ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত

দীর্ঘ মেয়াদে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ঝুঁকিতে গাজা

স্থল অভিযানের জন্য গাজা সীমান্তে বিপুল অস্ত্র ও সৈন্য সমাবেশ শুরু করেছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে শনিবার নিহত হন ফিলিস্তিনি তরুণ আহমদ আওয়াদা। তাঁর জানাজার সময় সতর্ক পাহারায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা। গতকাল রোববার পশ্চিম তীরের জেনিনে
ছবি: এএফপি

ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ফিলিস্তিনের গাজার প্রতিরোধ সংগঠন হামাসের আকস্মিক ও নজিরবিহীন হামলার জবাবে ‘কঠিন প্রতিশোধ’ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে দেশটি। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা উপত্যকাকে ‘জনমানবশূন্য দ্বীপে’ পরিণত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

নেতানিয়াহুর এ হুঁশিয়ারির মধ্যেই সম্ভাব্য স্থল অভিযানের জন্য গাজা সীমান্তে বিপুল অস্ত্রশস্ত্র ও সৈন্য সমাবেশ শুরু করেছে ইসরায়েল। এতে গাজায় দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে গাজার বাসিন্দাদের আবারও এক ভয়ানক মানবিক সংকটের মুখে পড়ার।

গত শনিবার ইসরায়েলে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় হামলা চালান গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। মাত্র ২০ মিনিটে দেশটিতে ৫ হাজারের বেশি রকেট ছোড়ার কথা জানায় হামাস। এ হামলা ঘিরে দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হওয়া লড়াইয়ে ইতিমধ্যে কয়েক শ ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বেশ কয়েকজন ইসরায়েলি সেনাকে বন্দী করেছে হামাস। ৫০ বছর আগে ‘ইয়ম কিপ্পুর’ যুদ্ধের (১৯৭৩ সালে ৬ দিনের আরব–ইসরায়েল যুদ্ধ) পর এমন রক্তক্ষয়ী হামলার মুখে দ্বিতীয়বার পড়েনি ইসরায়েল।

শনিবারের হামলার পরপরই অবরুদ্ধ গাজায় নির্বিচার বিমান হামলা ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া শুরু করে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। গতকাল রোববারও ব্যাপক বিমান হামলা অব্যাহত ছিল। এ ছাড়া ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ঢুকে পড়া হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াই চলছিল দেশটির সেনাদের।

হামাস বলছে, দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের ওপর চলে আসা ইসরায়েলি নৃশংসতা এবং আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট করায় রকেট হামলার পাশাপাশি তারা একযোগে সমুদ্র ও স্থলপথে ওই অভিযান চালায়।

গাজাকে জনমানবশূন্য এক দ্বীপে পরিণত করব। গাজার নাগরিকদের আমি বলছি, তোমাদের এখনই গাজা ছেড়ে যেতে হবে।
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী

হামাসের সামরিক কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফ বলেছেন, পরিণতি ভোগ না করে পার যাওয়া যাবে না, শত্রুদের সেটা উপলব্ধি করার সময় এসেছে। গাজা থেকে শুরু হওয়া এই লড়াই পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমেও ছড়িয়ে পড়বে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন হামাস নেতারা।

গাজা হবে ‘জনমানবশূন্য দ্বীপ’

হামাসের হামলার জবাবে গাজা উপত্যকাকে ‘জনমানবশূন্য দ্বীপে’ পরিণত করার অঙ্গীকার করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তিনি ইতিমধ্যে ‘যুদ্ধাবস্থা’ ঘোষণা করেছেন। সামরিক বাহিনীর রিজার্ভ সদস্যদের তলব করা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দাকে বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বলেছেন নেতানিয়াহু।

টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই কালো দিনটির কঠিন বদলা আমরা নেব। প্রাণ হারানো সব তরুণের প্রতিশোধ আমরা নেব। হামাসের সব অবস্থানে আমরা হামলা চালাব। গাজাকে জনমানবশূন্য এক দ্বীপে পরিণত করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘গাজার নাগরিকদের আমি বলছি, তোমাদের এখনই গাজা ছেড়ে যেতে হবে। আমরা এই উপত্যকার প্রতিটি স্থানকে লক্ষ্যবস্তু করব।’

গাজায় ব্যাপক আকারে স্থল অভিযানের আশঙ্কা

সংঘাতের লাগাম টানতে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন উভয় পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। তবে অনেক বিশ্লেষকই আশঙ্কা করছেন, গাজায় বড় ধরনের স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল।

জেরুজালেম পোস্ট–এর সামরিক বিশ্লেষক ইয়োনাহ জেরেমি বব বলেন, ‘দ্বিতীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আর সেটা হলো গাজায় অভিযান। আমি মনে করি, এটা ২০১৪ সালের তুলনায় বড় ধরনের হবে। ওই সময় ৮০ হাজার রিজার্ভ সেনা মোতায়েন করেছিল ইসরায়েল।’ বব আল-জাজিরাকে বলেন, ‘দু-এক দিনের মধ্যেই ইসরায়েল বিশাল বাহিনী জড়ো করবে। তারা গাজায় হামাসের বাহিনীকে গুঁড়িয়ে দেবে।’