এ চুক্তি ধরে দীর্ঘ মেয়াদে যুদ্ধবিরতির আশা কাতারের, যা বললেন বিশ্বনেতারা

৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল
ছবি: এএফপি

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী হামাসের হাতে জিম্মি ব্যক্তিদের অন্তত ৫০ জনকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে ইসরায়েল গাজায় চার দিন হামলা চালাবে না। তবে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতারের আশা, সাময়িক এই চুক্তি দীর্ঘ মেয়াদে যুদ্ধ বন্ধের চুক্তিতে রূপ নেবে।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল–আনসারি আজ বুধবার বলেন, ‘কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্যাপক আলোচনা ও দর-কষাকষির পর অবশেষে এই চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। এখন আমাদের নজর থাকবে বিবদমান দুই পক্ষের চুক্তির শর্ত মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করা।’

আল–আনসারি আরও বলেন, এই চুক্তির মাধ্যমে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলা বন্ধ ও এই চুক্তি ব্যবহার করে দীর্ঘ মেয়াদে কীভাবে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে সমঝোতায় পৌঁছানো যায়, সেটি এখন প্রত্যাশিত। এরপরে কয়েক দশকের এই সংঘাত বন্ধে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।

ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান হামলা বন্ধে মধ্যস্থতা করে আসছিল কাতার। আজ সকালে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চার দিনের যুদ্ধবিরতির চুক্তির প্রথম ঘোষণাটি দেন আল–আনসারি।

এ ঘোষণা দিয়ে আল–আনাসরি এএফপিকে বলেন, ‘দেখুন আমরা কী করতে পারি, যা আর কেউ করতে পারে না। এটাই আমরা যারা নিজেদের সব সামর্থ্য কাজে লাগাতে পারি। এ কাজে আমরা পুরো দেশ নিয়োজিত করেছি। এতে কাজ না হলে পরিস্থিতি আবার সংঘাতের দিকে যাবে।’

যুদ্ধবিরতির চুক্তি নিয়ে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘যুদ্ধবিরতিতে কখন থেকে শুরু হবে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা জানানো হবে। এ চুক্তির মেয়াদ বাড়তেও পারে।’

বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া

ইসরায়েল ও হামাসের যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই চুক্তিতে উপনীত হতে কাজ করার জন্য কাতার ও মিসরের নেতাদের ধন্যবাদ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

জো বাইডেন বলেছেন, এর মাধ্যমে জিম্মি দশায় থাকা ব্যক্তিরা তাঁদের পরিবারের সঙ্গে মিলিত হতে পারবেন। একই সঙ্গে যুদ্ধ কিছুদিন বন্ধ থাকায় গাজায় মানবিক ত্রাণ সহায়তা পাঠানো সম্ভব হবে।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চুক্তির বিষয়টিকে সুসংবাদ হিসেবে বর্ণনা করেছে রাশিয়া। চুক্তি হয়েছে জানার পর প্রতিক্রিয়ায় ক্রেমলিন বলেছে, রাশিয়াসহ বেশির ভাগ দেশ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে আসছিল। কারণ, যুদ্ধবিরতি হলেই কেবল সংঘাতের সমাধান নিয়ে অগ্রগতি হবে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেছেন, ‘সামরিক যুদ্ধবিরতির এ চুক্তিকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। এ চুক্তির মাধ্যমে মানবিক সংকট কিছুটা হলেও কমবে বলে আমরা আশা করছি।’

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তিকে সঠিক পথে যাওয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল-সৌদ। তিনি বলেছেন, এই যুদ্ধবিরতির চুক্তি দীর্ঘ মেয়াদে সংঘাত বন্ধের পথ খুলে দেয় কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল–সিসি যুদ্ধবিরতির এ চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, সব জিম্মির মুক্তি নিয়ে তিনি ও তাঁর দেশ কাজ করছে। চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেছেন, এ চুক্তির ফলে গাজায় আরও ত্রাণসহায়তা পাঠানো সম্ভব হবে বলে আশা করছেন তিনি। জোটের পক্ষ থেকে গাজায় আরও ত্রাণসহায়তা পাঠানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এ চুক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। একই সঙ্গে উভয় পক্ষকে চুক্তির শর্ত পুরোপুরি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।