ইসরায়েলের হামলা জোরদার, ফিলিস্তিনে নিহতের সংখ্যা বাড়ছে

ইসরায়েলের নির্বিচার বিমান হামলায় ফিলিস্তিনে নিহতের সংখ্যা ২৩২ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছে ১ হাজার ৬০০ ফিলিস্তিনি।

ইসরায়েলি হামলায় একটি বহুতল ভবন ও আশপাশে আগুন ধরে যায়। শনিবার, ফিলিস্তিনের গাজায়

ফিলিস্তিনের বিভিন্ন স্থানে হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। এই হামলায় ফিলিস্তিনে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। ফিলিস্তিন মুক্তি আন্দোলনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস শনিবার সকালে হামাস–নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলে মুহুর্মুহু রকেট হামলা চালায়। পাল্টা বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলও। পাল্টাপাল্টি হামলায় গাজায় ২৩২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহত হয়েছে অন্তত ২০০ ইসরায়েলি। সব মিলে আহত হয়েছে দুই হাজারের বেশি মানুষ।

এদিকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইসরায়েল সরকার দেশজুড়ে ৪৮ ঘণ্টার জরুরি অবস্থা জারি করেছে।

ইসরায়েলে হামলা ছিল অনেকটা অপ্রত্যাশিত। ইসরায়েলের বিভিন্ন এলাকায় মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে ৫ হাজার রকেট ছোড়ে হামাস। এ ছাড়া গাজা থেকে বহু হামাস যোদ্ধা ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে প্রবেশ করেন। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, গাজা–সীমান্তসংলগ্ন ২২টি এলাকায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে ইসরায়েলি সেনাদের লড়াই চলছে।

হামাস ইসরায়েলে এ অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’। দখলদার ইসরায়েলের হাত থেকে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতাই এ অভিযানের লক্ষ্য বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি। গোষ্ঠীটির উপপ্রধান সালেহ আল–আরোউরি বলেছেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য একটাই—আমাদের স্বাধীনতা ও আমাদের পবিত্র স্থাপনাগুলো মুক্ত করা।’

ইসরায়েল সরকার জানিয়েছে, হামাসের হামলায় অন্তত ২০০ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আহত ৭৫০ জনের বেশি। তবে একই সূত্রের বরাতে বিবিসি বলেছে, নিহত ইসরায়েলির সংখ্যা অন্তত ১৫০। হামলা শুরুর পর ইসরায়েলের জনগণের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা যুদ্ধের মধ্যে রয়েছি। আমরাই জিতব।’

ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীরা অনেক ইসরায়েলি নাগরিক ও সেনাকে আটক করেছেন বলে জানিয়েছে ইসরায়েল সরকার। একইভাবে হামাস ছাড়াও ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদ সেনাদের আটকের দাবি করেছে। হামাস নেতা সালেহ আল-আরোউরি দাবি করেন, ইসরায়েলের কারাগারগুলোতে বন্দী সব ফিলিস্তিনিকে মুক্ত করার মতো যথেষ্ট সংখ্যক ইসরায়েলিকে আটক করেছেন তাঁরা।

এমন পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে ৪৮ ঘণ্টার জরুরি অবস্থা জারি করেছে ইসরায়েল। রোববার সেখানকার সব স্কুল ও কিন্ডারগার্টেন বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। নেতানিয়াহুর দল লিকুদ পার্টি বলেছে, ঐক্যের সরকার গঠন করতে বিরোধী দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি।

হামাসের রকেট হামলা ও ইসরায়েল–নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে হামাস যোদ্ধাদের প্রবেশের মধ্যে শনিবার সকাল থেকেই গাজায় দফায় দফায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। হামলায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন গাজার বেসামরিক লোকজন। অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন। এরই মধ্যে গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল।

দক্ষিণ গাজার রাফাহ এলাকার বাসিন্দা এনাস কেশতা বলেন, গাজার অবস্থা এখন মোটেও ভালো নয়। কোনো জায়গাই নিরাপদ নয়। তিনি বলেন, যুগের পর যুগ নিপীড়ন ও হামলার শিকার হতে হতে ফিলিস্তিনিরা এখন বিরক্ত। তারা (ইসরায়েল) মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।

গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ধ্বংস হওয়া ভবনের সামনে ক্রন্দনরত শিশু কোলে এক ব্যক্তি। গতকাল

হামলার পেছনে কী

গত ১৫ বছরে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে চারবার যুদ্ধে জড়িয়েছে ইসরায়েল। সর্বশেষ ২০২১ সালে ১১ দিনব্যাপী যুদ্ধে জড়িয়েছিল ইসরায়েল-হামাস। পশ্চিম তীরে সম্প্রতি ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের দখলদারি ও নিপীড়নের মাত্রা বেড়েছে। প্রায়ই ফিলিস্তিনিদের গুলি করে হত্যা করছেন ইসরায়েলি সেনারা।

মুসলিমদের পবিত্র স্থাপনা আল-আকসা মসজিদ চত্বরে উগ্রবাদী ইহুদিদের অনুপ্রবেশের ঘটনাও সম্প্রতি বেড়েছে। ফিলিস্তিনিরা এ ধরনের অনুপ্রবেশের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে পবিত্র আল-আকসায় মুসল্লিদের ওপর বেশ কয়েকবার হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া বলেছেন, ‘আল-আকসার মর্যাদা রক্ষায় আমরা এ যুদ্ধ শুরু করেছি।’

এমন সময় হামাস ও ইসরায়েল নতুন করে এ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়াল, যখন সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি সৌদি আরব সফর করেছেন ইসরায়েলের দুই মন্ত্রী। হামাসের সাবেক উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজি হামাদ বলেন, যেসব আরব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করছে, এ অভিযান তাদের জন্য এক বার্তা।

পক্ষে–বিপক্ষে প্রতিক্রিয়া

পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের পক্ষে–বিপক্ষে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিভিন্ন দেশ। ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র হামাসের হামলাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়ে এর নিন্দা জানিয়েছে। একই সুরে কথা বলেছে যুক্তরাজ্য, ইউক্রেন, স্পেন, ফ্রান্স, জাপান, ইতালি, গ্রিস, জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি দেশ।

অন্যদিকে হামাসের হামলার প্রশংসা করেছে ইরান। গতকালের হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে কুয়েত ও কাতার। এদিকে ইসরায়েল ও হামাস—দুপক্ষকেই সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, রাশিয়া ও তুরস্ক।