ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু

নেতানিয়াহুর ৪ শর্তে চ্যালেঞ্জের মুখে গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা

ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে বন্দিবিনিময় নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার কাতারের রাজধানী দোহায় আরেক দফা আলোচনা শুরু হয়েছে। যদিও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দেওয়া চারটি গুরুত্বপূর্ণ শর্তের কারণে এ আলোচনা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

এসব শর্ত আলোচনাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। শর্তগুলোকে ইসরায়েল নিজেদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করছে। কিন্তু হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন এসব শর্তের বিরোধিতা করছে।

কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গতকাল দোহায় শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতির আলোচনায় উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন। আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের গোয়েন্দাপ্রধানেরা রয়েছেন। ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ডেভিড বার্নিয়ার নেতৃত্বে দেশটির একটি প্রতিনিধিদল এ আলোচনায় অংশ নিয়েছে। যুদ্ধবিরতির এ আলোচনা আজ শুক্রবারও চলবে বলে জানিয়েছে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

অবশ্য গত বুধবার হামাস বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দেওয়া প্রস্তাব বাস্তবায়নে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি পেলে তারা যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় আলোচনায় যোগ দেবে।

নেতানিয়াহুর ৪ শর্ত

বন্দিবিনিময় চুক্তির অংশ হিসেবে হামাস গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করা, ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার এবং বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের নিজ বাড়িঘরে ফেরার ওপর জোর দিচ্ছে। কিন্তু সম্প্রতি নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে দেওয়া বিবৃতি অনুযায়ী, চুক্তি চূড়ান্ত করতে হলে চারটি প্রধান বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে।

প্রথমত, উত্তর ও দক্ষিণ গাজাকে ভাগ করে গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি বাহিনী ‘নেতজারিম করিডর’ তৈরি করেছে। মধ্য গাজা থেকে উত্তর গাজায় সশস্ত্র ফিলিস্তিনিদের এই করিডর অতিক্রম ঠেকানোর প্রক্রিয়ার ওপর জোর দিচ্ছে নেতানিয়াহুর দপ্তর।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইসরায়েলি আলোচকেরা দেশটির সংবাদমাধ্যমকে বলে আসছেন, ফিলিস্তিনিদের তল্লাশি করার প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন নিয়ে দেওয়া শর্তের কারণে চুক্তিতে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়েছে।

নেতানিয়াহুর দ্বিতীয় শর্ত হলো, মিসর সীমান্তবর্তী ফিলাডেলফিয়া করিডর এবং মিসর ও গাজার মধ্যকার রাফা ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাতে রাখা। গত মে মাস থেকে এই করিডর ও ক্রসিং নিয়ন্ত্রণ করছে ইসরায়েল।

তৃতীয় শর্ত হলো, গাজায় এখনো কতজন ইসরায়েলি বন্দী জীবিত আছেন, হামাস যেন সে তথ্য দেয়; যাঁদের বিনিময় ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হবে।

ইসরায়েলের কারাগারগুলোতে কমপক্ষে সাড়ে ৯ হাজার ফিলিস্তিনি রয়েছেন। অন্যদিকে হামাসের দাবি, গাজায় ১১৫ ইসরায়েলি বন্দী রয়েছেন, যাঁদের ৭০ জনের মতো ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন।

প্রস্তাবিত চুক্তির অংশ হিসেবে ‘জীবিত ও মৃত’ ইসরায়েলিদের একটি অংশকে মুক্তি দেওয়ার কথা। কিন্তু নেতানিয়াহু অধিকাংশ জীবিত বন্দীর মুক্তির বিষয়ে জোর দিচ্ছেন। এ জন্য তিনি আগে থেকেই তাঁদের নামের তালিকা চান।

চতুর্থ শর্ত হলো, হামাস মুক্ত করতে চায়, এমন যেকোনো বন্দীর মুক্তির বিষয়টি নাকচ করে দেওয়ার অধিকার চায় ইসরায়েল। একই সঙ্গে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দীদের তৃতীয় কোনো দেশে পাঠাতে চায় দেশটি। হামাস এই শর্ত প্রত্যাখ্যান করেছে।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে আকস্মিক হামলা চালায় হামাস। ওই দিন থেকেই গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। প্রায় ১০ মাস ধরে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় ৪০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। এ ছাড়া আহত হয়েছেন প্রায় ৯২ হাজার ফিলিস্তিনি।