'এটি আঘাত হানার পর আমার জ্ঞান ফেরে। চারিদিকে আগুন ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। শিশু, যুবক এবং বয়স্কদের চিৎকার ও কান্না শুনি। সবাই কান্নাকাটি করে বাঁচার চেষ্টা করছিল। আমি সিটবেল্ট খুলে কিছুটা আলো দেখতে পাই এবং সেদিকে যাওয়ার চেষ্টা করি। এরপর লাফ দিই।'
পাকিস্তানের করাচির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোহাম্মদ জুবায়ের (২৪) এভাবেই বর্ণনা করেছেন বিমান দুর্ঘটনায় রক্ষা পাওয়ার পরমুহূর্তের অভিজ্ঞতা। তাঁর এই বর্ণনার ভিডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঘোরাফেরা করছে।
পাকিস্তানে বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণে রক্ষা পাওয়া দুজনের একজন এই জুবায়ের। করাচিতে ঘটা এই বিমান দুর্ঘটনায় ৯৭ জন নিহত হয়েছেন। জুবায়ের বলেন, আগুনে পুড়তে থাকা ধ্বংসস্তূপ থেকে তিনি লাফ দিয়েছিলেন।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে জানানো হয়, শুক্রবার বিকেলের দিকে করাচির জিন্নাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে একটি আবাসিক এলাকায় যাত্রীবাহী ওই বিমান বিধ্বস্ত হয়। পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থার (পিআইএ) এ–৩২০ এয়ারবাসটি ৯১ জন যাত্রী ও ৮ জন ক্রু নিয়ে লাহোর থেকে করাচি যাচ্ছিল। জিন্নাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই অবতরণের কথা ছিল এটির।
এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবার বিকেলে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের (পিআইএ) বিমানটি করাচি বিমানবন্দরের কাছে যাওয়ার সময় উভয় ইঞ্জিন অকেজো হওয়ার পর এটি রাস্তায় বিধ্বস্ত হয়। এর পাখা ছিটকে পড়ে, আগুন ও ধোঁয়ায় ভরে যায়। রাত পর্যন্ত উদ্ধারকাজ চলে।
করোনার কারণে লকডা্উনের পর ঈদ উপলক্ষে বাণিজ্যিক বিমান চলাচল শুরু হয়েছিল সম্প্রতি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে বিমান দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া জুবায়েরকে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে নারকীয় সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে দেখা যায়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, জুবায়েরের শরীর পুড়ে গেছে। তবে স্থিতিশীল অবস্থায় আছেন তিনি। জীবিত উদ্ধার করা অন্যজন হলেন ব্যাংক অব পাঞ্জাবের প্রেসিডেন্ট জাফর মাসুদ।
সিন্ধু প্রদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ৯৭ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ১৯ জনকে শনাক্ত করা গেছে। অন্যদের ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে।
দুর্ঘটনাস্থলের দমকলকর্মী সরফরাজ আহমেদ এএফপিকে জানিয়েছেন, উদ্ধারকারীরা যখন লাশ উদ্ধার করেন, তখন পর্যন্ত অনেকেই বিমানের সিটবেল্ট পরা ছিল।
ডনের প্রতিবেদনে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বলা হয়, বিমানটি দুই দফায় রানওয়েতে নামার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এরপর বিমানবন্দরের পাশের আবাসিক এলাকায় আছড়ে পড়ে। এতে ওই এলাকার বেশ কিছু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আহত হন স্থানীয় অন্তত ৩০ জন। দুর্ঘটনার পর পর উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও ওই অভিযানে অংশ নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী শাকিল আহমেদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, জিন্নাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কয়েক কিলোমিটার দূরে আবাসিক এলাকায় আছড়ে পড়ে উড়োজাহাজটি। আছড়ে পড়ার আগে একটি মোবাইল টাওয়ারকে ধাক্কা দেয়। দুর্ঘটনাস্থলের বেশ কয়েকটি বাড়ি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সিন্ধু প্রদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর গণমাধ্যম সমন্বয়ক মিরান ইউসুফ দুই যাত্রীর বেঁচে যাওয়ার তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এ ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। দুর্ঘটনার কারণ জানতে যথাযথভাবে তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।