গাজার রাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে আইসিজেতে করা দক্ষিণ আফ্রিকার আবেদনের ওপর শুনানিতে ইসরায়েলের প্রতিনিধিরা (সম্মুখ সারির তিনজন)
গাজার রাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে আইসিজেতে করা দক্ষিণ আফ্রিকার আবেদনের ওপর শুনানিতে ইসরায়েলের প্রতিনিধিরা (সম্মুখ সারির তিনজন)

আইসিজেতে শুনানি

‘জাতিগত নিধন’ মামলা বাস্তবতা থেকে ‘সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন’, দাবি ইসরায়েলের

নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) দক্ষিণ আফ্রিকার করা আবেদনের ওপর আজ শুক্রবার দ্বিতীয় ও শেষ দিনের শুনানিতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছে ইসরায়েল। দেশটি দাবি করেছে, হামাস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার্থেই ফিলিস্তিনের গাজায় সামরিক অভিযান চালাচ্ছে তারা।

এদিকে জাতিসংঘের এই শীর্ষ আদালতের বিচারপতিদের প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার ওই আবেদন নাকচ করে দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েল। গত শুক্রবার দাখিল করা এ আবেদনে দক্ষিণ আফ্রিকা গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহার করা ছাড়াও সেখানে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা ও রাফা শহরে হামলা বন্ধের নির্দেশ দিতে আদালতের কাছে অনুরোধ জানায়।

শুনানির প্রথম দিন গতকাল বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকা তার আবেদনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছে। শুনানিতে দেশটি অভিযোগ করেছে, গাজায় ইসরায়েলের ‘জাতিগত নিধন’ ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

আজকের শুনানিতে অংশ নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার আবেদনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ইসরায়েলি প্রতিনিধিরা। তাঁরা আদালতকে বলেন, এটি বাস্তবতা থেকে ‘পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন’। দেশটির একজন শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী এ মামলাকে জাতিসংঘের জাতিগত নিধন সনদের সঙ্গে ‘ঠাট্টা’ বলে আখ্যায়িত করেন। প্রিটোরিয়ার অভিযোগ, গাজায় চলমান যুদ্ধে এ সনদ লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল।

শুনানির প্রথম দিন গতকাল বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকা তার আবেদনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছে। শুনানিতে দেশটি অভিযোগ করেছে, গাজায় ইসরায়েলের ‘জাতিগত নিধন’ ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

ইসরায়েলের প্রতিনিধি গিলাড নোয়াম আইসিজেকে বলেন, ‘গাজা যুদ্ধ নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা এ আদালতে চতুর্থবারের মতো যে চিত্র তুলে ধরেছে, সেটি বাস্তবতা ও পারপার্শ্বিক পরিস্থিতি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।’

গাজার অতি ঘনবসতিপূর্ণ রাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা বন্ধে আদালতের কাছে নির্দেশনা চাওয়া প্রসঙ্গে ইসরায়েল বলেছে, ‘হামাস যোদ্ধাদের নির্মূল করার জন্য এ অভিযান গুরুত্বপূর্ণ।’

আগের দিন গতকাল ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জোরালো ভাষায় বলেন, হামাসকে ধ্বংস করা ও ৭ অক্টোবরের হামলার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে তেল আবিবের মিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ রাফার স্থল অভিযান।

ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতা উপেক্ষা করে সম্প্রতি রাফায় অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন নেতানিয়াহু। কয়েক মাস ধরে চলা ইসরায়েলের নারকীয় হামলার মুখে গাজার বিভিন্ন স্থান থেকে পালিয়ে শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে এ শহরে ঠাঁই নিয়েছেন কয়েক লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি। বর্তমানে সেখানে প্রায় ১০ লাখের বেশি মানুষ বসবাস করছেন।

ফিলিস্তিনের গাজার রাফা এলাকায় সামরিক অভিযান বন্ধে ইসরায়েলকে চাপ দিতে দক্ষিণ আফ্রিকার করা আবেদনের ওপর বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) শুনানি শুরু হয়

বিভিন্ন দেশ ও মানবাধিকার সংস্থা বলছে, রাফায় ইসরায়েলের সর্বাত্মক অভিযানে বেসামরিক লোকজনের মধ্যে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

গতকাল ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, রাফায় অভিযান চলবে এবং সেখানে অতিরিক্ত সেনাসদস্য পাঠানো হবে।

আইসিজেতে আজ নোয়াম বলেন, ‘রাফায় বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতির ব্যাপারে পুরোপুরি অবগত আছে ইসরায়েল। এই বেসামরিক নাগরিকদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করার হামাসের চেষ্টার বিষয়েও ইসরায়েল সম্পূর্ণ অবগত।’

দুই দেশের মধ্যে বিবদমান কোনো বিষয় সমাধানে রায় দিয়ে থাকেন আইসিজে। এ রায় মেনে চলার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে তা মানতে জোর খাটানোর এখতিয়ার নেই আদালতটির। যেমন ইউক্রেনে হামলা বন্ধে রাশিয়াকে আদেশ দিয়েছিলেন আইসিজে। তবে তা মানা হচ্ছে না।