গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত একটি এলাকা, ৪ ডিসেম্বর
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত একটি এলাকা, ৪ ডিসেম্বর

গাজায় জাতিগত নিধন চালাচ্ছে ইসরায়েল

ফিলিস্তিনের গাজার বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে ইসরায়েল জাতিগত নিধন (জেনোসাইড) চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সংস্থাটির একটি প্রতিবেদনে এমন অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইসরায়েল সরকার।

যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক সংস্থা অ্যামনেস্টি বলেছে, গাজায় মাসের পর মাস ধরে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা এবং ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বক্তব্য বিশ্লেষণ করে উপত্যকাটিতে জাতিগত হত্যা চলছে—এমন উপসংহারে পৌঁছেছে তারা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল জার্মানির নাৎসি বাহিনী। পরে ১৯৪৮ সালে জাতিগত হত্যাকাণ্ড সনদ (জেনোসাইড কনভেনশন) বাস্তবায়ন করা হয়। ওই সনদ অনুযায়ী, ‘কোনো জাতি, জাতিগত গোষ্ঠী, বর্ণগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে নির্মূল করার লক্ষ্যে চালানো কর্মকাণ্ডকে’ জাতিগত হত্যাকাণ্ড বলে সংজ্ঞায়িত করা যাবে।

এমন এক সময় অ্যামনেস্টি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করল, যখন দুই সপ্তাহ আগেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও দেশটির সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে এ পরোয়ানা জারি করা হয়।

নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন সংস্থার মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড। প্রতিবেদনে বলা হয়, জেনোসাইড কনভেনশনে নিষিদ্ধ পাঁচটি কর্মকাণ্ডের অন্তত তিনটি সংঘটিত করেছে ইসরায়েল। এর মধ্যে রয়েছে হত্যাকাণ্ড, মানুষের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিসাধন এবং সুরক্ষিত গোষ্ঠীকে ধ্বংসের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের জীবনমানের ক্ষয়ক্ষতি সংঘটিত করা।

জাতিগত হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত হতে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের শতাধিক বিবৃতিও পর্যালোচনা করে দেখেছে অ্যামনেস্টি। অ্যাগনেস ক্যালামার্ড সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছয় মাস ধরে চালানো নিবিড় গবেষণার পর (গাজায় জাতি হত্যা চালানোর বিষয়ে) আমাদের মনে আর কোনো সন্দেহ নেই।’

অ্যাগনেস ক্যালামার্ড আরও বলেন, গাজায় যে জাতিগত হত্যা চালানো হচ্ছে, তা প্রমাণ করার লক্ষ্য নিয়ে প্রথমে কাজ শুরু করেনি অ্যামনেস্টি। তবে বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ ও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিবৃতি পর্যালোচনার পর তাঁরা এই উপসংহারেই পৌঁছেছেন যে গাজায় জাতিগত হত্যা চালানোর উদ্দেশ্য নিয়ে অভিযান শুরু করেছিল ইসরায়েল।

গণহত্যার এ অভিযোগ তদন্ত করে দেখতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কৌঁসুলির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি। এক বিবৃতিতে আদালতটির কৌঁসুলির কার্যালয় জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে চালানো যেসব অপরাধের অভিযোগ পাওয়া গেছে, তা তদন্ত করে দেখছে তারা। এর বেশি কিছু ওই বিবৃতিতে জানানো হয়নি।

তবে গাজায় জাতিগত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ অস্বীকার করে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওরেন মার্মরস্টেইন বলেছেন, অ্যামনেস্টির এই প্রতিবেদন পুরোপুরি মিথ্যা। তাঁরা আন্তর্জাতিক আইনকে পুরোপুরি সম্মান করেন। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাস যে হামলা চালিয়েছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের রক্ষার অধিকার তাঁদের রয়েছে।

ইসরায়েলে হামাসের ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। সেদিন থেকেই গাজায় চালানো ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৪৪ হাজার ৫০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। উপত্যকাটির ২৩ লাখ বাসিন্দার বেশির ভাগই এখন বাস্তুচ্যুত। খাবার ও পানির তীব্র সংকটে ভুগছেন তাঁরা।