সদরই একমাত্র শিয়া নেতা, যিনি একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের বিরোধিতা করে আসছেন। রাজনীতির পাকা খেলোয়াড় সদর এভাবে বিপুলসংখ্যক মানুষের সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়েছেন। গত দুই দশকে মোকতাদা আল-সদর দেশটির বিকল্প নেতা হয়ে উঠেছেন।
‘আমি রাজনীতি থেকে চূড়ান্তভাবে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিচ্ছি’—গত ২৯ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে ইরাকের প্রভাবশালী শিয়া নেতা মোকতাদা আল-সদরের ছোট্ট বক্তব্য। সংস্কারের আহ্বানে সাড়া না দেওয়ায় নিজের সহকর্মী শিয়া রাজনীতিকদের সমালোচনা করে তিনি এ টুইট করেছিলেন। কিন্তু তাঁর এ টুইট ঘিরেই রাজনৈতিক অচলাবস্থায় থাকা ইরাকে খণ্ডপ্রলয় ঘটে যায়।
এ ঘোষণা ছড়িয়ে পড়তেই রাজপথে নেমে আসেন মোকতাদা আল-সদরের সমর্থকেরা। তাঁরা রাজধানী বাগদাদের সুরক্ষিত গ্রিন জোন এলাকায় ঢুকে পড়েন। চড়াও হন সরকারি দপ্তরগুলোর ওপর। তাঁরা প্রেসিডেন্ট দপ্তরে ঢুকে পড়েন। বিক্ষোভকারীদের সেখানে থাকা সুইমিং পুলে লাফিয়ে পড়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়। সদরের নিয়ন্ত্রিত মিলিশিয়ারা সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রতিদ্বন্দ্বী শিয়া মিলিশিয়াগুলোর সঙ্গে সশস্ত্র সংঘাতে জড়ায়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩০ জনের বেশি নিহত হন। আহত হন প্রায় এক হাজার মানুষ।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারি করা হয়। পরদিন দুপুরের কিছুক্ষণ পর এক সংবাদ সম্মেলনে সমর্থকদের বিক্ষোভ থামানোর এবং গ্রিন জোন থেকে সরে আসার আহ্বান জানান মোকতাদা আল-সদর। সমর্থকেরা তাৎক্ষণিক তাঁর আহ্বানে সাড়া দেন। সরকারও কারফিউ প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। ২৪ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে সদর একটি বার্তা দিতে চেয়েছিলেন মোকতাদা আল-সদর। আর সেটা হলো ইরাককে বিশৃঙ্খলার অতলে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা তাঁর আছে; আবার চাইলেই তিনি খাদের কিনার থেকে টেনে তুলতে পারেন।
ইরাকের সবচেয়ে প্রভাবশালী শিয়া নেতা গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহ আলী সিস্তানি। কিন্তু ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের পর গত দুই দশকে মোকতাদা আল-সদর দেশটির বিকল্প নেতা হয়ে উঠেছেন। সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচনে তাঁর দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও সর্বোচ্চ আসন পেয়েছে। শেষ পর্যন্ত সরকার গঠন করতে ব্যর্থ হলেও দেশটির ক্ষমতার কেন্দ্র ৪৮ বছর বয়সী এই নেতাকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে।
শিয়াদের পবিত্র শহর হিসেবে পরিচিত ইরাকের নাজাফে জন্মগ্রহণ করেন মোকতাদা আল-সদর। তখন দেশটিতে বাথ পার্টির শাসন চলছিল। প্রেসিডেন্ট ছিলেন আহমেদ হাসান আল-বকর আর ভাইস প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন। সদরের বাবা মোহাম্মদ সাদিক আল-সদর ও শ্বশুর মোহাম্মদ বাকির আল-সদর ছিলেন প্রভাবশালী শিয়া নেতা। বর্তমানে সদরপন্থী ও অন্য রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দলগুলোর প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুনে তাঁদের ছবি দেখা যায়।
স্বৈরশাসক সাদ্দামের সমালোচনা করায় ১৯৯৯ সালে সাদিক আল-সদরকে হত্যা করা হয়। এর আগে ১৯৮০ সালে বাকিরও সাদ্দামের হাতে নিহত হন। তাঁদের শহীদ ও গরিবের দরদি মনে করেন বহু শিয়া। বাগদাদের সদর সিটি মোকতাদা আল-সদরের বাবার নামে করা হয়। একসময় শহরটির নাম সাদ্দাম সিটি ছিল। এ শহরই মোকতাদা আল-সদরের শক্তির কেন্দ্রস্থল। এখান থেকেই তিনি ইরাকজুড়ে শিয়াদের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন।
মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো রান্ডা স্লিম বলেন, ‘মোকতাদা আল-সদরের পারিবারিক উত্তরাধিকার ছাড়া আমি মনে করি না তিনি আজ যেখানে আছেন, সেখানে থাকতে পারতেন।’
সাদ্দামকে উৎখাতে ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক অভিযান শুরু করলে শিয়াদের একটি অংশ মার্কিন বাহিনীকে সহযোগিতা করে। তবে শিয়া হয়েও সে পথে যাননি মোকতাদা আল-সদর। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা শুরু করেন। ২০০৪ সাল থেকে তাঁর মিলিশিয়া বাহিনী মাহদি আর্মি মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। রাস্তার পাশে পুঁতে রাখা বহু বোমা হামলার জন্য তাঁর বাহিনীকে দায়ী করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের আগে তেমন পরিচিত ছিলেন না মোকতাদা আল-সদর। কিন্তু মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তিনি আলোচনায় চলে আসেন। তিনি দখলদারবিরোধী প্রতিরোধ লড়াইয়ের প্রতীকে পরিণত হন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ইরাকের রাজনীতিতে চালকের আসনে চলে আসেন।
সদরের মাহদি আর্মিকে সবচেয়ে বড় হুমকি মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে আগ্রাসনের সময় মধ্যপন্থী শিয়া নেতা আবদুল মজিদ আল-খোয়েইকে নাজাফে আনেন আমেরিকানরা। উদ্দেশ্য ছিল তাঁর মাধ্যমে শিয়াদের সমর্থন আদায়। তিনি ২০০৩ সালে খুন হন। এ হত্যার নেপথ্যে সদরের হাত ছিল বলে সন্দেহ করে যুক্তরাষ্ট্র; যদিও তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। ২০০৪ সালে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে দখলদার মার্কিন বাহিনী জানায়, তারা সদরকে জীবিত অথবা মৃত আটক করবে।
শুধু যুক্তরাষ্ট্রেরই বিরোধিতা নয়, শিয়া হয়েও ইরানবিরোধী রাজনীতি করছেন মোকতাদা আল-সদর। জাতীয়তাবাদী রাজনীতি করা সদর নির্যাতন-নিপীড়নের মুখেও কখনো ইরাক ছেড়ে যাননি; যদিও তাঁর সহকর্মী অনেক রাজনীতিকই ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের পর ইরান ও আমেরিকার নির্বাসিত জীবনযাপন ছেড়ে দেশে ফেরেন। যুক্তরাষ্ট্র ইরাক থেকে পাততাড়ি গোটানোর পর ইরানসমর্থিত শিয়া গোষ্ঠীগুলোই এখন সদরের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী।
ইরানের প্রতি ইরাকি জনগণের অসন্তোষের বিষয়টি সামনে আনেন মোকতাদা আল-সদর। এই শিয়া নেতা বলেন, তিনি কখনো ইরাককে তেহরানের কবজায় যেতে দেবেন না। সদরই একমাত্র শিয়া নেতা, যিনি একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের বিরোধিতা করে আসছেন। তিনি ইরাকে থাকা বাকি আড়াই হাজার মার্কিন সেনাও সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। রাজনীতির পাকা খেলোয়াড় সদর এভাবে বিপুলসংখ্যক মানুষের সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়েছেন, যাঁদের অর্ধেকের বেশিই শিয়া।
মার্কিন আগ্রাসনের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের প্রক্সি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে ইরাক। সাধারণ ইরাকিরা মনে করেন, এ লড়াইয়ে তাঁদের কোনো লাভ নেই। মোকতাদা আল-সদর আর তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রধানমন্ত্রী নুরি আল-মালিকি—দুজনই জাতীয়তাবাদী রাজনীতি করেন। তবে দুজনের মধ্যে পার্থক্য হলো সদর যেখানে ইরানের বিরোধিতা করে আসছেন, সেখানে মালিকি অনেকটাই ইরানের আশীর্বাদপুষ্ট। শিয়াদের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগিতে না গিয়ে সদর কুর্দিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং সুন্নি নেতৃত্বাধীন সভারেইন অ্যালায়েন্সের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় জোট করেন।
অবশ্য এই শিয়া নেতার ইরানবিরোধী রাজনীতি নিয়ে নানা কথা চালু আছে। চতুর রাজনীতিক মোকতাদা আল-সদর মূলত জনগণের মনোভাবের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই ইরানবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। ভেতরে-ভেতরে সদরও অন্যদের মতো তেহরানের ঘনিষ্ঠ। তিনি স্বীকার করেন, সবচেয়ে শক্তিশালী না হলেও ইরাকের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক ইরান। সদর মানুষকে যতটা বোঝাতে চান, ইরানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ততটা খারাপ নয়। সদরের ওপর ইরানের প্রভাব আছে। তেহরানের সঙ্গে সম্পর্ক চুকানোর পরিণতি তিনি ভালো করেই জানেন।
পারিবারিক ও ধর্মীয় কারণে মোকতাদা আল-সদর প্রায়ই ইরানে যাতায়াত করেন। তিনি ২০০৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ইরানে ছিলেন। ধর্মীয় পাণ্ডিত্য অর্জনে এ সময় তিনি ইরানের ধর্মীয় রাজধানী হিসেবে পরিচিত কোমে অবস্থান করেন। ২০১৯ সালে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা আলী খামেনির সঙ্গে তিনি পবিত্র আশুরা পালন করেন। কয়েক মাস পর নভেম্বরে তাঁকে নিজের পুরোনো বিদ্যাপীঠ কোমে দেখা যায়।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইরানের বিপ্লবী গার্ডের প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মোকতাদা আল-সদর। এরপর ইরাকের সরকার গঠনের বিষয়ে সরাসরি খামেনিকে উদ্ধৃত করে সদর এক বিবৃতিতে বলেন, ‘পূর্ব কিংবা পশ্চিম নয়, জাতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার।’ সদর ইরানবিরোধী নন, বরং তিনি প্রধান ব্যক্তি হয়ে উঠতে চান, যাতে যে কেউ ইরাকের সঙ্গে কাজ করতে গেলে সেটা তাঁর মাধ্যমেই হয়।
গত বছরের নির্বাচনে মোকতাদা আল-সদরের দল ৩২৯ আসনের পার্লামেন্টে সর্বাধিক ৭৩টি আসন পায়। আগের নির্বাচনে আসনসংখ্যা ছিল ৫৪। নির্বাচনের প্রায় ১০ মাস হতে চললেও ইরাক কোনো সরকার পায়নি। মার্কিন আগ্রাসনের পর এই প্রথম দীর্ঘ সময় ধরে দেশটিতে কোনো সরকার নেই।
রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব থাকলেও সরকার গঠনে ব্যর্থ হন সদর। গত জুনে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন তাঁর দলের আইনপ্রণেতারা। এ ক্ষেত্রে অন্যদের সরকার গঠনের সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হলেও উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক অচলাবস্থাকে আরও প্রকট করা।
গত ২৯ আগস্ট মোকতাদা আল-সদর বলেন, নিয়ন্ত্রণহীন রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দিচ্ছেন এবং তাঁর সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিচ্ছেন। এ ঘোষণায় যে বার্তা পাওয়ার, সেটা পেয়ে যান তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা। কয়েক সপ্তাহ থেকেই তাঁরা পার্লামেন্ট ভবন দখল করে রেখেছিলেন। সদরের ঘোষণায় মুহূর্তেই তাঁরা রাজপথে নেমে আসেন। সুরক্ষিত গ্রিন জোনে ঢুকে পড়ে সরকারি দপ্তরে হামলা ও ভাঙচুর চালান। বাদ যায়নি প্রেসিডেন্ট ভবনও।
এই প্রথম সদরের সমর্থকেরা এমনটা করেছেন—বিষয়টি তেমন নয়; রাজনীতিতে নিজেদের অংশগ্রহণ বাড়াতে বিদ্যমান ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে ২০১৬ সালেও তাঁরা পার্লামেন্টে হামলা চালিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় নিজেদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদি দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে সমর্থকদের অবস্থান কর্মসূচি তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেন সদর।
সদর আগেও বেশ কয়েকবার রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন; যদিও বরাবরই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয়। রাজনীতি ছাড়ার তাঁর সর্বশেষ ঘোষণার আরও একটি কারণ ছিল। আর সেটি হলো ইরাকে শিয়াধর্মীয় নেতৃত্বের লড়াই।
সদরকে গণমাধ্যমে ধর্মীয় নেতা হিসেবে উল্লেখ করা হলেও বাবা আর শ্বশুরের মতো তাঁর সেই কর্তৃত্ব নেই। তিনি চাইলেই ফতোয়া জারির ক্ষমতা রাখেন না। তাঁর বাবার ঘনিষ্ঠ ছিলেন আয়াতুল্লাহ খাদেম আল-হায়েরি।
সদরের বাবার মৃত্যুর পর তিনিই তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। সদরপন্থীদের ধর্মীয় কর্তৃত্বের উৎস তিনিই। গত ২৯ আগস্ট শারীরিক দুর্বলতার কথা জানিয়ে হায়েরি অবসরের ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে নিজেদের মধ্যে বিভাজন তৈরি না করে সরাসরি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা আলী খামেনির ধর্মীয় নির্দেশনা মেনে চলতে অনুসারীদের প্রতি আহ্বান জানান।
হায়েরির এ ঘোষণা মোকতাদা আল-সদরের মাথায় বাজ পড়ার মতো ছিল। কারণ, তিনি ভালো করেই জানেন, ধর্মীয় কর্তৃত্ব সুসংহত না হলে ইরাকের রাজনীতির নাটাই তাঁর হাতে বেশি দিন থাকবে না। আর সদর পরিবারে সদস্য হিসেবে এত দিন তিনি এ সময়ের জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু হায়েরির ঘোষণায় সদর ও ইরানের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। তাই সমর্থকদের মাঠে নামিয়ে ইরাকের রাজনীতি ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে নিজের প্রভাব জানান দিলেন সদর।
মোকতাদা আল-সদর যদিও রাজনীতিতে নিজেকে ইরানবিরোধী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন, কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক অনুপ্রেরণা মূলত ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরানের প্রতিষ্ঠাতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি। সদরের ইরাকি জাতীয়তাবাদ, পশ্চিমাবিরোধী এবং শিয়া ইসলামের মিশ্রণের কৌশল মূলত খোমেনির রাজনৈতিক ছক থেকেই এসেছে।
রাজনীতির মাঠে কয়েক দশক ধরে হিসাব করে পা ফেলছেন মোকতাদা আল-সদর। তিনি ইরান এবং উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক রেখে চলেছেন। আগের নেতারা যেকোনো এক পক্ষ নিয়ে ইরাকের অস্থিতিশীলতাই কেবল বাড়িয়েছেন।
জনপ্রিয়তা অর্জনে সদর ও তাঁর বাবা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির পথেই হেঁটেছেন। ইরাকের দরিদ্র ও বঞ্চিত শিয়াদের সমর্থন আদায় করেছেন তাঁরা। ইরাকের নিপীড়িতদের পক্ষে সদর পরিবার দাঁড়িয়েছে, খোমেনির ভাষায় যারা ‘মোস্তাজাফিন’ হিসেবে পরিচিত।
অবশ্য ইরাক ও মধ্যপ্রাচ্যের জনগণের মধ্যে ধর্মীয় মতাদর্শের রাজনৈতিক আন্দোলনের চেয়ে বাস্তববাদী সরকারে আগ্রহ বেশি, যারা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে, সরকারি সেবা বাড়াবে এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কার করবে। নিজের রাজনৈতিক কৌশল সাজাতে জনগণের এ মনোভাবকেও আমলে নিয়েছেন সদর। এ জন্য তাঁকে সেক্যুলার ও কমিউনিস্টদের সঙ্গেও জোট করতে দেখা যায়।
মোকতাদা আল-সদরের শ্বশুর বাকির আল-সদর ১৯৬০ সালে দাওয়া পার্টি গঠন করেন। বলা হয়ে থাকে, তাঁর আন্দোলন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ইরানের ইসলামি বিপ্লবে ভূমিকা রাখেন আয়াতুল্লা আলী খামেনি। বাকিরও ইরাকে একই ধরনের বিপ্লবের চেষ্টা করছেন—এমন অভিযোগে তাঁকে হত্যা করেন সাদ্দাম হোসেন। প্রায় ৪০ বছর পর মোকতাদা আল-সদরও সেই বিপ্লবের গুরুত্ব উপলব্ধি করছেন।
ইরাকের সরকার ও রাজনৈতিক কাঠামো হয়তো হুবহু ইরানের ইসলামিক রিপাবলিকের মতো কখনো হবে না। তবে মোকতাদা আল-সদর যদি ইরাকে সংস্কার হওয়া একজন আয়াতুল্লাহ খোমেনি হিসেবে আবির্ভূত হন, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, ফরেন পলিসি, আল-জাজিরা, মিডলইস্ট আই