গাজার এক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি বিবিসিকে বলেছেন, হামাসপ্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে যে বাড়িটিতে হত্যা করা হয়েছে, সেটি তাঁরই (বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি)। ১৫ বছর ধরে এই বাড়িতে তিনি বসবাস করে আসছিলেন। গত মে মাসে তিনি বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন।
আশরাফ আবো ত্বহা নামের এই ফিলিস্তিনি বলেন, তাঁর বাড়ি ফিলিস্তিনের দক্ষিণ গাজার রাফা শহরের ইবনে সিনা সড়কে অবস্থিত। সিনওয়ারকে হত্যার ঘটনা নিয়ে ইসরায়েল যে ড্রোনে ধারণ করা ফুটেজ প্রকাশ করেছে, তাতে আংশিকভাবে বিধ্বস্ত একটি ভবন দেখা যায়। এটি দেখেই তিনি তাঁর বাড়ি চিনতে পারেন। তিনি হতবাক হয়ে যান।
হামাসের প্রধান সিনওয়ার গত বুধবার দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হাতে নিহত হন। তাঁকে গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের চালানো প্রাণঘাতী হামলার মূল কারিগর মনে করা হয়।
সিনওয়ারকে হত্যার আগমুহূর্তের একটি ড্রোন ফুটেজ প্রকাশ করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। ফুটেজে সিনওয়ারকে আংশিক বিধ্বস্ত একটি ভবনের ভেতরে বসে থাকতে দেখা যায়।
আশরাফ বিবিসি আরবির ‘গাজা লাইফলাইন’ অনুষ্ঠানকে বলেন, খান ইউনিসে যাওয়ার জন্য তিনি গত ৬ মে তাঁর রাফার বাড়ি ছাড়েন। তখন রাফা থেকে লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ইসরায়েল। পরে তারা রাফায় হামাসের যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।
বসত এলাকা ছাড়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত আশরাফ তাঁর বাড়ির অবস্থা সম্পর্কে কোনো খবর পাননি।
আশরাফ বলেন, তাঁর মেয়ে প্রথমে তাঁকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত সিনওয়ারের শেষ মুহূর্ত ধারণ করা ফুটেজটি দেখায়। মেয়ে বলে, এই ফুটেজে তাঁদের বাড়ি দেখা গেছে।
প্রথমে মেয়ের কথা বিশ্বাস করেননি আশরাফ। পরে তাঁর ভাই তাঁকে নিশ্চিত করেন, বাড়িটি আসলেই আশরাফের।
আশরাফ বলেন, তিনি ভালোভাবে ফুটেজ দেখে হতবাক হয়ে যান। নিজে নিজেই বলেন, আরে, এ তো সত্যিই তাঁর বাড়ি।
তবে বাড়িটিতে কেন সিনওয়ার গিয়েছিলেন, কীভাবে গেলেন, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই বলে জানান আশরাফ। তিনি বলেন, এ ঘটনায় তাঁদের কোনো যোগসূত্র নেই। আর তাঁদের কিছু করারও ছিল না।
আশরাফ তাঁর বাড়ির যে ছবি ও ভিডিও সরবরাহ করেছেন, তা যাচাই করেছে বিবিসি। এই যাচাইয়ে সিনওয়ারকে যে বাড়িতে হত্যা করা হয়, সেটির সঙ্গে তাঁর বাড়ির মিল পাওয়া যায়।
যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ‘বিবিসি ভেরিফাই’ বাড়িটির জানালার খিলান, দরজার বাহ্যিক সজ্জা, তাক ও হাতলওয়ালা চেয়ারের তুলনা করে।
তবে বাড়িটির মালিক যে আশরাফ, তা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি বিবিসি।
আশরাফ বলেন, তিনি তাঁর ভাইবোনদের সহায়তায় বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন। বাড়িটি করতে তাঁর প্রায় দুই লাখ শেকেল খরচ হয়। তিনি যখন বাড়ি ছাড়েন, তখন এটির অবস্থা ভালো ছিল।