ইসরায়েলে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে স্বাধীনতাকামী হামাস। গত শনিবার নজিরবিহীন এই হামলায় অংশ নেয় হামাসের এক হাজার যোদ্ধা নিয়ে গঠিত এক বিশেষ বাহিনী। জবাবে পাল্টা হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে দুই পক্ষে রক্তক্ষয়ী সংঘাত শুরু হয়।
হামাসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, এমন একটি সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার ফসল গত শনিবারের ওই হামলা। এ জন্য বিশেষ ওই বাহিনীর যোদ্ধাদের দীর্ঘ সময় ধরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
হামাস নিজেও বিশেষ এই ইউনিটের অভিযান ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার কিছু ভিডিও চিত্র প্রকাশ করেছে। হামাসের সামরিক শাখা এজ-আল-দ্বীন আল-কাশেম ব্রিগেডসও কিছু ভিডিও চিত্র প্রকাশ করেছে। কিছু ভিডিও পাওয়া গেছে প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে।
গত শনিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে রকেট ছুড়তে শুরু করে হামাস। হামাস প্রথমে জানায়, শনিবারের এই ‘অভিযান’-এ তিন হাজার রকেট ছুড়েছে তারা। তবে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলছে, সেদিন হামাস আড়াই হাজার রকেট ছুড়েছিল।
হামাসের এভাবে রকেট ছোড়ার মূল লক্ষ্য ছিল, ইসরায়েলকে অপ্রস্তুত ও বিভ্রান্ত করা। যাতে সেই সুযোগ নিয়ে হামাসের যোদ্ধারা সুরক্ষিত সীমান্ত বেড়া ভেঙে ইসরায়েলে অভিযান চালাতে পারেন।
আকাশপথে বিমান হামলা চালানোর মতো সক্ষমতা নেই হামাসের। তাই এ অভিযানের জন্য একটি বিশেষ ইউনিট গঠন করে। প্যারাগ্লাইডার দিয়ে এই ইউনিটের যোদ্ধারা প্রথমে সীমান্ত পার হন। পদাতিক যোদ্ধাদের মূল অভিযান চালানোর পথ সুগম করে দেওয়ার কাজটি করেন তাঁরা।
ইউনিটটির নাম দেওয়া হয়েছে এয়ারফোর্স ফ্যালকন স্কোয়াড্রন। হামাসের প্রকাশ করা ভিডিওতে দেখা যায়, অভিযানের জন্য এই ইউনিটের যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কিছু প্যারাগ্লাইডারে একজন করে আবার কোনোটিতে দুজন করে যোদ্ধা আছেন। সশস্ত্র অবস্থায় তাঁদের ভূমিতে নামতে দেখা যায়।
মুঠোফোনে ধারণ করা হামলার কিছু ভিডিও চিত্র পাওয়া গেছে। তাতে দেখা যায়, হামাসের এই ইউনিটের যোদ্ধারা ইসরায়েলে উন্মুক্ত স্থানে একটি উৎসবে অংশ নেওয়া শত শত মানুষের ওপর হামলা চালাচ্ছেন। কিছু ভিডিওতে প্যারাগ্লাইডারে করে উড়তে থাকা অবস্থায় দেখা যায় তাঁদের।
এই ইউনিটে ছিলেন হামাসের সবচেয়ে চৌকস ৪০০ যোদ্ধা, যাঁরা এলিট বাহিনীর সদস্য হিসেবে পরিচিত। বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সুরক্ষিত সীমান্ত বেড়া ভেঙে এই ইউনিটের সদস্যরাই প্রথম ইসরায়েলে ঢোকেন। প্রথমে মোটরসাইকেলে করে তাঁদের অনেকে সীমান্ত পার হন। এরপরে বুলডোজার ব্যবহার করে বড় করা হয় বেড়ার ভাঙা অংশটি। এতে চার চাকার গাড়ি নিয়ে পার হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
সূত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সীমান্ত পার হয়ে প্রথমেই ইসরায়েলের প্রথম প্রতিরক্ষাবলয়ে হামলা চালান এই কমান্ডোরা। তাঁরা সেনাছাউনিতে ইসরায়েলের ঘুমন্ত সেনাদের ওপর হামলা চালান। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় সদর দপ্তর ও সামরিক ঘাঁটিগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন।
হামাস এ হামলার কিছু ভিডিও প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, হামাস যোদ্ধারা নিরাপত্তাবেষ্টনী পার হচ্ছেন। তখন চারপাশে কেবল আলো ফুটছে। সূর্যের আলোও ততটা স্পষ্ট নয়। এসব ভিডিও দেখে ধারণা করা যায়, ভোরবেলা মুহুর্মুহু রকেট হামলার সময়ই এসব যোদ্ধা ইসরায়েলে ঢোকেন।
সীমান্তে নজরদারির জন্য এই অভিযানে ড্রোনও ব্যবহার করা হয়েছে। হামাসের প্রকাশ করা এক ভিডিওতে একটি ড্রোন দেখা যায়, যার নাম জওয়ারি। হামাস বলছে, যোদ্ধাদের সীমান্ত পার হওয়ার পথ তৈরি করে দিতে ব্যবহার করা হয় এসব ড্রোন। এসব ড্রোনের মাধ্যমে সীমান্তে নজরদারি চালিয়ে পরে সুবিধামতো সময়ে যোদ্ধাদের পাঠানো হয়।
হামাসের প্রকাশ করা আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, তাদের যোদ্ধারা গাজা থেকে একের পর এক ড্রোন আকাশে ওড়াচ্ছেন।
ইসরায়েলের সেনাদের ওপর নজরদারির দায়িত্বে ছিল হামাসের গোয়েন্দা ইউনিট। ইসরায়েলি সেনাদের অবস্থান, গতিপথ ও চলাফেরার বিষয়টি নজরদারি করতেন এই ইউনিটের সদস্যরা। এ ছাড়া তাঁরা ইসরায়েলের সেনা সদর দপ্তরের তৎপরতা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করতেন। গুপ্তচরবৃত্তি মূল কাজ হওয়ায় এই গোয়েন্দার ইউনিট সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানাতে রাজি হয়নি ওই সূত্র।