হামাসের সঙ্গে সংঘাত দুই মাসে গড়ালেও ফিলিস্তিনের গাজায় কমেনি ইসরায়েলের নির্মমতা-হামলা। নির্বিচার বোমাবর্ষণ, নিরীহ মানুষকে বাস্তুচ্যুত হওয়া, খাবার ও চিকিৎসার জন্য হাহাকার—সব মিলিয়ে উপত্যকাটির পরিস্থিতিকে ‘কেয়ামতের মতো’ বলেছে জাতিসংঘ। এ অবস্থায় এক বিরল পদক্ষেপ নিয়েছেন বিশ্ব সংস্থার মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এ সংঘাত অবসানে নিরাপত্তা পরিষদকে সক্রিয় হতে গতকাল বুধবার জাতিসংঘ সনদের ৯৯ ধারা প্রয়োগ করেছেন তিনি।
৯৯ ধারা অনুযায়ী, জাতিসংঘের মহাসচিবের বিবেচনায় কোনো বিষয় আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে হলে তিনি বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদের নজরে এনে বৈঠক আহ্বান করতে পারেন। ২০১৭ সালে মহাসচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে কখনো এ ধারা ব্যবহার করেননি গুতেরেস। এমনকি গত ৩৪ বছরে (১৯৮৯ সালের পর) ধারাটি ব্যবহারের প্রয়োজন মনে করেননি জাতিসংঘের কোনো মহাসচিব।
গাজা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি এবং এ নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের পদক্ষেপের ঘাটতির কারণেই তিনি ৯৯ ধারা প্রয়োগ করেছেন বলে জানান গুতেরেস। নিরাপত্তা পরিষদের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে তিনি বলেছেন, তাঁর বিশ্বাস, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বর্তমানে যেসব হুমকি রয়েছে, তা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের বর্তমান পরিস্থিতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যসংখ্যা ১৫। গুতেরেসের ওই চিঠির পর সদস্যদেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত এক্সে (সাবেক টুইটার) জানিয়েছে, তারা পরিষদে একটি নতুন খসড়া প্রস্তাব জমা দিয়েছে। তাতে গাজায় মানবিক কারণে আবারও দ্রুত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে ৯৯ ধারা প্রয়োগে গুতেরেসের পদক্ষেপকে ভালোভাবে নেননি জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাড এরডান। নিরাপত্তা পরিষদের উদ্দেশে লেখা ওই চিঠিকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গুতেরেসের পক্ষপাতমূলক অবস্থানের প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি।
জাতিসংঘ মহাসচিব যখন ৯৯ ধারা প্রয়োগ করলেন, তখন ইসরায়েলের জন্য আরেক দুঃসংবাদ এল যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ইসরায়েল ও ইউক্রেনের জন্য নতুন করে নিরাপত্তা সহায়তা তহবিল অনুমোদনের একটি প্রস্তাব আটকে দিয়েছেন মার্কিন সিনেট সদস্যরা। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ-সংক্রান্ত বিলে অনুমোদন দিতে রিপাবলিকান সদস্যদের প্রতি জোর আহ্বান জানিয়েছিলেন।
এদিকে গত ২৪ থেকে ৩০ নভেম্বর—সাত দিন ছাড়া গাজায় দুই মাস ধরে নির্বিচার বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। আজ বৃহস্পতিবারও ছিল না এর ব্যতিক্রম। এদিন দক্ষিণ গাজার রাফাহ ও খান ইউনিস এবং উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরসহ উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলার পাশাপাশি স্থল অভিযান চালিয়েছেন ইসরায়েলি সেনারা। ইসরায়েলের বাহিনী দাবি করেছে, গতকাল তারা বেশ কয়েকজন হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে।
আজ গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর সংঘাত শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ১৭ হাজার ১৭৭ জন মারা গেছেন। অপরদিকে সংঘাতের শুরুতে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। আর গাজায় হামাসের সঙ্গে সংঘাতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ইসরায়েলের ৮৭ সেনা।
গাজা উপত্যকা ছাড়াও পশ্চিম তীরে সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। চলমান সংঘাত শুরুর পর থেকে সেখানে অন্তত ২৬৬ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে তারা। এ ছাড়া পূর্ব জেরুজালেমে অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনের অংশ হিসেবে নতুন করে ১ হাজার ৭০০টির বেশি বাড়ি নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল সরকার। পূর্ব জেরুজালেমকে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে মনে করেন ফিলিস্তিনিরা।