নতুন নির্বাচনের দাবিতে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ডাকা রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখে লংমার্চ (আজাদি মার্চ) ঘিরে দেশটিতে চরম উত্তেজনা ছড়িয়েছে। আজ বুধবার ইমরানের সমর্থকদের ইসলামাবাদে প্রবেশ ঠেকাতে লংমার্চে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে দেড় সহস্রাধিক মানুষকে।
গতকাল বেলা তিনটায় লংমার্চ শুরুর আগে থেকেই ইসলামাবাদ অবরুদ্ধ করে দেয় পাকিস্তান সরকার। ইসলামাবাদসহ পাঞ্জাব প্রদেশের বড় শহরগুলোয় প্রবেশের সব পথে পুলিশ ব্যারিকেড বসায়। রাজধানীতে পার্লামেন্ট ভবন, বিভিন্ন দেশের দূতাবাসসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোয় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ব্যারিকেড বসানো হয় গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডেও।
টিভিতে প্রচারিত ফুটেজে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকায় লংমার্চে অংশ নেওয়া মানুষদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা করেছে, কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে। অনেক জায়গায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে ইমরানপন্থীরা। ভাঙচুর করা হয়েছে যানবাহন।
তবে এসব সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি বলে রয়টার্সকে জানান পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা আমজাদ মালিক। তিনি জানান, সংঘর্ষের বেশির ভাগ ঘটেছে পাঞ্জাব প্রদেশে। অন্যদিকে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ বলেন, আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ১ হাজার ৭০০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। পরে মুচলেকা দেওয়ায় ২৫০ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার থেকেই পিটিআই নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধরপাকড় শুরু করে পুলিশ। জনসমাগম ঠেকাতে ইসলামাবাদ ও অন্যান্য বড় শহর লাহোর, করাচি ও রাওয়ালপিন্ডিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পেশোয়ার থেকে একটি ট্রাকে চেপে হাজারো মানুষ সঙ্গে নিয়ে ইসলামাবাদের পথে রওনা দেন ইমরান খান। গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডে পুলিশের বাধার মুখে তিনি বলেন, ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কোনো ব্যারিকেড পথরোধ করতে পারবে না। আমরা ইসলামাবাদে পৌঁছে এ কর্মসূচি শেষ করব।’ অন্যদিকে পাকিস্তান সরকারের ভাষ্য, ইমরান খানের এই কর্মসূচি বেআইনি। ‘খারাপ উদ্দেশ্য’ নিয়ে তিনি ইসলামাবাদে জনসমাগম ঘটাতে চাইছেন।
এ বিষয়ে রানা সানাউল্লাহ বলেন, ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ নেওয়া মানুষের সাংবিধানিক ও আইনি অধিকার। এতে বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু কেউ যদি আইন ভেঙে সহিংস আচরণ করে, তবে আমরা তা মেনে নিতে পারি না।’
এদিকে জিও নিউজের প্রতিবেদনে শীর্ষস্থানীয় এক নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে ইমরান খানকে আটকে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে। তাতে আরও বলা হয়েছে, পাকিস্তানের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ জনসমাগমের যে কথা ইমরান খান বলে আসছেন, তা ঠেকানোর জন্যই সরকার তাঁকে আটকের পরিকল্পনা করেছে।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় অব্যবস্থাপনার অভিযোগে পার্লামেন্টে আনা অনাস্থা ভোটে হেরে গত মাসে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান। নতুন প্রধানমন্ত্রী হন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) নেতা শাহবাজ শরিফ। এর পর থেকে নতুন নির্বাচনের দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলন করছেন ইমরান ও তাঁর দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা। দেশজুড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে এখন দ্রুত নতুন নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে রাজধানী অভিমুখে লাখো মানুষের লংমার্চে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।