লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছেই। চলমান এ লড়াইকে কেন্দ্র মধ্যপ্রাচ্যে পুরোদমে যুদ্ধ বেধে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় লেবানন সরকার বলেছে, একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই এ যুদ্ধ থামাতে পারে।
গত সোমবার সকাল থেকে লেবাননে ইসরায়েলের হামলায় ৫০ শিশুসহ ৫৬৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ হাজার ৮৩৫ জন। আল–জাজিরা মুবাশের টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফিরাস আবিয়াদ এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এর মধ্যেই গতকাল মঙ্গলবার ইসরায়েল দাবি করে, বৈরুতে তাদের বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ইব্রাহিম কুবাইসি নিহত হয়েছেন। কুবাইসি হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেটসংক্রান্ত দলের নেতৃত্বে ছিলেন। আজ বুধবার ভোরে হিজবুল্লাহও কুবাইসির নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে।
হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের নতুন হামলাকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ বেড়েছে। অনেকের আশঙ্কা, গাজায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের মধ্যে প্রায় এক বছর ধরে চলা সংঘাতের মাত্রা বাড়ছে এবং তা মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করতে পারে।
যুক্তরাজ্য সরকার ইতিমধ্যে তাদের নিজ দেশের নাগরিকদের লেবানন ছাড়তে বলেছে। নাগরিকদের নিরাপদে সরে যেতে সহযোগিতা করার জন্য তারা সাইপ্রাসে সাত হাজার সেনা পাঠাচ্ছে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বুধবার এ সংঘাতময় পরিস্থিতির বিষয়ে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘লেবানন বিপজ্জনক পরিস্থিতির দ্বারপ্রান্তে আছে। লেবাননের জনগণ, ইসরায়েলের জনগণ এবং বিশ্বের জনগণ লেবাননকে আরেকটি গাজা হতে দিতে পারেন না।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জাতিসংঘে ইসরায়েল-লেবানন প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘পুরোদস্তুর যুদ্ধ কারও স্বার্থ হাসিল করবে না। এমনকি পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেলেও এখনো কূটনৈতিক সমাধান সম্ভব।’
তবে বাইডেনের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদাল্লাহ বো হাবিব। তিনি মনে করেন, বাইডেনের বক্তব্য ‘জোরালো ও আশাপ্রদ’ ছিল না। তাঁর মতে, যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র দেশ, যারা সত্যিকার অর্থে মধ্যপ্রাচ্য ও লেবানন পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আনতে পারে। কারণ, ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্র। ইসরায়েলকে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র সরবরাহকারী দেশও যুক্তরাষ্ট্র।
নিউইয়র্কে কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এ সংকট থেকে আমাদের উত্তরণে মূল ভূমিকা রাখতে পারে।’
এদিকে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়া হাজারো মানুষ এখন রাজধানী বৈরুতের বিভিন্ন স্কুল ও অন্যান্য ভবনে আশ্রয় নিচ্ছেন।
আজ ভোরেও লেবাননের সমুদ্রতীরবর্তী শহর জিয়েহতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।