সালমান রুশদি
সালমান রুশদি

এক চোখ হারানোর পরও নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন রুশদি

হামলার সেই ঘটনা এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় সালমান রুশদিকে। একটি চোখ যে নেই, এ বিষয়টা প্রতিদিন তাঁকে বিষণ্ন করে দেয়। এরপরও নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন। কেননা, মস্তিষ্ক তো ঠিক আছে। এতে লেখালেখির কাজটা ঠিকঠাক চালিয়ে যেতে পারছেন তিনি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন অনুভূতি প্রকাশ করেছেন বুকারজয়ী লেখক সালমান রুশদি। ২০২২ সালের ১২ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বক্তৃতার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ছুরিকাঘাতের শিকার হন তিনি। এতে তাঁর ডান চোখ নষ্ট হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় যকৃৎ ও হাত।

ওই হামলার ঘটনাকে উপজীব্য করে নতুন বই লিখেছেন ৭৬ বছর বয়সী রুশদি, নাম নাইফ: মেডিটেশনস আফটার অ্যান অ্যাটেম্পটেড মার্ডার। বইটি প্রকাশিত হচ্ছে আজ ১৬ এপ্রিল। সে উপলক্ষেই বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি।

সাক্ষাৎকারে প্রায় দুই বছর আগের সেই হামলার স্মৃতিচারণা করেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ-আমেরিকান লেখক রুশদি। বলেন, ওই হামলার দুই দিন আগে তিনি একটি দুঃস্বপ্ন দেখেছিলেন। এরপর ওই বক্তৃতা অনুষ্ঠানে যাবেন কি না, তা নিয়ে দোটানায় পড়েন। পরে ভাবেন, বক্তৃতা করতে আয়োজক পক্ষ অর্থ দিয়েছে। শ্রোতারা টিকিট কেটেছেন। তাঁর কথা শুনতে অপেক্ষা করছেন। আর এটা তো স্বপ্নমাত্র। তাই শেষমেশ অনুষ্ঠানে হাজির হন তিনি।

হামলার মুহূর্তের বর্ণনায় সালমান রুশদি বলেন, তিনি বক্তৃতা দেওয়ার জন্য সিঁড়ি দিয়ে মঞ্চে উঠছিলেন। এমন সময় ওই যুবক (লেবানিজ বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক হাদি মাতার) তাঁর ওপর হামলে পড়েন। তাঁর ঘাড়, পেটে, মুখে ছুরিকাঘাত করতে থাকেন। ১৭ সেকেন্ডে ১২ বার ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল। একপর্যায়ে তিনি মঞ্চে লুটিয়ে পড়েন। রুশদি বলেন, ছুরিকাঘাতে তাঁর চোখ বের হয়ে ঝুলে ছিল, যেন ‘আধা সেদ্ধ একটি ডিম’।

হামলার আকস্মিকতা সম্পর্কে এই ঔপন্যাসিক বলেন, ‘আমি তাঁর (হাদি মাতার) সঙ্গে লড়াই করতে পারতাম না। তাঁর কাছ থেকে দৌড়ে পালাতে পারতাম না। হামলার পর মনে হচ্ছিল, মারা যাচ্ছি। ভাগ্যক্রমে, আমি ভুল ছিলাম।’

ওই হামলার সময় যাঁরা সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন, তাঁদের প্রতি নতুন বইটি উৎসর্গ করেছেন রুশদি। শ্রোতা, আয়োজক পক্ষ, চিকিৎসকসহ অনেকেই রয়েছেন এ তালিকায়। বইটিতে হামলা ও হামলা–পরবর্তী সময়ে ঘুরে দাঁড়াতে নিজের লড়াইয়ের অনুপুঙ্খ বিবরণ তুলে ধরেছেন রুশদি।

এক চোখ হারানোর যন্ত্রণা তুলে ধরে রুশদি সাক্ষাৎকারে বলেন, এটি প্রতিদিন তাঁকে বিষণ্ন করে দেয়। সিঁড়িতে চলতে গেলে, সড়ক পার হতে গেলে, এমনকি গেলাসে পানি ঢালতে গেলেও এখন সতর্ক থাকতে হয়।

এত কিছুর পরও রুশদি নিজেকে ভাগ্যবানই মনে করেন। কারণ, হামলায় তাঁর হারানো চোখের অনেকগুলো স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, মস্তিষ্কের কিছু হয়নি। তিনি বলেন, ‘এর মানে হলো, আমি এখনো আগের মতোই সক্ষম।’

রুশদি দুই দশকের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। ১৯৮১ সালে তাঁর দ্বিতীয় বই মিডনাইট’স চিলড্রেন–এর জন্য বুকার পুরস্কার জেতেন তিনি। তবে ১৯৮৮ সালে তাঁর চতুর্থ বই দ্য স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশের পর থেকে হত্যার হুমকি পেয়ে আসছিলেন। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি তাঁর মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেন। তাঁর মাথার দাম হিসেবে ৩ মিলিয়ন (৩০ লাখ) ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।