ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামলা চালাতে ইসরায়েলকে ১০০টি শক্তিশালী বাংকারবিধ্বংসী বোমা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি আরও বিভিন্ন ধরনের গোলাবারুদ ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক কর্মকর্তার বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
ওই বোমার নাম ‘বিএলইউ–১০৯’। বোমাটির বিস্ফোরকবোঝাই সম্মুখভাগের ওজন ৯০০ কেজির বেশি। শক্ত কোনো অবকাঠামোয় আঘাত হেনে সেটির ভেতরে প্রবেশের পর বিস্ফোরিত হয় এই বোমা। এর আগে আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন যুদ্ধে বিএলইউ-১০৯ ব্যবহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইউক্রেন যুদ্ধে কিয়েভকেও নানা সমরাস্ত্র দিয়ে আসছে মার্কিন সরকার। সেই অস্ত্র সম্পর্কে নিয়মিত হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে হোয়াইট হাউস। তবে ইসরায়েলের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা গেছে। গাজায় হামলা চালাতে ইসরায়েলকে কী ধরনের অস্ত্র দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে বেশির ভাগ সময় নিশ্চুপ থেকেছে ওয়াশিংটন।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৭ অক্টোবর গাজা সংঘাত শুরুর পর থেকে ইসরায়েলকে ১৫ হাজার বোমা ও ১৫৫ মিলিমিটারের ৫৭ হাজার গোলা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া ইসরায়েলকে ৫ হাজারের বেশি এমকে–৮২ বোমা, ৮ হাজার ৪০০টির বেশি এমকে–৮৪ বোমা, প্রায় ১ হাজার জিবিইউ–৩৯ বোমা ও প্রায় ৩ হাজার জেডিএএম বোমা দেওয়া হয়েছে।
সামরিক অভিযান চালাতে প্রতিবছরই ইসরায়েলকে শত শত কোটি ডলারের আর্থিক বরাদ্দ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে পাঠানো সমরাস্ত্রগুলো সেই বরাদ্দের বাইরে আলাদাভাবে দেওয়া হচ্ছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, গাজায় সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী কিছু হামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রের বোমাগুলো ব্যবহার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর মধ্যে জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরে চালানো একটি হামলাও রয়েছে। ওই হামলায় ১০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছিলেন।
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরায়েলে হামলায় চালায়। এতে দেশটিতে ১ হাজার ২০০ জনের মৃত্যু হয়। সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার বোমাবর্ষণ শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে উপত্যকাটিতে ১৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এরই মধ্যে গত শুক্রবার থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু করে। কয়েক দফায় টানা এক সপ্তাহ যুদ্ধবিরতির পর আজ শনিবার থেকে আবার গাজায় বোমা হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল।
আল–জাজিরার হেইদি ঝউ ক্যাস্ত্রো জানিয়েছেন, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন প্রকাশের পর ইসরায়েলের হাতে বিএলইউ-১০৯–এর মতো ভারী বোমা তুলে দেওয়া নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে প্রশ্ন উঠেছে।
হেইদি ঝউ ক্যাস্ত্রো বলেন, ‘এই শক্তিশালী বোমাগুলো এর আগে আফগানিস্তান, ইরাক ও সিরিয়ায় ব্যবহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে সেগুলো দিয়ে উন্মুক্ত এলাকায় হামলা চালানো হয়েছিল। এখন ইসরায়েল বোমাগুলো দিয়ে গাজায় খুবই ভিন্ন এক পরিবেশে হামলা চালাচ্ছে। হামলা চালানো এলাকাগুলোয় জনসংখ্যার ঘনত্ব খুবই বেশি।’
গাজায় ভূপৃষ্ঠের নিচে হামাসের ব্যবহৃত অনেক সুড়ঙ্গ রয়েছে। এই সুড়ঙ্গগুলোতে হামলা চালাতেই মূলত বাংকারবিধ্বংসী বোমা ইসরায়েলকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে সুড়ঙ্গগুলো জনাকীর্ণ এলাকাগুলোর নিচে অবস্থিত হওয়ায় বাংকারবিধ্বংসী বোমা দিয়ে সেখানে হামলা বেসামরিক লোকজনের প্রাণ নিতে পারে।
হেইদি ঝউ ক্যাস্ত্রো বলেন, মার্কিন কংগ্রেসের অনেকেই এখন প্রশ্ন তুলছেন, ইসরায়েলকে এই বাংকার বোমা দেওয়া আসলেই যৌক্তিক কৌশল কি না। একই সঙ্গে তাঁরা ইসরায়েলকে এ ধরনের অস্ত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।