বৈরুতের দক্ষিণে গত ২৬ নভেম্বর হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী
বৈরুতের দক্ষিণে গত ২৬ নভেম্বর হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী

লেবাননে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন নিয়ে হিজবুল্লাহ-ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

লেবাননে সংঘাত বন্ধের লক্ষ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করেছে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ। এরপরও দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের দাবি—হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ এনেছে লেবাননের সশস্ত্র সংগঠনটি।

গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স। এর পরদিনই ইসরায়েলি বাহিনী জানায়, চুক্তি লঙ্ঘন করে দক্ষিণ লেবাননের বিভিন্ন এলাকায় গাড়িতে করে ‘সন্দেহভাজন’ ব্যক্তিদের আসতে দেখা গেছে। ওই ব্যক্তিদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। এ ছাড়া এদিন দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর একটি ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

এদিকে পাল্টা অভিযোগ এনে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান ফাদলাল্লাহ সাংবাদিকদের বলেছেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী লেবাননের অনেক নাগরিক সীমান্তবর্তী এলাকায় নিজ ঘরবাড়িতে ফেরা শুরু করেছিলেন। তাঁদের ওপর হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে বলে জানিয়েছে লেবাননের সামরিক বাহিনীও।

নেতানিয়াহুর হুঁশিয়ারি

গতকাল বৃহস্পতিবার ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে দক্ষিণ লেবাননের লিতানি নদীর উত্তরাঞ্চলে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, এই নদীর দক্ষিণাঞ্চল থেকে অনুমোদিত সব সামরিক অবকাঠামো সরিয়ে নিতে হবে। তবে উত্তরের সামরিক কাঠামোর বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। ফলে সেখানে হিজবুল্লাহর অস্ত্রাগারে হামলাকে চুক্তির লঙ্ঘন বলে মনে করছে সংগঠনটি।

এর আগে দক্ষিণ লেবাননের পাঁচটি গ্রামে ট্যাংক হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে দুজন আহত হন। গ্রামগুলো ইসরায়েল–লেবানন সীমান্ত থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে। চুক্তি অনুযায়ী, এই এলাকাগুলোতেও যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। তবে চুক্তির পরও সেখানে যেতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

চুক্তির পর দক্ষিণ লেবাননে আরও হামলা চালানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। দেশটির চিফ অব জেনারেল স্টাফ হেরজি হালেভি বলেছেন, ‘চুক্তির কোনো বিচ্যুতি হলে গুলি চালিয়ে জবাব দেওয়া হবে।’ আর সরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, চুক্তি লঙ্ঘন হলে তীব্র লড়াইয়ের জন্য সামরিক বাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

যুদ্ধবিরতির মধ্যে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের উপকণ্ঠে একটি মসজিদে দেখা যায় দুই নারীকে

‘বন্দুকের ট্রিগারে আঙুল প্রস্তুত থাকবে’

গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। তখন থেকে ইসরায়েলে হামলা চালাচ্ছিল দেশটির পুরোনো শত্রু হিজবুল্লাহ। পাল্টা জবাব দিচ্ছিল ইসরায়েলও। তবে গত সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননে হামলা তীব্র করে ইসরায়েল। একপর্যায়ে সীমান্ত পেরিয়ে দক্ষিণ লেবাননে প্রবেশ করেন ইসরায়েলের সেনারা।

বৃহস্পতিবার লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত এক বছরের বেশি সময় ইসরায়েলের হামলায় লেবাননে অন্তত ৩ হাজার ৯৬১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৬ হাজার ৫২০ জন। অন্যদিকে ইসরায়েল জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর হামলায় উত্তর ইসরায়েল ও গোলান উপত্যকায় ৬৫ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া অন্তত ৭৯ জন ইসরায়েলি সেনার প্রাণহানি হয়েছে।

শুধু তা–ই নয়, ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর পাল্টাপাল্টি হামলায় হাজার হাজার মানুষ লেবানন–ইসরায়েল সীমান্ত থেকে পালিয়ে গেছেন। যুদ্ধবিরতি চুক্তির অন্যতম লক্ষ্য এই মানুষগুলোকে নিজ ঘরবাড়িতে ফেরানো। তবে দক্ষিণ লেবাননের বাসিন্দারা বাড়িতে ফেরা শুরু করলেও, নিজেদের প্রায় ৬০ হাজার মানুষকে উত্তর ইসরায়েলে ফিরতে নিষেধ করেছে নেতানিয়াহু সরকার।

এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, দক্ষিণ লেবানন থেকে সেনা সরাতে ৬০ দিন সময় পাবে ইসরায়েল। এই সময়টাতে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ একে অপরের ওপরে হামলা চালাতে পারবে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে হিজবুল্লাহ বলেছে, লেবানন থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের ওপর নজর রাখবে তারা। এ সময় যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বন্দুকের ট্রিগারে আঙুল প্রস্তুত রাখা হবে।

যুদ্ধবিরতির চুক্তির পর লেবানন সীমান্তের কাছে অবস্থান করছে ইসরায়েলের ট্যাংক

গাজায় ৪২ ফিলিস্তিনি নিহত

গত মঙ্গলবার লেবাননে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, এবার তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য নতুন করে তৎপরতা শুরু করবেন। বাইডেনের এমন বক্তব্যের পরও গাজায় তীব্র হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল।

গাজার চিকিৎসা–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৪২ জন নিহত হয়েছেন। উপত্যকার বেইত লাহিয়া, খান ইউনিস, নুসেইরাত এলাকার বিভিন্ন ভবন ও শরণার্থীশিবিরে এসব হামলা চালানো হয়। এ নিয়ে যুদ্ধের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় নিহত হলেন অন্তত ৪৪ হাজার ৩৬৩ জন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৫ হাজার জনের বেশি।

ইসরায়েলের এই নৃশংস হামলার মধ্যে জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, গাজায় আটকে পড়া মানুষেরা খাবারের অভাবে রয়েছেন। সেখানে সরবরাহ করা পানির বেশির ভাগই পানের জন্য অনিরাপদ। কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় মানুষকে পরিত্যক্ত বাড়িতে বা খোলা জায়গায় বসবাস করতে হচ্ছে। উপত্যকাটিতে দুর্ভিক্ষ আসন্ন।