কাতার সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৯৬ সালে যাত্রা শুরু করে আল-জাজিরা
কাতার সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৯৬ সালে যাত্রা শুরু করে আল-জাজিরা

আল-জাজিরা নিষিদ্ধ না করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান সিপিজের

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে নিষিদ্ধ না করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। সংগঠনটি বলেছে, ‘ক্ষমতাকে জবাবদিহি করতে গণমাধ্যমের কণ্ঠের বৈচিত্র্য থাকা আবশ্যক, বিশেষ করে যুদ্ধের সময়।’

গত বুধবার নতুন জরুরি প্রবিধান অনুমোদন দেয় ইসরায়েল। এতে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমটির ওপর বিধিনিষেধ আরোপের পথ সুগম হয়। আল-জাজিরার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে ইসরায়েল বলছে, এতে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষতি হচ্ছে।

গত সপ্তাহে এই প্রবিধান প্রস্তাব করেন ইসরায়েলের যোগাযোগমন্ত্রী শলোমো কারহি। টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়, যদি কোনো গণমাধ্যমের প্রকাশিত খবরে জাতীয় নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলার ক্ষতি হয় কিংবা সেটা ‘শত্রুর প্রচারণার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে’, তাহলে প্রবিধানটি ওই গণ্যমাধ্যমে সম্প্রচার বন্ধ করতে এবং সম্প্রচারসরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করতে কর্মকর্তাদের অনুমোদন দেবে।

বুধবার আইনটি কার্যকরের বিষয়ে কারহি ও অ্যাটর্নি জেনারেল গালি বাহারাভ-মিয়ারার মধ্যে মতৈক্য হয়। এখন ইসরায়েল চাইলে দেশটিতে আল-জাজিরার কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে পারবে। গাজা ও ইসরায়েল—দুই জায়গা থেকেই সংবাদ সংগ্রহ করা গুটিকয় গণমাধ্যমের একটি আল-জাজিরা।

সিপিজের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা কর্মসূচির সমন্বয়ক শেরিফ মানসুর এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘জাতীয় মনোবলের ক্ষতিসাধনের অস্পষ্ট অভিযোগ ব্যবহার করে চলমান ইসরায়েল-গাজা সংঘর্ষের সংবাদ প্রকাশের ওপর বিধিনিষেধ আরোপে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের হুমকিতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আল-জাজিরাকে নিষিদ্ধ না করতে এবং সাংবাদিকদের তাদের দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে সিপিজে।’

কাতার সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৯৬ সালে যাত্রা শুরু করে আল-জাজিরা। অতীতেও ইসরায়েলের সরকারের বিষোদ্‌গার ও বিধিনিষেধের মুখে পড়েছিল আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমটি।

সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি জন অল্টারম্যান দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ‘যুদ্ধের সময়ে ইসরায়েল এ ধরনের কাজই করে থাকে, সামরিক বিধিনিষেধ আরোপ।’ তিনি বলেন, ‘সংঘাতের সময় এটা ইসরায়েলের একেবারে বাঁধাধরা নিয়ম হয়ে গেছে বলা চলে।’

গাজায় ২০২১ সালের মে মাসে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ধ্বংস হয়ে যায় আল–জাজিরা, এপিসহ আরও কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়

এর আগে ২০২১ সালের ১৫ মে গাজায় ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ধুলায় মিশে যায় আল-জাজিরার কার্যালয়। হামলার শিকার ভবনটিতে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসসহ (এপি) আরও বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কার্যালয় ছিল।

গত বছরের ১১ মে দখল করা পশ্চিম তীরের জেনিনে একটি শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের সময় আল-জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই সময় ৫১ বছর বয়সী আকলেহ পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন এবং তাঁর জ্যাকেট ও হেলমেটে ‘প্রেস’ লেখা ছিল।

প্রথমে আল-জাজিরার সাংবাদিককে হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছিল ইসরায়েল। পরে দেশটির এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাসদস্যের ‘ভুল করে ছোড়া গুলির আঘাতে’ আবু আকলেহ নিহত হয়ে থাকতে পারেন।