পাকিস্তানে দুর্নীতি মামলা: কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থার দাবি ক্ষমতাসীন দলের নেতার

পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) নেতা শহিদ খাকান আব্বাসি
ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত

পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো (এনএবি) ভেঙে দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) নেতা শহিদ খাকান আব্বাসি। একই সঙ্গে সংস্থাটির কর্মীদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের খবরে বলা হয়, মঙ্গলবার সকালে রাজধানী ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন খাকান আব্বাসি। এনএবি হলো দুর্নীতি দমনে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান।

সংবাদ সম্মেলনে আব্বাসি বলেন, ‘এনএবির কর্মীরা বছরের পর বছর ধরে লুটপাট চালিয়েছেন ও মানুষকে নির্যাতন করেছেন। এখন তাঁদের জবাবদিহির মুখোমুখি হওয়া উচিত।’

এনএবি প্রধান পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ‘পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে’ ছিলেন বলে দাবি করেন আব্বাসি। তিনি বলেন, সাবেক সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী চলতেন এনএবি প্রধান।

ইমরান সরকারের এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন পিএমএল-এনের এই নেতা। তাঁর ভাষ্য, এনএবি প্রধানকে ভুয়া মামলা দায়ের করতে, মানুষকে গ্রেপ্তার ও মানহানি করতে নির্দেশ দিতেন ওই মন্ত্রী। তবে তাঁর নাম উল্লেখ করেননি আব্বাসি।

গেল চার বছরে পিএমএল-এনের নেতাদের বিরুদ্ধে আনা একটি অভিযোগও এনএবি প্রমাণ করতে পারেনি দাবি করে আব্বাসি বলেন, ‘তারা (এনএবি) কেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার কারও বিরুদ্ধে তদন্ত করেনি, যাঁরা শত শত কোটি রুপির দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন।’

এনএবির কর্মীদের জবাবদিহির আওতায় আনার সময় হয়েছে উল্লেখ করে এই নেতা আরও বলেন, ‘আমরা প্রতিশোধ নিচ্ছি না। আমরা এনএবির অবস্থা জনগণের সামনে প্রকাশ করতে চাচ্ছি।’

এনএনবির দপ্তরের ভেতরে ক্যামেরা স্থাপন করতে সরকার আদালতের দ্বারস্থ হবে জানিয়ে আব্বাসি বলেন, ‘এতে মানুষ জানতে পারবে সত্যিকারের দুর্নীতি কারা করছেন।’

এনএবি নিয়ে পিটিআই ও পিএমএল-এনের বিরোধ

ইমরান খানের পতনের পর গত সোমবার পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন শাহবাজ শরিফ। আগের দিন পার্লামেন্টের জাতীয় পরিষদে বিরোধী দলগুলোর আনা এক অনাস্থা ভোটে হারেন ইমরান।

এর আগে ইমরান দাবি করেছিলেন, নিজেদের ‘লুট করা সম্পদ’ রক্ষা করতে ও নেতাদের দুর্নীতির তদন্ত থেকে বাঁচাতে চায় বিরোধী জোট। এ জন্য তাঁরা এনএবির ক্ষমতা কমাতে পাকিস্তানে সরকার গঠন করতে চেয়েছিল।

গেল তিন বছর ধরেই পিএমএল-এন ও পিটিআইয়ের মধ্যে বিরোধের অন্যতম কারণ এনএবি। কারণ, পিএমএল-এন ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) অনেক নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা করেছে সংস্থাটি।

২০১৮ সালে যখন পিটিআই ক্ষমতায় আসে, তখন ইমরান খান বলেন, এনএবি শাহবাজ ও তাঁর ছোট ভাই নওয়াজ শরিফের দুর্নীতি জনগণের সামনে তুলে ধরবে এবং জনগণের অর্থ আত্মসাতের জন্য তাঁদের শাস্তি দেবে। পরে পিপিপি ও পিএমএল-এন অভিযোগ করে, এনএবি পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত।

এনএবি নিয়ে তত্কালীন সরকার ও বিরোধী দলগুলোর টানাপোড়েন আরও তীব্র হয় গত বছর। সে সময় সরকার ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি (তৃতীয় সংশোধনী) অধ্যাদেশ জারির করে। নতুন আইনে সুপ্রিম কোর্ট জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছ থেকে এনএবি প্রধানকে অপসারণের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়। এই ক্ষমতা দেওয়া হয় রাষ্ট্রপতিকে। ওই অধ্যাদেশ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করে পিপিপি ও পিএমএল-এন।