পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব তুলেছে বিরোধী দলগুলো। কাল রোববার অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি হওয়ার কথা। বিরোধীদের অভিযোগ, ইমরান খান পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিয়েছেন। তবে ইমরানের অভিযোগ, বিদেশি রাষ্ট্রের সাহায্যে বিরোধীরা তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র করছে। এমনকি তাঁকে হত্যার চেষ্টা চলছে বলে দাবি করছেন তিনি।
ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) কিছু সদস্য দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এরপর বিরোধী দলগুলো তাঁদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা শুরু করে। এরপরই ইমরান খান সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর চাপে পড়েন। গত বুধবার প্রধান জোটশরিক মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান (এমকিউএম-পি) বিরোধী জোটের সঙ্গে হাত মেলানোর পর কার্যত ইমরান খানের পিটিআই জোট সরকার পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
৩৪২ সদস্যের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ১৭২ জন আইনপ্রণেতার (এমএনএ) সমর্থন প্রয়োজন। কিন্তু প্রধান শরিক ও দলীয় বিদ্রোহীদের হারিয়ে ইমরান খানের সরকারের পক্ষের সমর্থন অনেক কমে গেছে। পিটিআই সরকারের ওপর ১৪২ সদস্যের সমর্থন রয়েছে বলে জানাচ্ছে দেশটির সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ। বিপরীতে বিরোধীদের পক্ষে রয়েছেন ১৯৯ জন এমএনএ। ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ১৭২ জন সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন। তবে এর চেয়েও অনেক বেশি এমএনএ এখন বিরোধীদের পক্ষে। যদি ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হন, তাহলে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কীভাবে নির্বাচিত হবেন, সে জল্পনা শুরু হয়ে গেছে।
পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের নিয়ম ও কার্যপ্রণালিতে বলা রয়েছে, যদি প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য হয়, তাহলে জাতীয় পরিষদ কোনো বিতর্ক বা অন্য কোনো কিছু না করে নতুন একজন মুসলিম ধর্মাবলম্বী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করার প্রক্রিয়া শুরু করবে। জাতীয় পরিষদের যেকোনো সদস্য প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য নিজের বা অন্য কোনো মুসলিম প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করতে পারেন। তবে একজনের নাম দুবার দেওয়া যাবে না। এক মনোনয়নপত্রেই নাম দেওয়া যেতে পারে।
জাতীয় পরিষদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রার্থীর নাম ঠিক হয়ে গেলে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের আগের দিন বেলা দুইটার মধ্যে প্রার্থীদের নাম সচিবের কাছে পাঠাতে হবে।
প্রার্থী ও তাঁদের প্রস্তাবক বা সমর্থনকারীদের উপস্থিতিতে (যাঁরা উপস্থিত থাকতে ইচ্ছুক) মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করবেন স্পিকার। তিনি যদি সন্তুষ্ট না হন, তবে কিছু বিষয় বিবেচনায় মনোনয়নপত্র বাতিল করতে পারেন তিনি। যেসব কারণে স্পিকার প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করার ক্ষমতা রাখেন, সেগুলো হলো:
প্রার্থী যদি জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) না হন।
প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে ৩২ নম্বর বিধি মেনে চলা না হলে।
প্রস্তাবকারী, দ্বিতীয় ব্যক্তি বা প্রার্থীর স্বাক্ষর নকল হলে।
এসব যাচাইয়ের পর মনোনয়নপত্র গ্রহণ বা খারিজ করে দেওয়ার ক্ষমতা স্পিকারের হাতে। মনোনয়নপত্র খারিজ করলে স্পিকার সংক্ষেপে এর কারণ জানাবেন।
জাতীয় পরিষদের বিধানে আরও বলা আছে, ‘প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ বা বাতিলের ক্ষেত্রে স্পিকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।’
নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করতে জাতীয় পরিষদে ভোটাভুটির আগে যেকোনো সময় একজন প্রার্থী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করার ক্ষমতা রাখেন।
নির্বাচনের দিন স্পিকার প্রার্থীদের নাম পড়ে শোনাবেন। প্রার্থী একজন হলে এবং ওই প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের ভোট পেলে স্পিকার তাঁকেই নির্বাচিত ঘোষণা করবেন। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোট না পেলে সেখানেই এই নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সমাপ্তি ঘটবে। স্পিকার আবারও পরিষদে নতুন করে একটি প্রক্রিয়া শুরু করবেন।
তবে দুই বা তারও বেশি প্রার্থী থাকলে এবং প্রথমবার ভোটে যদি কোনো প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পান, তবে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দুজনকে নিয়ে আবারও ভোট হবে। যদি দুই প্রার্থীর ভোট সমান হয়, তাহলে কোনো একজন সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়া পর্যন্ত তাঁদের মধ্য থেকে একজনকে নির্বাচিত করার জন্য ভোট হতে থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর স্পিকার ভোটের ফল প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠাবেন। এরপর সচিব নির্বাচিত ওই প্রধানমন্ত্রীর নাম জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে। পাকিস্তানের সংবিধানের ৯৪ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নতুন উত্তরসূরির শপথের আগপর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানাবেন প্রেসিডেন্ট।