রাফার সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালানোর কথা জানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। পাল্টা জবাব দিচ্ছে হামাস।
ফিলিস্তিনের পূর্ব রাফায় আরও গভীরে ট্যাংকবহর নিয়ে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার তারা রাফার দক্ষিণ সীমান্তের কয়েকটি এলাকায় পৌঁছায়। গাজায় গত কয়েক মাসের ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনের এ শহরে ১০ লাখের বেশি বাস্ত্যুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ইসরায়েলি হামলায় মুখে অনেকেই রাফা ছেড়ে পালাচ্ছেন।
ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক মিত্র ও বিভিন্ন মানবিক সহায়তাকারী সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে ইসরায়েলকে রাফায় অভিযান বন্ধের আহ্বান জানানো হচ্ছে। সতর্ক করে বলা হচ্ছে, এ ধরনের হামলায় সেখানে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।
এদিকে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত (আইসিজে) আগামীকাল বৃহস্পতিবার ও পরদিন শুক্রবার রাফায় হামলা বন্ধে জরুরি ব্যবস্থা নিতে দক্ষিণ আফ্রিকার করা অনুরোধের শুনানি নেবেন। কাতারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাফায় ইসরায়েলের অভিযানের কারণে যুদ্ধবিরতির জন্য মধ্যস্থতার চেষ্টা আটকে গেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে আইসিজেতে মামলা করা হয়েছে। দেশটির পক্ষ থেকে রাফায় হামলা বন্ধে জরুরি ব্যবস্থা চেয়ে নতুন করে যে আবেদন করা হয়েছে, তা আগের মামলার অংশ। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে অবশ্য একে ভিত্তিহীন বলা হচ্ছে। জাতিসংঘের আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শুক্রবার ইসরায়েলের পক্ষ থেকে মামলায় তাদের বিষয় উপস্থাপন করা হবে। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের মিত্ররা সমর্থন না করলেও রাফায় হামলা থেকে তারা পিছিয়ে আসবে না। কারণ, তারা মনে করে, সেখানে হামাস সদস্যরা অবস্থান করছেন।
রাফার একজন বাসিন্দা বলেছেন, গতকাল ইসরায়েলি ট্যাংকবহর সালাউদ্দিন সড়কের পশ্চিম দিক থেকে সামনে ব্রাজেইল ও জেনেইনার দিকে এগিয়েছে। সেখানে হামলা চালাচ্ছে তারা। হামাসের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে আল-সালাম এলাকায় হামলা করেছে। এতে ইসরায়েলি সেনারা হতাহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি সেনারা বলছেন, তাঁরা রাফা সীমান্তে কয়েকটি সন্ত্রাসী বাহিনীর মুখোমুখি হয়েছেন এবং তাদের নিশ্চিহ্ন করেছে। শহরের পূর্ব দিকে একটি সশস্ত্র বাহিনীর আশ্রয়স্থল তারা ধ্বংস করেছে। এক সপ্তাহ আগে ইসরায়েলি বাহিনী পূর্ব রাফা থেকে লোকজনকে আল-মাওয়াসি এলাকায় সরে যেতে বলে। জাতিসংঘের সাহায্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে রাফা থেকে সাড়ে চার লাখ লোক পালিয়ে গেছেন।
এদিকে উত্তর গাজায় ব্যাপক হামলা করছে ইসরায়েলি বাহিনী। এক মাস আগে এসব এলাকাকে হামাসমুক্ত বলে ঘোষণা দিয়েছিল তারা। আবার সেখানে নতুন করে হামলা শুরু করায় ইসরায়েলি বাহিনীর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার বিষয়ে অভিযোগ উঠলেও যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে ইসরায়লেকে সমর্থন করে আসছে। গত শনিবার মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে ফিলিস্তিনি হত্যাকে গণহত্যা হিসেবে দেখে না। যুক্তরাষ্ট্র দেখতে চায়, হামাস পরাজিত হয়েছে। এ লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে ফিলিস্তিনিরা নরকের মতো পরিস্থিতিতে রয়েছেন।
বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিল সুইজারল্যান্ড
গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়েও এক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ করছিলেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল দেশটির পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়েছে।