মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত বুধবার ইসরায়েল সফরে গিয়ে তাদের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন জানালেন। শুধু এখন নয়, বরাবরের ইতিহাসই এমন। নিরীহ ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো কাজেও যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়ার পেছনে কাজ করে প্রভাবশালী ইসরায়েলি লবি, তাদের অর্থ এবং মার্কিন রাজনীতিতে তাদের প্রভাব।
হামাস ৭ অক্টোবর সকালে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে নজিরবিহীন এক হামলা চালায়। জবাবে ওই দিনই ফিলিস্তিনের গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তখন থেকে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী টানা ১৩ দিন ধরে নির্বিচার বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। গাজায় যতই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হোক, যতই বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হোক, যুক্তরাষ্ট্র দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ইসরায়েলকে সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছে। একই কথা তারা ঘুরেফিরে বলছে, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। এবার তারা শুধু সেখানেই থেমে থাকেনি। মধ্যপ্রাচ্যের বিশ্বস্ত মিত্রের জন্য জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রের চালান পাঠিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানাতে সেই দেশে ছুটে গেছেন। ব্লিঙ্কেন ইসরায়েলের স্বার্থরক্ষায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন।
দুই মন্ত্রীকে ইসরায়েলে পাঠিয়েও যেন স্বস্তি পাচ্ছিলেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গত বুধবার নিজেই ইসরায়েল সফরে গেছেন। নজিরবিহীন ব্যাপার। এর আগে অঞ্চলটির কোনো যুদ্ধ ও সংঘাতে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইসরায়েল সফরে যাননি। আগের দিন মঙ্গলবার রাতে গাজার আল–আহলি আল–আরবি হাসপাতালে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালানো হয়, যাতে অন্তত ৪৭১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন। ফিলিস্তিন এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে। কিন্তু তারা তৃতীয় পক্ষ অর্থাৎ ইসলামিক জিহাদের ওপর এই হামলার দায় চাপিয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেনও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেছেন, এই হামলায় তৃতীয় কোনো পক্ষ জড়িত। একই সঙ্গে যেকোনো পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
ইসরায়েলকে এভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ঢালাও সমর্থন ফিলিস্তিনিদের ওপর নিপীড়ন চালানোর সুযোগ করে দিয়েছে। সামরিক শক্তি ও সম্পদে ফিলিস্তিন তাদের ধারেকাছেও নেই। গত ১২ দিনের নির্বিচার ইসরায়েলি হামলায় ইতিমধ্যে প্রায় ৩ হাজার ৭০০–এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় এক–তৃতীয়াংশ নারী ও শিশু। ইসরায়েলের এতটা বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের পরও তাহলে কেন ইসরায়েলকে অটুট সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র? এ সম্পর্কে জানতে হলে একটু পেছনে যেতে হবে।
ইসরায়েলকে কখন থেকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম থেকেই যুক্তরাষ্ট্র তাদের সমর্থন দিয়ে আসছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি কে ট্রুম্যান ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর বিশ্বে প্রথম দেশ হিসেবে এই রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেন। তিনি কেন প্রশ্নবিদ্ধ উপায়ে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রকে এত দ্রুত তড়িঘড়ি করে স্বীকৃতি দিলেন? এটি ছিল বিরাট এক প্রশ্ন। কিছুটা হচ্ছে ব্যক্তিগত সম্পর্ক। ট্রুম্যানের সাবেক ব্যবসায়ী অংশীদার এডওয়ার্ড জ্যাকবসন ইসরায়েল রাষ্ট্রের মার্কিন স্বীকৃতি আদায়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ব্যক্তিগত সম্পর্কের বাইরে কৌশলগত বিষয়ও যুক্তরাষ্ট্রকে এই সিদ্ধান্ত নিতে আগ্রহী করে তুলেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তখন কী এমন কৌশলগত বিষয় ছিল? আসলে এই রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক পরপরই। তখন যুক্তরাষ্ট্র আর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা হচ্ছিল।
মধ্যপ্রাচ্য তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল। রয়েছে সুয়েজ খালের মতো কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ জলপথ। এটাই বিশ্বশক্তিগুলোকে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে নামতে উৎসাহী করে তুলেছিল। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সুবিধা ছিল, তারা আগেই তুলনামূলক দুর্বল হয়ে পড়া ইউরোপীয় শক্তিকে নিজের পক্ষে টেনে আনতে পেরেছে। মধ্যপ্রাচ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তাদের ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এত কিছুর পরও তখনো ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দ্ব্যর্থহীন সমর্থন ছিল না।
কখন থেকে একচেটিয়া সমর্থন দেওয়া শুরু
এই রহস্য অনেকটা নিহিত ১৯৬৭ সালের আরব–ইসরায়েল যুদ্ধে। সেই যুদ্ধে তুলনামূলকভাবে দুর্বল মিসর, সিরিয়া ও জর্ডানের সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে ইসরায়েলি বাহিনী। এই যুদ্ধে ইহুদি রাষ্ট্রটি ফিলিস্তিনের বাকি ঐতিহাসিক জায়গা দখল করে নেয়। এর বাইরে সিরিয়া ও মিসরের কিছু অঞ্চল দখল করে।
তখন থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র দ্ব্যর্থহীনভাবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর শ্রেষ্ঠত্বের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আসছে। তারা এই রাষ্ট্রটির প্রতি আরব বিশ্বের কোনো ধরনের মনোভাবকে তোয়াক্কা করে না।
এত গেল একটা দিক। প্রশ্ন হচ্ছে, আর কী এমন কোনো বিষয় রয়েছে, যার কারণে ইসরায়েলকে অন্ধ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র? এই প্রসঙ্গে বলতে হয় ১৯৭৩ সালের আরব–ইসরায়েল যুদ্ধের কথা। সেই যুদ্ধে আবারও মিসর ও সিরিয়াকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে ইসরায়েলি বাহিনী।
এই যুদ্ধে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রেরও কিছু ভূমিকা ছিল। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধে মিসরকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করতে চেয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বাধায় সেটা ব্যাহত হয়। যুদ্ধ শেষে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল ও মিসরের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে। তার সেই প্রচেষ্টা ১৯৭৯ সালে কিছুটা আলোর মুখ দেখে।
ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার প্রভাব কতটা
আপনি বাজি ধরতে পারেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি বিদেশি সহায়তা পেয়ে থাকে ইসরায়েল।
২০১৬ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইসরায়েলের সঙ্গে ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তিতে সই করেন। ওই চুক্তির আওতায় পরবর্তী ১০ বছরে মার্কিন সামরিক সহায়তা পাবে ইসরায়েল। এর মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আয়রন ডোমের তহবিলও রয়েছে।
মনে রাখতে হবে, ইসরায়েলের আসলে সহায়তার খুব একটা দরকার হয় না। কারণ, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি খাত থেকে এই দেশের বিপুল পরিমাণ আয় রয়েছে, যা ইসরায়েলকে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত করেছে।
এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি, জনমত, অর্থ ও রাজনীতিতে অর্থের প্রভাব—এসব বিষয়ও ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের বিষয়ে মার্কিন নীতিতে বিরাট প্রভাব রাখে।
জনমত কী ভূমিকা রাখে
দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন জনমত ইসরায়েলের পক্ষে এবং ফিলিস্তিনের বিপক্ষে। কারণটা হচ্ছে, ইসরায়েলের শক্তিশালী জনসংযোগব্যবস্থা রয়েছে। তবে এটাও ঠিক, ফিলিস্তিনপন্থীদের কিছু সহিংস কর্মকাণ্ড বিশ্ব গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে। যেমন ১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকে ১১ ইসরায়েলিকে হত্যা ইসরায়েলের প্রতি সহানুভূতি বাড়িয়ে দিয়েছে।
কিন্তু এটা কি সব সময় ইসরায়েলিদের পক্ষে যাচ্ছে? নাহ, তা–ও নয়। আগের চেয়ে এখন মার্কিনদের অনেকে ফিলিস্তিনিদের অধিকারের বিষয়ে সহানুভূতিশীল হচ্ছে। গ্যালাপের একটি বার্ষিক জরিপ অন্তত সেটা বলছে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, ২৫ শতাংশ মার্কিন ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল। ২০২০ সালের তুলনায় এই হার ২ শতাংশ এবং ২০১৮ সালের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি।
২০২১ সালে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রতি মার্কিন জনগণের সমর্থন ৩০ শতাংশে পৌঁছেছে। ২০২০ সালের তুলনায় তা ৭ শতাংশ বেশি।
তবে এখনো মার্কিন জনমত ইসরায়েলের প্রতি অনেক বেশি। একই জরিপে দেখা যায়, ৫৮ শতাংশ মার্কিন ইসরায়েলের প্রতি সহানুভূতিশীল।
তবে সম্প্রতি ফিলিস্তিন–ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে প্রকাশিত এক জনমত জরিপে দেখা যায়, ৬৫ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত প্রত্যক্ষভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন করা। কিন্তু লক্ষণীয় হচ্ছে, ৪৫ বছরের কম বয়সী উত্তরদাতাদের মাত্র ৪৫ শতাংশ এমনটা মনে করেন।
ইসরায়েলপন্থী রাজনীতির প্রভাব কতটা
যুক্তরাষ্ট্রে এমন অনেক সংগঠন রয়েছে, যারা ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন তৈরিতে কাজ করে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে প্রভাবশালী সংগঠন হচ্ছে আমেরিকান ইসরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি (এআইপিএসি)।
এই সংগঠনের সদস্যদের প্রভাব মার্কিন ইহুদিদের মধ্যে একেবারে তৃণমূলে রয়েছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রে মার্কিন ইহুদিদের নানা পরামর্শ দিয়ে থাকে, তাদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ করে থাকে। শুধু ইহুদি নয়, কট্টরপন্থী খ্রিষ্টান ইভানজেলিক গির্জা থেকেও তারা তহবিল সংগ্রহ করে।
এআইপিএসি কতটা প্রভাবশালী
এআইপিএসি প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বার্ষিক সম্মেলন করে থাকে। এতে প্রায় ২০ হাজার প্রতিনিধি উপস্থিত থাকেন, যাঁদের মধ্যে মার্কিন রাজনীতির শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছেন, এমন ব্যক্তিদেরও দেখা যায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিয়মিত এই সম্মেলনে হাজির হয়ে থাকেন।
এখন কথা হচ্ছে, এআইপিএসির কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠন কি যুক্তরাষ্ট্রে আছে? তাদের মতো প্রভাবশালী না হলেও ইসরায়েলপন্থী জে স্ট্রিট নামে একটি ছোট সংগঠন রয়েছে। ডেমোক্র্যাটরা মূলত এই সংগঠন তৈরিতে ভূমিকা রেখেছেন। এঁদের লক্ষ্য, মার্কিন রাজনীতিতে একটি সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি করা, যাঁরা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রতি সোচ্চার হবে।
ডলারের দিক থেকে প্রভাব
ইসরায়েলপন্থী বিভিন্ন গ্রুপ মার্কিন রাজনীতিতে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে থাকে। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে ইসরায়েলপন্থী গ্রুপগুলো ৩ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার তহবিল দিয়েছে, যার ৬৩ শতাংশ পেয়েছেন ডেমোক্র্যাটরা, ৩৬ শতাংশ পেয়েছেন রিপাবলিকানরা। ওপেন সিক্রেট ডট ওআরজি–এর তথ্যমতে, ২০১৬ সালের তুলনায় ওই বছর প্রায় দ্বিগুণ নির্বাচনী তহবিলের জোগান দিয়েছে ইসরায়েলপন্থী গ্রুপগুলো।
ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন রাজনীতিকদের সমর্থন
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ইসরায়েলের প্রভাব কতটা, সেটা ওপরের লেখা থেকে কিছুটা হলেও আঁচ করা যাচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বর্তমান মার্কিন রাজনীতিকদের মধ্যে কার প্রতি ইসরায়েলের সমর্থন বেশি। যত দূর জানা যায়, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি ইসরায়েলের অগাধ সমর্থন রয়েছে। তিনি ইসরায়েলকে সমর্থন করেন বলে ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরা তাঁকে সমর্থন করেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুরও তাঁর প্রতি সমর্থন রয়েছে। চার বছরের ক্ষমতার মেয়াদে ট্রাম্প ইসরায়েলের ঘোর সমর্থক ছিলেন।
মার্কিন কংগ্রেসে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টির বেশির ভাগ সদস্য প্রকাশ্যেই ইসরায়েলকে সমর্থন করে থাকেন।
প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট–দলীয় সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি, সদ্য সাবেক স্পিকার জন ম্যাকার্থি, সিনেটর চাক শুমার থেকে শুরু করে বেশির ভাগ সদস্যই ইসরায়েলের পক্ষে। এই নামের তালিকা করতে গেলে বোধ করি খুব কমই বাদ যাবেন। তাঁরা বর্তমান সংঘাতে ইসরায়েলের পক্ষে প্রকাশ্যে কথা বলছেন এবং হামাসকে নির্মূল করার পক্ষে জোরালো বক্তব্য দিচ্ছেন।
ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন
মার্কিন রাজনীতিকদের মধ্যে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থনের চিত্র তুলে ধরতে গেলে হতাশই হতে হয়। তবে আশার কথা, যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনি দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে আমেরিকান–আরব অ্যান্টি–ডিসক্রিমিনেশন কমিটি (এডিসি) কাজ করে থাকে। ১৯৮০ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্যালেস্টাইনিয়ান রাইটস নামে আরেকটি সংগঠন গড়ে উঠেছে ২০০১ সালে। ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে তারা কথা বলে থাকে। কিন্তু এসব সংগঠন মার্কিন রাজনীতিতে বড় ধরনের তহবিল দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই।
এসব দিক বিবেচনা করলে মার্কিন রাজনীতিতে ফিলিস্তিনিদের তেমন কোনো অবস্থান নেই। তবে বর্তমানে ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে প্রগতিশীল একটি অংশ ফিলিস্তিনকে সমর্থন করছে। জাতীয় পর্যায়ে তারা ধীরে ধীরে নিজেদের তুলে ধরছে।
এঁদের মধ্যে সবার আগে নাম আসে সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ও এলিজাবেথ ওয়ারেনের। দুজনই ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট পদে দলীয় প্রার্থী বাছাইপর্বে অংশ নিয়েছিলেন। ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার বিবেচনা করে শর্ত সাপেক্ষে তাঁরা ইসরায়েলকে সামরিক সহযোগিতা দেওয়ার পক্ষে বলেছিলেন।
প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকাশিও–কর্তেজ, ইলহান ওমর, আয়ান্না প্রেসলি ও রাশিদা তালিবের মতো তরুণ প্রগতিশীল কিছু সদস্য ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিয়ে কথা বলছেন।
এসব তরুণ রাজনীতিক আবার মার্কিন রাজনীতিতে তহবিল জোগানোর বিষয়ে আগ্রহী নন। তাঁরা গাজা, পশ্চিম তীর ও ইসরায়েলে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরায়েলের দমন–পীড়ন নিয়ে উচ্চকিত।
ডেমোক্র্যাট–দলীয় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ২০০৬ সালে তাঁর সর্বোচ্চ বিক্রীত বই প্যালেস্টাইন: পিস নট অ্যাপার্টহেইট (ফিলিস্তিন: জাতিবিদ্বেষ নয়, শান্তি) প্রকাশের মাধ্যমে এই পথ দেখিয়েছেন।