ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংঘাত আজ চতুর্থ দিনে গড়াল। গত শনিবার বিমান ও স্থলপথে ইসরায়েলের ওপর হামলা চালায় ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস। এরপর থেকে লড়াই চলছেই। হামাসের অতর্কিত হামলায় হতচকিত ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে। গতকাল তারা গাজা উপত্যকায় অন্তত এক লাখ সৈন্যের সমাবেশ ঘটিয়েছে। দেখে নেওয়া যাক, আজ চতুর্থ দিন পর্যন্ত কী কী ঘটল এই সংঘাতে।
# ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা বাড়িয়েছে এবং হামাস যোদ্ধাদের রক্তক্ষয়ী হামলার প্রতিশোধ হিসেবে গাজায় খাদ্য, জ্বালানি এবং অন্যান্য রসদ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। যুদ্ধে উভয় পক্ষের মৃতের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৬০০–তে এসে দাঁড়িয়েছে।
# হামাসও গতকাল সোমবার হামলা করেছে। বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে হামলা হলে তাদের হাতে আটক ইসরায়েলিদের হত্যা করার হুমকি দিয়েছে হামাস। যুদ্ধের তৃতীয় দিনে ইসরায়েল দক্ষিণের শহরগুলোতে হামাসের আক্রমণে নিহত বেশ কয়েক ব্যক্তির লাশ খুঁজে পায়। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসের ‘সামরিক ও শাসন ক্ষমতা’ ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
# গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি পাল্টা হামলায় ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮০-এর বেশি। কর্তৃপক্ষের মতে, ইসরায়েলি মৃতের সংখ্যা ৯০০–এর বেশি।
# গাজায় ইসরায়েলের বিরামহীন বিমান হামলায় হাজার হাজার মানুষ তাঁদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন। নতুন অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক এবং ড্রোনগুলো গাজা সীমান্তে মোতায়েন করা হয়। গাজার কাছাকাছি এক ডজনেরও বেশি শহর থেকে হাজার হাজার ইসরায়েলিকে সরিয়ে নেওয়া হয়। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী রির্জাভ বাহিনীর তিন লাখ সদস্যকে প্রস্তুত রেখেছে। এ অল্প সময়ের মধ্যে এমন বিশাল সৈন্য সমাবেশ ঘটাল দেশটি।
# ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে যে তারা দক্ষিণে বেশিরভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ পেয়েছে। হামাস এবং গাজার অন্যান্য গোষ্ঠীগুলো বলছে, তারা ইসরায়েলের ভেতর থেকে নিয়ে আসা ১৩০ জনের বেশি সেনা ও বেসামরিক নাগরিককে আটকে রেখেছে।
# মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলায় কমপক্ষে ১১ জন মার্কিন নাগরিক নিহত হয়েছেন। বাইডেন বলেছেন, হোয়াইট হাউস ধারণা করছে, গাজায় হামাসের হাতে বন্দীদের মধ্যে মার্কিন নাগরিকও রয়েছেন।
# বাইডেন সোমবার জার্মানি, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইতালির নেতাদের সঙ্গে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে ইসরায়েলের ওপর হামাসের হামলার নিন্দা করেছেন। দেশগুলো ইসরায়েলের জন্য তাদের ‘অটল ও ঐক্যবদ্ধ সমর্থন’ প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আগামী দিনগুলোতে, আমরা মিত্র হিসেবে এবং ইসরায়েলের সাধারণ বন্ধু হিসেবে ঐক্যবদ্ধ ও সমন্বিত থাকব, যাতে ইসরায়েল আত্মরক্ষা করতে সক্ষম হয়।’ মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও সমন্বয়ের জন্য তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেও এখানে বলা হয়।
# হামাস ইসরায়েলের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন এ গোষ্ঠীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মুসা আবু মারজুক। তিনি আল–জাজিরার সঙ্গে এক টেলিফোন সাক্ষাত্কারে বলেছেন তাঁদের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। তবে হামাস হুমকি দেয়, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা অব্যাহত থাকলে তাদের হাতে জিম্মি ইসরায়েলের বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করা হবে।
# তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেছেন, ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিরা চাইলে তিনি উভয়ের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে প্রস্তুত। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এবং ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগের সঙ্গে ফোনালাপ করার পর এরদোগানের মন্তব্য এল।
# ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশটির রাষ্ট্রপতি আইজ্যাক হারজোগের মন্তব্যের প্রতিধ্বনি করে বলেছেন যে ইসরায়েলে হামলার সময় হামাসের সংঘটিত নৃশংসতা ইসলামিক স্টেট (আইএস) পরিচালিত ভয়াবহতাকে তুলে ধরে।
# যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে অনুরোধ এলে তিনি দেশটিকে কূটনৈতিক, গোয়েন্দা বা নিরাপত্তা সহায়তা দিতে চান। হামলার পর জরুরি সরকারি বৈঠকের পর এ কথা জানান সুনাক।
# জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মধ্যপ্রাচ্যে ‘রক্তপাত, ঘৃণা ও মেরুকরণের দুষ্টচক্র’ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে তিনি গাজাকে ‘সম্পূর্ণ অবরোধ’ করার ইসরায়েলের ঘোষণায় ‘গভীরভাবে ব্যথিত’।
# ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, শনিবার হামাসের হামলার প্রতি ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া ‘মধ্যপ্রাচ্যকে বদলে দেবে’। তিনি বলেছেন, এই হামলার পর তাঁর রাষ্ট্রের পদক্ষেপগুলো কেবল ‘শুরু হচ্ছে’।