ফিলিস্তিনের গাজা নগরীর শিল্পাঞ্চল মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। স্থল অভিযান শেষে ইসরায়েলি বাহিনী ওই এলাকা থেকে সরে গেলে, সেখানকার অলিগলি এবং বিধ্বস্ত ভবনের নিচে একের পর এক লাশ পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে গাজা নগরীর শুজাইয়া এবং তাল আল-হাওয়া এলাকায় রাস্তাঘাট ও বিধ্বস্ত ভবন থেকে ৯০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গাজা প্রশাসনের জরুরি পরিষেবা বিভাগ এ কথা জানিয়েছে।
গাজার শিল্পাঞ্চল থেকে ইসরায়েলি বাহিনীকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর, সেখানকার ‘হৃদয়বিদারক চিত্র’ প্রকাশ্যে আসছে বলে জরুরি পরিষেবা বিভাগ জানায়। গোটা এলাকা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। অলিগলি আর বিধ্বস্ত ভবনে বহু লাশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
একই চিত্র গাজা নগরীর তাল আল-হাওয়া এলাকারও। ইসরায়েলি বাহিনী সরে যাওয়া পর সেখানকার রাস্তাঘাটে গলিত লাশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা গেছে। সেখান থেকে ৩০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব লাশের বেশির ভাগই নারী ও শিশুর বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার উত্তর গাজার অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি পরিষেবা বিভাগের কর্মকর্তা ফারেস আফানেহ বলেন, ‘তাল আল-হাওয়া এলাকা থেকে আংশিক সেনা প্রত্যাহার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখানকার রাস্তায় আমরা ৩০টি মরদেহ পেয়েছি।’
ইসরায়েলি বাহিনীর গোলাবর্ষণের প্রতি ইঙ্গিত করে এই ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বলেন, লাশগুলো উদ্ধারে অ্যাম্বুলেন্স কর্মীরা আরও আগে ঘটনাস্থলে যেতে না পারায়, সেগুলোতে পচন ধরেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেক লাশ পড়ে আছে।
এদিকে এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই সপ্তাহের অভিযান শেষে গাজা নগরীর শহরতলি শুজাইয়া এলাকা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী সরে গেছে। এরপর সেখানকার বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ৬০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গাজার জরুরি পরিষেবা বিভাগ গত বৃহস্পতিবার এ কথা জানিয়েছে।
এমন সময় ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় এমন ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, যখন যুদ্ধবিরতি আলোচনায় ‘অগ্রগতি হয়েছে’ বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। যদিও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রাফা সীমান্ত থেকে সৈন্য প্রত্যাহার এবং স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন।
গাজায় যুদ্ধ–পরবর্তী সরকার নিয়েও মতৈক্য হয়নি। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক শাখার সদস্য হুসাম বাদরান বলেন, যুদ্ধের পরে তাঁদের সংগঠনের পক্ষ থেকে গাজা ও পশ্চিম তীরে নির্দলীয় জাতীয় সরকারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এটি ফিলিস্তিনিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে বাইরের কোনো পক্ষের সঙ্গে তাঁরা আলোচনা করবেন না।
গাজায় ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের মধ্যেই দেশটির জন্য ৫০০ পাউন্ড ওজনের বোমা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বৃহস্পতিবার এক মার্কিন কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।
জনাকীর্ণ এলাকায় ব্যবহার করা হতে পারে—এমন উদ্বেগ থেকে গত মে মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের জন্য ২০০০ পাউন্ড বোমার চালান স্থগিত করেছিল। কারণ, তখন গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফায় স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছিল ইসরায়েল।