইনজীবী ইমরান শফিক বলেন, সব সময় উপনির্বাচন আয়োজন করা হয় শূন্য আসনের বিপরীতে। আর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় দুটি পরিস্থিতিতে। পার্লামেন্টের মেয়াদ শেষে ও পার্লামেন্ট ভেঙে দিলে। তিনি জানান, আসন শূন্য হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন আয়োজনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আর পার্লামেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ১২০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে।

ইমরান খান সরকারের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, পিটিআই কোনো উপনির্বাচনে অংশ নেবে না। এমনকি স্পিকারের পক্ষ থেকে সাংসদদের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলারও প্রয়োজন নেই। একযোগে পদত্যাগ করার পরিকল্পনা পিটিআইয়ের দলীয় সিদ্ধান্ত। তবে ইমরান খান ও পিটিআই আবারও ক্ষমতায় আসবে।পিটিআইয়ের মুখপাত্রের এমন মন্তব্য বিশ্লেষণ করে অনেকেই বলছেন, দলটি নতুন সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের কৌশল নিয়েছে। ইমরান খান পাকিস্তানে দ্রুত আগাম নির্বাচন চান। পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের এখনো ১৫ মাস বাকি রয়েছে। এর আগে ক্ষমতা হারানোর জন্য ‘বিদেশি ষড়যন্ত্রকে’ দায়ী করে স্বতন্ত্র একটি অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন ইমরান খান। এটা কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী বৈতরণি পার হতে চাইছেন তিনি।

বিশ্লেষকদের অনেকের মতে, নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে একজন ‘অপরাধী’ ও ‘জাতির সঙ্গে প্রতারণাকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইছেন ইমরান খান। এ জন্য তিনি শাহবাজের সঙ্গে সামনাসামনি বৈঠক করতেও রাজি নন। সাংসদদের একযোগে পদত্যাগের পরিকল্পনার বড় কারণ শাহবাজ শরিফ। কেননা, ইমরান খান যদি বিরোধী নেতার আসনে বসেন, তাহলে পার্লামেন্টের নেতা হিসেবে অপরাধী শাহবাজকে মেনে নিতে হবে। এতে ইমরানের ঘোর আপত্তি।

এ পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকদের ধারণা, নতুন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নিয়োগের আগপর্যন্ত পিটিআই সাংসদদের একযোগে পদত্যাগের বিষয়টি ঝুলে থাকতে পারে। এদিকে নতুন সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রের বরাতে গতকাল মঙ্গলবার ডনের খবরে বলা হয়েছে, নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার দায়িত্ব বণ্টন এবং স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের মতো সাংবিধানিক পদের মনোনয়ন নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তাই শিগগিরই পিটিআইয়ের সাংসদদের একযোগে পদত্যাগের বিষয়টি চূড়ান্ত সুরাহা হওয়ার সম্ভাবনা সীমিত।