কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, তাঁর দেশের মাটিতে গত বছর শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা নিহত হওয়ার ঘটনায় ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগটি কানাডা উপেক্ষা করতে পারে না। ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে গতকাল বুধবার ট্রুডো এ কথা বলেছেন। তাঁর দাবি, ‘ভারত বড় ভুল করছে।’
কানাডার মাটিতে ভারতীয় ভিন্নমতাবলম্বীদের লক্ষ্য করে হত্যা, চাঁদাবাজি এবং অন্যান্য সহিংস ঘটনায় ভারত জড়িত বলে কানাডীয় কর্মকর্তাদের অভিযোগের দুদিন পর ট্রুডো এমন কথা বললেন। গত সোমবার কানাডার কর্মকর্তাদের ওই মন্তব্যের পর দুই দেশই শীর্ষ দূত ও কূটনীতিকদের বহিষ্কার করেছে। এতে ভারত ও কানাডার মধ্যে আগে থেকে চলা উত্তেজনার মাত্রা আরও বেড়েছে।
অভিযোগগুলোকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। তাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক সুবিধা হাসিলের উদ্দেশে ট্রুডো কানাডার বিশাল শিখ জনগোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করছেন।
কানাডার রাজনীতিতে বিদেশি হস্তক্ষেপ বিষয়ে সরকারিভাবে একটি তদন্ত শুরুর আগে গতকাল ট্রুডো ভারতের সমালোচনা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, ২০২৩ সালের জুনে কানাডায় শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হারদীপ সিং নিজ্জর হত্যার ঘটনা তদন্তে ভারত সহযোগিতা করছে না।
ট্রুডো মনে করেন, কানাডাকে নিজেদের সার্বভৌমত্ব ও আন্তর্জাতিক আইনের শাসন লঙ্ঘনের যেকোনো ঘটনাকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে।
ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সুরি এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন নিজ্জর। তিনি খালিস্তান আন্দোলনের কঠোর সমর্থক ছিলেন। খালিস্তান আন্দোলনের লক্ষ্য হলো একটি আলাদা শিখ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা। এ জন্য তারা প্রকাশ্যে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে থাকে।
ট্রুডো বলেছেন ওই সময় (নিজ্জর হত্যা) কানাডার গোয়েন্দা সংস্থার কাছে শক্ত কোনো প্রমাণ বা আলামত ছিল না।
ইতিমধ্যে নিজ্জরের মৃত্যুর ঘটনায় চার ভারতীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে পুলিশ।
ট্রুডোর আশা, তিনি বিষয়টি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সামলাতে পারবেন। বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী এই দেশটির (ভারত) সঙ্গে যেন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নষ্ট না হয় সেভাবে এগোতে পারবেন। তবে তদন্তে সহযোগিতা করার ব্যাপারে কানাডার অনুরোধ ভারতীয় কর্মকর্তারা প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
চলতি সপ্তাহে রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ (আরসিএমপি) যে অভিযোগগুলো প্রকাশ করেছে সে বিষয়ে গতকাল আরও বিস্তারিতভাবে বলেছেন ট্রুডো। কানাডায় ‘জননিরাপত্তার জন্য উল্লেখযোগ্য হুমকি’ বিবেচনায় চলমান একাধিক তদন্তের তথ্য প্রকাশ করছে দেশটির পুলিশ বাহিনী। গত সোমবার আরসিএমপি বলেছে, খালিস্তানপন্থী আন্দোলনের সদস্যদের জীবনের জন্য হুমকি তৈরি হওয়ার বেশ কিছু তথ্য তারা হাতে পেয়েছে।
ভারত সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা বলছে, কানাডা সরকার তাদের দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।
গত সপ্তাহান্তে ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার জন্য রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের (আরসিএমপি) সদস্য এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টারা সিঙ্গাপুরে সফর করেছেন। তবে আরসিএমপি বলছে বৈঠকটি ফলপ্রসূ হয়নি।
সোমবার কানাডার কর্মকর্তাদের অভিযোগের পর কানাডার আইনি প্রক্রিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র।
গতকাল বুধবার ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, কানাডায় স্বাধীন তদন্ত হওয়ার ব্যাপারে অটোয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে তারা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কানাডার বিচার ব্যবস্থার প্রতি যুক্তরাজ্যের পূর্ণ আস্থা আছে।
কানাডার আরেক ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রও বলেছে, কানাডীয় কর্তৃপক্ষকে ভারত সহযোগিতা করছে না।