অভিমত

বাইডেনকে বিপদে ফেলতে পারেন ক্ষুব্ধ আরব ভোটাররা

২০২০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাত ‘দোদুল্যমান রাজ্যে’ মুসলিম ভোট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বাইডেনের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। গাজায় নির্বিচার হামলায় বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়া সত্ত্বেও ইসরায়েলের প্রতি বাইডেনের নিঃশর্ত সমর্থন মুসলমানদের ক্ষুব্ধ করেছে।

গাজায় শিশুসহ বেসামরিক নাগরিকদের বোমা ফেলে হত্যা করলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইসরায়েলকে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। স্বজনের কোলে বোমায় আহত শিশু। গতকাল গাজায়
ছবি: এএফপি

১৯৪৮ সালের কথা। ফিলিস্তিনের আরব অধ্যুষিত ভূখণ্ড ভাগ করে সেখানে ইউরোপ থেকে আসা ইহুদিদের জন্য নতুন রাষ্ট্র ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। যুক্তরাষ্ট্রও তাদের সঙ্গে একমত। নবগঠিত জাতিসংঘে ব্রিটিশ একগুঁয়েমি ও মার্কিন কূটচালে ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনকে কেটে দুভাগ করার প্রস্তাব পাস হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, সাড়ে ছয় লাখ ইহুদির জন্য ফিলিস্তিনের ৫৬ শতাংশ ভূমি ভাগ করে দেওয়া হবে। বাকি ৪৪ শতাংশ পাবে ১৫ লাখ ফিলিস্তিনি। আবার সেই ভূমির একটা বড় অংশ বসবাস ও কৃষিকাজের অনুপযোগী।

ফিলিস্তিনিরা তো নয়ই, কোনো আরব দেশও এমন প্রস্তাবে সম্মত নয়। কায়রো থেকে বাগদাদ—সর্বত্র ফিলিস্তিন ভাগের পরিকল্পনার প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। বিদ্রোহের আশঙ্কা ট্রান্সজর্ডানে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান তাঁর রাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় এই সিদ্ধান্তে রাজি।

তাঁর হিসাব, এই প্রস্তাব সমর্থন করলে যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদিরা তাঁকে জোর সমর্থন জোগাবে। আবার ইহুদি লবির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ২৬ সিনেটর স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, ফিলিস্তিন দ্বিখণ্ডিত করার পরিকল্পনায় সমর্থন না জানালে যুদ্ধোত্তর ইউরোপের পুনর্গঠনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনায় অর্থ বরাদ্দে তাঁরা বাধা দেবেন। ট্রুম্যান সে চাপের কথাও হিসাবে রাখলেন।

সৌদি আরবের বাদশাহ আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ শেষ চেষ্টা হিসেবে ট্রুম্যানকে জরুরি চিঠি পাঠালেন। তিনি ও রুজভেল্ট যে ফিলিস্তিনে কোনো ইহুদি রাষ্ট্র গঠন না করার ব্যাপারে একমত হয়েছিলেন—সে কথা ট্রুম্যানকে স্মরণ করিয়ে দিলেন। ১৯৪৫ সালের এপ্রিলে রুজভেল্টের আকস্মিক মৃত্যুর মাত্র দুই মাস আগে সুয়েজ খালে এক নৌভ্রমণে তাঁরা এই প্রশ্নে মতবিনিময় করেন।

১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর সেই চিঠিতে সৌদি বাদশাহ লিখলেন, ‘আমাদের দুই দেশের রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষার্থে আপনার কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, পরিস্থিতির আরও অবনতির আগেই আপনি ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করুন। ফিলিস্তিনি ভূমির ওপর জায়নবাদীদের দখলদারি এবং তার প্রতি মার্কিন সমর্থন শুধু আরবদের প্রতি অবন্ধুসুলভ আচরণ নয়, প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের প্রতিশ্রুতিরও পরিপন্থী।’

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অনেক শীর্ষ কর্মকর্তাও আগপিছ বিবেচনা না করে ইসরায়েলকে স্বীকৃতির বিরোধিতা করছিলেন। সবচেয়ে প্রবল বিরোধিতা আসে ট্রুম্যানের চিফ অব স্টাফ জর্জ মার্শালের কাছ থেকে। ফিলিস্তিনে রক্তপাত এড়াতে এই মুহূর্তে কোনো স্বতন্ত্র ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের বদলে বিভক্ত ফিলিস্তিনের প্রশাসনিক দায়িত্ব জাতিসংঘের হাতে ন্যস্ত করার পক্ষে তিনি জোরালো যুক্তি দেখান।

কিন্তু ট্রুম্যানের হিসাব ভিন্ন। কয়েক মাস পরেই নির্বাচন, তাতে জিততে হলে তাঁকে ইহুদি ভোটের কথা ভাবতে হবে। রিপাবলিকান প্রার্থী টমাস ডিউই এরই মধ্যে তীব্র চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত মার্কিন কূটনীতিকেরা হোয়াইট হাউসে জরুরি বৈঠকে বসলেন। তাঁদের অধিকাংশই এই মুহূর্তে স্বীকৃতির বিপক্ষে। তাঁদের মতামত উপেক্ষা করে ট্রুম্যান বলে দিলেন, তিনি নতুন ইহুদি রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে। বললেন, ‘আমার কোনো আরব ভোট নেই, কিন্তু আমার ইহুদি ভোট রয়েছে।’

১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইসরায়েল একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণা করে। তাদের ঘোষণার মাত্র ১১ মিনিটের মাথায় প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেন।

ইতিহাসের এই বয়ান মোটামুটি পরিচিত ও গৃহীত। সম্প্রতি ট্রুম্যান গ্রন্থাগারে রক্ষিত গোপন নথিগুলো সমীক্ষার পর ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা নতুন একটি তথ্য সংযোজন করেছে। সমীক্ষা অনুসারে, ১৯৪৭ সালে পাঠানো এক গোপন বার্তায় বাদশা ইবনে সৌদ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ফিলিস্তিন বিভক্তিকে ঘিরে আরবদের সঙ্গে লড়াই বাধলে তিনি তাতে যোগ দেবেন না। শুধু তা–ই নয়, অন্য আরব দেশকেও তিনি এই লড়াইয়ে যোগ না দিতে উৎসাহ দেবেন। বিনিময়ে তিনি ট্রুম্যানের কাছে সৌদি আরবের নিরাপত্তার মার্কিন নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রে আরব ভোটের জটিল হিসাব

এখন আমরা গল্পটা ১৯৪৮ থেকে ২০২৪ সালে নিয়ে আসি। আগামী বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এতে জো বাইডেন সম্ভবত তাঁর পুরোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখোমুখি হচ্ছেন। এবার নির্বাচনের প্রধান নির্ধারণী বিষয় হবে ইহুদি নয়, আরব ভোট।

১৯৪৮ সালে ট্রুম্যান যুক্তি দেখিয়েছিলেন, তাঁর কোনো আরব ভোটার নেই। ফলে ইসরায়েলকে স্বীকৃতির প্রশ্নে তাঁর সিদ্ধান্তে কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তিনি আশঙ্কা করছেন না। ২০২৪ সালে সেই একই সমীকরণ কাজে দেবে, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। তার কারণ এই নয় যে যুক্তরাষ্ট্রে হঠাৎ আরব ভোটার অনেক বেড়ে গেছে বা ইহুদি ভোট কমে গেছে। মূল কারণ, আমেরিকার নির্বাচনী ব্যবস্থার নিজস্ব চরিত্র।

আমরা জানি, মোট প্রাপ্ত ভোটে নয়, ইলেকটোরাল ভোটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল নির্ধারিত হয়। জিততে হলে দরকার কমপক্ষে ২৭০ ইলেকটোরাল ভোট। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের জন্য পূর্বনির্ধারিত ইলেকটোরাল ভোটসংখ্যা রয়েছে, যা জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। যেমন চলতি জনসংখ্যার ভিত্তিতে নিউইয়র্কের রয়েছে ২৮টি ইলেকটোরাল ভোট। যে প্রার্থী কোনো অঙ্গরাজ্যে সর্বোচ্চ ভোট পাবেন, সেই অঙ্গরাজ্যের সব ইলেকটোরাল ভোট তাঁর বাক্সে যাবে। যিনি ২৭০ ইলেকটোরাল ভোট নিশ্চিত করতে পারবেন, তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।

ফলে এমনও হতে পারে, সারা দেশে সব মিলিয়ে তিনি সর্বোচ্চ ভোট পাননি, কিন্তু প্রয়োজনীয় ইলেকটোরাল ভোট পাওয়ায় তিনিই জয়ী হবেন। যেমন ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রায় ৩০ লাখ ভোট বেশি পেয়েও হিলারি ক্লিনটন তাঁর রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ৩০৪-২২৭ ইলেক্টোরাল ভোটে হেরে গিয়েছিলেন। ২০২০ সালে অবশ্য ট্রাম্পের তুলনায় বাইডেন শুধু ইলেকটোরাল ভোট (৩০৬-২৩২) বেশি পাননি, প্রায় ৭০ লাখ ভোটও বেশি পেয়েছিলেন।

এবারে ২০২৪ সালের ভোটের মানচিত্রের দিকে তাকানো যাক। মার্কিন নির্বাচনব্যবস্থা এখন এমন একপর্যায়ে পৌঁছেছে, আগেভাগেই বলে দেওয়া যায়, কে কোনো অঙ্গরাজ্যে জিতবেন। অধিকাংশ নগরপ্রধান ও জনবহুল রাজ্যে ডেমোক্র্যাট, অধিকাংশ গ্রামীণ ও জনবিরল রাজ্যে রিপাবলিকানরা জয়ী হন। গত কয়েক নির্বাচনের চিত্র এমনটাই। শুধু হাতে গোনা পাঁচ–সাতটি রাজ্যকে ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট’ বা সুইং স্টেট (দোদুল্যমান রাজ্য) ভাবা হয়, যেখানে কে জিতবে, তা আগাম বলা কঠিন। ২০২০ সালের নির্বাচনে এমন ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট’ ছিল সাতটি। এই সাতটি রাজ্যে খুব সামান্য ভোটে এগিয়ে থেকে বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ডোনাল্ড ট্রাম্প যে এখনো পরাজয় মেনে নেননি, তার কারণ ভোটের এই সামান্য ব্যবধান।

২০২৪ সালে এই সাতটি অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট ফল নির্ধারণ করবে বলা ভাবা হচ্ছে। এসব রাজ্য হচ্ছে মিশিগান, অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, উইসকনসিন, পেনসিলভানিয়া, নেভাদা ও নর্থ ক্যারোলাইনা। ২০২০ সালের নির্বাচনে এই সাত রাজ্যে প্রদত্ত ভোটের মাত্র ৩ শতাংশ বা তার চেয়ে কম ব্যবধানে ফল নির্ধারিত হয়। অন্য কথায়, এসব রাজ্যের ৫০ হাজার বা তার চেয়ে কম মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে।

বাইডেনের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ আরবরা

১৯৪৮ সালে কোনো রাজ্যে কত ইহুদি ভোট ছিল আমার জানা নেই। কিন্তু ২০২৪ সালে কোন রাজ্যে কত আরব ও মুসলিম ভোট রয়েছে, তার একটা মোটামুটি হিসাব আমরা পেয়েছি। বাইডেনের জন্য সেটাই হলো উদ্বেগের।

গাজায় চলমান সর্বাত্মক যুদ্ধ এবং ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় ৪ হাজার শিশুসহ ১০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্রের আরব ও মুসলিম ভোটারদের তীব্র বেদনা ও ক্রোধের কারণ হয়ে উঠেছে। এই যুদ্ধে বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলকে কার্যত নিঃশর্ত সমর্থন দিচ্ছে। তারা ইসরায়েলি হামলাকে ন্যায়সংগত আত্মরক্ষা বলেই ক্ষান্ত হয়নি, সে কাজে অর্থ, সৈন্য ও অস্ত্র-বারুদ দিয়েও সমর্থন জোগাচ্ছে।

এই যুদ্ধে ইসরায়েলি অপপ্রচারকে বিনা প্রমাণে সমর্থন করতেও দেখা গেছে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে। যেমন অসত্য হওয়া সত্ত্বেও তিনি বলেছেন, হামাসের হাতে শিশুদের শিরশ্ছেদের ঘটনার প্রমাণ তিনি দেখেছেন। পরে হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়েছে, না, কথাটা সত্য নয়। ইসরায়েলের হাতে বিপুলসংখ্যক বেসামরিক গাজাবাসী নিহত হওয়ার হামাস প্রশাসনের দাবিকে বিশ্বাস করেন না বলেও তিনি জানিয়েছেন। অবশ্য পররাষ্ট্র দপ্তর ও জাতিসংঘ সে তথ্য সঠিক বলে জানিয়েছে।

সাত দোদুল্যমান রাজ্যে মুসলিম ভোট

যে সাতটি দোদুল্যমান রাজ্যের কথা বললাম, তার অন্তত পাঁচটিতে উল্লেখযোগ্য আরব ও মুসলিম ভোটার রয়েছেন। এঁদের ৭০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি ডেমোক্র্যাটদের ভোট দিয়ে থাকেন। এবারে সে অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।

মিশিগানের কথা ধরা যাক। ২০২০ সালে বাইডেন এই রাজ্যে ১ লাখ ৫৪ হাজার ভোটে জিতেছিলেন। এখনে মুসলিম ও আরব ভোট দুই লাখের বেশি। এঁরা জোট বেঁধে ট্রাম্পকে ভোট দিলে বা ভোটদানে বিরত থাকলে রাজ্যের ১৬টি ইলেকটোরাল ভোট ট্রাম্পের বাক্সে যাবে।

জর্জিয়ার অবস্থা আরও জটিল। ২০২০ সালে সেখানে বাইডেন মাত্র ১২ হাজার ভোটে জিতেছিলেন। এই রাজ্যে আরব বা মুসলিম ভোটারের সংখ্যা অন্তত সোয়া লাখ। অথবা অ্যারিজোনার কথা ধরুন। এখানে আরব বা মুসলিম ভোটারের সংখ্যা এক লাখের বেশি। ২০২০ সালে এই রাজ্যে মাত্র ১০ হাজার ৫০০ ভোটে বাইডেন জিতে ১১টি ইলেকটোরাল ভোট বাগিয়ে নিয়েছিলেন। এই তালিকায় উইসকনসিনও আসতে পারে। প্রায় ৭০ হাজার আরব ভোটের কারণে ২১ হাজার ভোটে জয়ী হয়ে ১০টি ইলেকটোরাল ভোট নিজের ঝুলিতে ভরেছিলেন বাইডেন।

মোদ্দা কথা, মার্কিন নির্বাচনী ব্যবস্থার অভিনবত্বের কারণে খুব সামান্য ভোটের ব্যবধানে জিতেও কোনো প্রার্থী যেকোনো অঙ্গরাজ্যের সব ইলেকটোরাল ভোট পেতে পারেন। লড়াই যেখানে সমানে সমান, কোনো এক বা দুজন ভোটার গ্রুপ নির্বাচনী ফলে বড় রকমের প্রভাব ফেলতে পারেন। ভাবা হচ্ছে, ২০২৪ সালের নির্বাচনে ঠিক সেই রকম ভূমিকা রাখতে পারে আরব ও মুসলিম ভোট।

আরব ও মুসলিম আমেরিকানদের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, তাঁরা বাইডেনের ইসরায়েল-তোষণ নীতিতে খুশি নন। চলতি কংগ্রেসের একমাত্র ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিন কংগ্রেস সদস্য মিশিগানের রশিদা তালিব। তিনি খোলামেলাভাবেই বাইডেনকে ফিলিস্তিন জাতিকে হত্যায় ইসরায়েলকে মদদ দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি সমর্থন করুন, অন্যথায় ২০২৪ সালে আমাদের ভোট আপনি পাবেন না। ভিডিওটি লিংক। একই কথা বলেছেন মিনেসোটা থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসের অপর মুসলিম সদস্য ইলহান ওমর।

অনেকেই বলেছেন, ২০২০ সালে আরব ও দক্ষিণ এশীয়দের ভোটে মিশিগান বা জর্জিয়ার মতো অঙ্গরাজ্যে জয় পেয়েছিলেন বাইডেন। আরবদের মধ্যে সেবার তাঁর প্রতি সমর্থন ৬০ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এরাই তাঁর তথাকথিত ‘ব্লু ওয়াল’ বা ডেমোক্রেটিক প্রতিরক্ষা দেয়াল গড়ে তুলেছিলেন। এবার অবস্থা ভিন্ন। সর্বশেষ জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, আরব ও মুসলিমদের মধ্যে বাইডেনের প্রতি সমর্থন ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে।

ফিলিস্তিন–ইসরায়েল সংঘাত বাইডেনের নির্বাচনী প্রচারে মস্ত শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে উঠেছে। গাজা হামলার প্রথম দুই সপ্তাহে তাঁর মুখ থেকে যুদ্ধবিরতির পক্ষে একটি বাক্যও শোনা যায়নি। এখনো শোনা যাচ্ছে না। তবে তিনি কিছুটা নিম্নস্বরে হলেও ‘মানবিক স্বল্প বিরতি’র কথা বলা শুরু করেছেন। তাঁর এ কথায় আরব ও মুসলিমদের মনে আস্থা জেগেছে এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। এ দেশের আরব ও মুসলিম ভোটাররা কি আগামী নভেম্বরে গাজার নিহত শিশুদের কথা মনে করে বাইডেনের বিপক্ষে ভোট দেবেন?