পাকিস্তানের নবগঠিত অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদ (ইএসি) থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো সুপরিচিত অর্থনীতিবিদ ও সংখ্যালঘু আহমেদি সম্প্রদায়ের আতিফ মাইয়ানকে। গত শুক্রবার ধর্মীয় কট্টরপন্থীদের চাপে এ সিদ্ধান্ত নিতে হয় ইমরান খান সরকারকে। হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
সরকারি দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) আইনপ্রণেতা ফয়সাল জাভেদ খান এক ঘোষণায় জানান, মাইয়ানকে সরে দাঁড়াতে বলা হয়েছে।
আতিফ মাইয়ান, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন অর্থনীতিবিদ, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে আছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে পড়াশোনা করেছেন তিনি।
দায়িত্ব গ্রহণের পর পাকিস্তান সরকারকে পরামর্শ দিতে ১৮ সদস্যবিশিষ্ট অর্থনৈতিক পরিষদ গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এই কাউন্সিলের মূল নেতৃত্বে রয়েছেন তিনি নিজে। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে গ্রহণযোগ্যতা আছে—এমন ১১ জন অর্থনীতিবিদ আছেন এই পরিষদে। এ ছাড়া সাতজন সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন। দেশটির অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক উন্নয়নে পরিষদ থেকে আসা বিভিন্ন উপদেশ-পরামর্শ যেন সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছায়, সে জন্য ইমরান খান নিজেই এর প্রধানের দায়িত্ব নিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ঘটনার পর এক টুইট বার্তায় মাইয়ান বলেন, ‘দেশের ভেতর স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে অর্থনৈতিক পরিষদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। আমাকে নিয়োগ দেওয়ার কারণে সরকারকে মোল্লা ও তাদের সমর্থকদের দ্বারা প্রতিকূল চাপের মুখোমুখি হতে হচ্ছিল।’
তবে সরকারের এই সিদ্ধান্তে ক্ষিপ্ত হয়েছেন অর্থনৈতিক পরিষদের আরেক অর্থনীতিবিদ আসিম ইজাজ খাজা। তিনিও পরিষদ থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এক টুইট বার্তায় সুন্নি সম্প্রদায়ের এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘একজন মুসলমান হিসেবে আমি এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করতে পারি না।’
তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী বলেন, সরকার কোনো বিভেদ চাইছে না বলে মাইয়ানের মনোনয়ন বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে এর আগে ফাওয়াদ চৌধুরী মাইয়ানের মনোনয়নে জোর সমর্থন জানিয়েছিলেন। তিনি সে সময় বলেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার অধিকার রাখে। তবে এখন সুর পাল্টে তিনি বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য আহমেদি নিয়োগ সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।
পাকিস্তানে সংখ্যালঘু তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে আহমেদি সম্প্রদায়। অমুসলিম বলে পরিচিত হলেও এই সম্প্রদায় ইসলামেরই একটি অংশ। আহমেদিরাও নিজেদের মুসলিম বলে দাবি করেন। তবে বিভিন্ন মুসলিম ঘরানার চিন্তাধারায় তাঁদের অমুসলিম বলেই চিহ্নিত করা হয়।
মাইয়ানকে সরিয়ে দেওয়ার ঘোষণার ঘণ্টাখানেক পর রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে আসেন ইমরান খান। তিনি একটি বাঁধ নির্মাণে সহযোগিতার জন্য প্রবাসী পাকিস্তানিদের প্রতি আহ্বান জানান।