ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একমত হতে পারেননি আরব নেতারা

সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (ডানে) ও ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি
ছবি রয়টার্স

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নিষ্ঠুর হামলার নিন্দা জানিয়েছেন আরব ও মুসলিম দেশগুলোর নেতারা। একই সঙ্গে তাঁরা গাজায় দ্রুত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। তবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি তাঁরা।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত নিয়ে শনিবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে জরুরি সম্মেলনে বসেন আরব লিগ (২২ সদস্যদেশ) ও ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য (৫৭) দেশের নেতারা। গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা ঘিরে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ক্ষোভের মধ্যে এ জরুরি সম্মেলন আহ্বান করা হয়।

গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়। সেদিন থেকেই গাজায় বিরামহীন হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল পর্যন্ত ৩৬ দিনে এ হামলায় গাজায় ১১ হাজার ৮০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

শনিবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে জরুরি সম্মেলনে বসেন আরব লিগ ও ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার সদস্য দেশের নেতারা

ইসরায়েলের দাবি, ‘আত্মরক্ষায়’ গাজায় হামলা চালাচ্ছে তারা। তবে গতকাল সম্মেলন শেষে চূড়ান্ত ঘোষণায় ইসরায়েলের এ দাবি নাকচ করা হয়। সম্মেলনে আহ্বান জানানো হয় গাজায় মানবিক সহায়তার অবাধ সরবরাহের। আরও দাবি জানানো হয় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধে নিরাপত্তা পরিষদে একটি ‘বাধ্যতামূলক’ প্রস্তাব গ্রহণের।

সম্মেলনে ইসরায়েলের কড়া সমালোচনা করে সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেন, ফিলিস্তিনের জনগণের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জন্য দখলদার (ইসরায়েল) কর্তৃপক্ষ দায়ী বলে মনে করেন তিনি।

এ সময় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেন, মুসলিম দেশগুলোর উচিত গাজায় হামলার জন্য ইসরায়েলি বাহিনীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করা।
সম্মেলনে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালানো হচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবে তাঁদের সুরক্ষা দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদ মনে করেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে এ সম্মেলনের কোনো অর্থ থাকবে না। তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে যদি ইসরায়েলকে চাপে ফেলার মতো কিছু না থাকে, তবে আমরা যে পদক্ষেপই নিই বা যে বক্তব্যই দিই, কোনো কাজে আসবে না।’

ইসরায়েলের পক্ষ নেওয়ায় সম্মেলনে পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনা করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তিনি বলেন, ‘এটি লজ্জার বিষয় যে পশ্চিমা দেশগুলো, যারা সব সময় মানবাধিকার ও স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলে, তারা ফিলিস্তিনের চলমান গণহত্যা নিয়ে আজ নিশ্চুপ।’

এদিকে পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন আরব কূটনীতিক জানিয়েছেন, সম্মেলনে আলজেরিয়া, লেবাননসহ কয়েকটি দেশ ইসরায়েলসহ এর মিত্রদের জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধে হুমকি প্রদানের প্রস্তাব দেয়। একই সঙ্গে ইসরায়েলের সঙ্গে আরব লিগের যেসব দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, তা ছিন্ন করার প্রস্তাব দেয় তারা। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইনসহ অন্তত তিনটি দেশ এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে মত দেওয়ায় তা বাতিল করা হয়।

ফিলিস্তিন–ইসরায়েল সংঘাত ঘিরে আরব ও ইসলামি দেশগুলোর সর্বসম্মত ঐকমত্যের অভাবে মোটেও অবাক নন গবেষণা প্রতিষ্ঠান কায়রো সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ রাবহা সাইফ আলম। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের আরব মিত্র এবং ইরানঘনিষ্ঠ দেশগুলোর মধ্যে যে বিভক্তি, তার রাতারাতি সমাধান হবে না।’