ওয়াশিংটনে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একটা বড় অংশই ছিলেন তরুণ। তাঁদের অনেকেই ঐতিহ্যবাহী কেফিয়াহ পরেছিলেন, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৪
ওয়াশিংটনে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একটা বড় অংশই ছিলেন তরুণ। তাঁদের অনেকেই ঐতিহ্যবাহী কেফিয়াহ পরেছিলেন, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৪

যুদ্ধবিরতির দাবিতে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ ৩০ দেশে বিক্ষোভ

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের ৩০ দেশের বিভিন্ন শহরে গতকাল শনিবার হাজার হাজার ফিলিস্তিন-সমর্থক বিক্ষোভ করেছেন। গাজার প্রতি সংহতি জানিয়ে ডাক দেওয়া ‘গ্লোবাল ডে অব অ্যাকশন’-এর (বৈশ্বিক বিক্ষোভের দিন) অংশ হিসেবে রাজপথে নেমে তাঁরা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের দাবি জানান।

গতকাল শনিবার ছিল ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের ৯৯তম দিন। এদিন বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সমর্থনের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ জানান।

ওয়াশিংটনে বিক্ষোভকারীদের অনেকে ফিলিস্তিনি পতাকা ওড়াচ্ছিলেন। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একটা বড় অংশই ছিলেন তরুণ। তাঁদের অনেকেই ঐতিহ্যবাহী কেফিয়াহ পরেছিলেন।

শনিবার ওয়াশিংটনের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া লোকজন স্লোগান দেন—‘এখনই যুদ্ধবিরতি কার্যকর করুন’। তাঁদের হাতে থাকা ব্যানার–ফেস্টুনে লেখা ছিল– ‘ফিলিস্তিনকে মুক্ত করুন’, ‘গাজায় যুদ্ধের অবসান করুন’।

হোয়াইট হাউস থেকে সামান্য দূরে স্থাপিত একটি মঞ্চে কয়েকজন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আবেগঘন বক্তব্য দিয়েছেন। গাজায় কীভাবে তাঁদের বন্ধু ও স্বজনদের হত্যা করা হয়েছে, তার বর্ণনা দিয়েছেন। এই ফিলিস্তিনিদের মূল নিবাস গাজা উপত্যকায়, তবে এখন তাঁরা মিশিগান, টেক্সাসসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে থাকেন।

ইসরায়েলকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা।

একজন ফিলিস্তিনি বক্তা সমবেত মানুষদের উদ্দেশে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন সহজেই এসব উন্মাদ তাণ্ডব থামাতে পারেন।’ ওই বক্তা ব্যাখ্যা করে বলেন, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারকে চাপ দেওয়ার মধ্য দিয়ে এটা সম্ভব হবে।

গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে শনিবার লন্ডনেও বিক্ষোভ হয়েছে। গত ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকে লন্ডনে সপ্তমবারের মতো এ বিক্ষোভ হলো। লন্ডনের বিক্ষোভে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শনিবার সেখানে প্রায় ১ হাজার ৭০০ পুলিশ সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছিল।

২৭ বছর বয়সী স্বাস্থ্যকর্মী মালিহা আহমেদ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনিদের দেখাতে চাই যে আমরা তাদের সঙ্গে আছি। একইসঙ্গে আমরা আমাদের সরকারের বিপক্ষে আওয়াজও তুলতে চাই। ইসরায়েল যা করছে, তা চালিয়ে যেতে দিতে তারা খুব বড় ভূমিকা পালন করছে। যা হচ্ছে, তা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

বিক্ষোভে মালিহার সঙ্গে তাঁর পরিবারের সদস্যরাও অংশ নিয়েছিলেন।

দিপেশ কোথার নামের ৩৭ বছর বয়সী এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘বিশ্ব কিছুই করছে না—এটা এভাবে বসে বসে দেখতে থাকাটা অত্যন্ত হতাশার। এ কারণে আমরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতি আমাদের অসন্তোষ জানাতে এখানে এসেছি।’

গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর এবং ইসরায়েলের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সমর্থনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক কয়েকটি সংগঠনের জোটের পক্ষ থেকে গ্লোবাল ডে অব অ্যাকশনের ডাক দেওয়া হয়।

গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরায়েলে ‘আল–আকসা ফ্লাড’ অভিযান চালায়। এতে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুসারে ১ হাজার ১৪০ জন নিহত হয়েছেন। জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, চলমান হামলায় এ পর্যন্ত ২৩ হাজার ৮০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।