পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে বিশ্বজুড়েই। বিশ্বে পেঁয়াজ উৎপাদনের দিক থেকে শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকা তৈরি করেছে ওয়ার্ল্ড পপুলেশন। চলতি বছর প্রকাশিত এই তালিকায় নাম আছে-ভারত, চীন, মিসর, যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ, তুরস্ক, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, সুদান ও রাশিয়া।
ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউর হিসাব অনুসারে, বিশ্বে বছরে প্রায় ১০ হাজার ৫০০ কোটি পাউন্ড পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। একজন ব্যক্তি বছরে গড়ে প্রায় ১৪ পাউন্ড পেঁয়াজ খেয়ে থাকেন। বিশ্বে যত ধরনের পেঁয়াজ চাষ হয় তার ৭৫ ভাগই হলদেটে অথবা বাদামি পেঁয়াজ। এ ছাড়া লাল ও সাদা রঙের পেঁয়াজও চাষ হয়।
ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ এবং ওয়ার্ল্ড স্ট্যাটিসটিকার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিশ্বে পেঁয়াজ উৎপাদনকারী শীর্ষ দেশগুলোর তথ্য প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
বিশ্বে পেঁয়াজ উৎপাদনের দিক থেকে ভারতের অবস্থান শীর্ষে। দেশটিতে বছরে ২ কোটি ৬৭ লাখ ৩৮ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। ভারতে সারা বছরই পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। পেঁয়াজ রপ্তানির বাজারেও ভারত একটি উল্লেখযোগ্য নাম। ২০২৩ সালে প্রায় ২৫ লাখ টন পেঁয়াজ রপ্তানি করেছে দেশটি। ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়।
চীন পেঁয়াজ উৎপাদনের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। দেশটি বছরে ২ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন বা প্রায় ২ কোটি টন পেঁয়াজ উৎপাদন করে। চীনে শুধু পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্যই ৯২ লাখ একর জায়গা বরাদ্দ আছে। চীনের পেঁয়াজ চাষিরা অনবরত নতুন নতুন চাষাবাদ পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুফলও পাচ্ছেন তারা। এতে দেশটিতে পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ছে। চীনে লাল পেঁয়াজই বেশি উৎপাদন হয়। এ ছাড়া বাদামি ও সাদা পেঁয়াজও উৎপাদিত হচ্ছে সেখানে। চীনে সাধারণত বসন্ত, গ্রীষ্ম ও শরৎকালে পেঁয়াজ হয়। তবে সারা বছরই পেঁয়াজ পাওয়া যায় দেশটিতে।
পেঁয়াজ উৎপাদনের দিক থেকে বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তৃতীয়। যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর ৩৮ লাখ ২১ হাজার মেট্রিক টন পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন করে। যদিও পেঁয়াজ উৎপাদনে শীর্ষ স্থানে থাকা চীন ও ভারতের তুলনায় এই উৎপাদন উল্লেখজনক মাত্রায় কম। আমেরিকানরা বছরে গড়ে প্রায় ১৯ পাউন্ড করে পেঁয়াজ খান।
যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে পেঁয়াজ সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয়। যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত পেঁয়াজের ৩১ শতাংশই এখানে উৎপাদন হয়ে থাকে। পেঁয়াজ রপ্তানির দিক থেকেও যুক্তরাষ্ট্র উল্লেখযোগ্য। দেশটি তাদের মোট উৎপাদনের প্রায় ৩০ শতাংশ রপ্তানি করে থাকে। রপ্তানির বেশির ভাগটাই হয় মেক্সিকো এবং কানাডাতে।
বিশ্বে পেঁয়াজ উৎপাদনের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই মিসরের অবস্থান। মিসরের কৃষকেরা বছরে ৩১ লাখ ৯৯ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন করে। প্রাচীন মিসরীয় সংস্কৃতিতে পেঁয়াজকে অনন্তকালের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দেশটিতে বেশির ভাগ পেঁয়াজ উৎপাদন হয় কায়রোর কাছে নীল ডেল্টার উর্বর ভূমিতে। ওই এলাকার মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। মিসরে মূলত লাল পেঁয়াজ বেশি চাষ হয়।
তুরস্কে বছরে প্রায় ২২ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। উচ্চ গুণসম্পন্ন পেঁয়াজ উৎপাদনের খ্যাতি আছে দেশটির। হাজারো বছর ধরে তুরস্কের জনগণ পেঁয়াজ চাষ করছে। তুরস্কে নানা ধরনের পেঁয়াজ চাষ হয়। তবে সেখানকার সিভরি পেঁয়াজ বেশ জনপ্রিয়। এ পেঁয়াজ আকারে ছোট হলেও এর স্বাদ-গন্ধ চড়া। তুরস্কের জনপ্রিয় খাবারগুলোতে এ পেঁয়াজ বাড়তি স্বাদ ও ঘ্রাণ যুক্ত করে।
পাকিস্তানে মূলত লাল পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। দেশটিতে বছরে উৎপাদন হয় প্রায় ২১ লাখ ২২ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ।
বিশ্বে পেঁয়াজ উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। বাংলাদেশিরা রান্নার গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হিসেবে পেঁয়াজের ব্যবহার করে থাকে। এখানে বছরে ১৯ লাখ ৫৪ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়।
পেঁয়াজ উৎপাদনে শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় নাম রয়েছে সুদানেরও । দেশটিতে প্রতি বছর ১৯ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। সুদানের নাগরিকেরা পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি আচার খেয়ে থাকেন। এ ছাড়া তারা তাজা, শুকনো বা রান্না করা পেঁয়াজ খেয়ে অভ্যস্ত।
ইন্দোনেশিয়ায় বছরে ১৮ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। দেশটিতে মূলত খাদ্য হিসেবে নয়, ওষুধে স্বাদ, গন্ধ (ফ্লেভার) যুক্ত করতে পেঁয়াজ ব্যবহার করা হয়।
কৃষিজ সম্পদের দিক থেকে সমৃদ্ধ একটি দেশ রাশিয়া। দেশটিতে বছরে প্রায় ১৭ লাখ ৩৮ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। পেঁয়াজ উৎপাদনের দিক থেকে তালিকায় দেশটির অবস্থান বিশ্বে দশম। রাশিয়ার অর্থনীতিতে পেঁয়াজ উৎপাদন একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। ইউরোপে শীর্ষ পেঁয়াজ উৎপাদনকারী দেশ রাশিয়া। দেশটি পেঁয়াজ রপ্তানি বাড়ানোর জন্যও কাজ করছে। উর্বর মাটি ও ভালো আবহাওয়ার কারণে দেশটি পেঁয়াজ উৎপাদনের দিক থেকে সাফল্য পাচ্ছে।