নানামুখী চাপের মুখে পড়ে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন। আজ বৃহস্পতিবার তিনি প্রথমে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। এর আগে তিনি সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
পার্লামেন্টে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটাভুটির সময় তাঁর দলের কেউ যাতে অংশ না নেন, সেই নির্দেশ দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তবে সমর্থন পেতে একটি দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছেন ইমরান। দেশটির নাম তিনি জানাননি।
এদিকে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর আজও আলোচনা শুরু করা যায়নি। গত সোমবারের পর আজ বিকেল চারটায় জাতীয় পরিষদে অধিবেশন শুরু হয়। কিন্তু শুরুর কয়েক মিনিটের মাথায় আগামী রোববার পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি। ওই দিনই অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হতে পারে।
অধিবেশনের শুরুতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বাবর আওয়ান অধিবেশন মুলতবির আবেদন জানানোর পর তা কার্যকর করা হয়। তবে বিরোধীরা গতকালই ভোটাভুটির আবেদন জানান।
তারকা ক্রিকেটার ইমরান ২০১৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তবে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে তাঁকে। উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও দিন দিন বাড়তে থাকা ঘাটতির জেরে ইমরানের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সমালোচনার মুখে পড়েছে। এ ছাড়া সামরিক বাহিনীর সঙ্গে টানাপোড়েনের কথাও শোনা যাচ্ছে।
এসব পরিস্থিতির মধ্যে গত ২৮ মার্চ জাতীয় পরিষদে তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেন বিরোধী দলের নেতারা। মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তানসহ (এমকিউএম-পি) কয়েকটি দল ইমরান সরকারের জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় বিরোধীরা এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে দাবি করা হচ্ছে।
গতকাল প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিরোধী পক্ষে এখন পর্যন্ত ১৭৭ জন আইনপ্রণেতা রয়েছেন। এ ছাড়া ইমরানের দল পিটিআইয়ের কয়েকজন আইনপ্রণেতাও প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিতে পারেন এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করতে জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে অন্তত ১৭২ ভোট প্রয়োজন হয়। পরিষদে মোট আসনসংখ্যা ৩৪২টি।
ইমরান খানের দাবি, সরকারের পতন ঘটাতে ‘বিদেশি চক্রান্ত’ রয়েছে। গত রোববার ইসলামাবাদে এক বিশাল জনসভায় একটি কাগজ দেখিয়ে সেটাকে ‘বিদেশি চক্রান্তের নথি’ বলে দাবি করেন ইমরান। গতকাল বুধবার মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠকেও ওই নথিটি দেখানো হয়। ওই বৈঠকে সদ্য জোট ত্যাগ করা এমকিউএম-পি ও বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টির (বিএপি) সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও তাঁরা উপস্থিত হননি।
ইমরান খানের গদি নড়বড়ে অবস্থায় আজ তিনি জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ইমরানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, ষড়যন্ত্রকারী দেশটির বিরুদ্ধে ‘শক্তিশালী রাজনৈতিক পদক্ষেপ’ নেবে কমিটি। তবে দেশটির নাম প্রকাশ করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাম এসেছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার কথা অস্বীকার করেছে।
জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের পর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ইমরান। এর আগে সামরিক বাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে ইমরান একাধিক বৈঠক করেছেন বলে বুধবার দাবি করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী। জিও নিউজের প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়।
বিশ্লেষকদের ধারণা, কথিত ওই চিঠি প্রকাশ করলে পিটিআইয়ের অনেক সদস্য ও ক্ষমতাসীন জোটের অনেক দল অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকবে বলে মনে করছেন ইমরান খান।