ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রকাশ্যে বিরোধিতা করলেন নেতানিয়াহু, মার্কিন চাপ প্রত্যাখ্যান

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজায় চলমান সংঘাত শেষে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তাঁর কোনো সমর্থন থাকবে না। এ কথা তিনি এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দিয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এসব কথা বলেন। একই সঙ্গে তিনি গাজায় ‘পূর্ণাঙ্গ বিজয় অর্জন’ না হওয়া পর্যন্ত সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন।

বরাবরের মতো নেতানিয়াহু বলেন, গাজায় ইসরায়েলের চূড়ান্ত লক্ষ্য হামাসকে ধ্বংস করা এবং সব জিম্মিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। এসব লক্ষ্য অর্জনে গাজায় ‘আরও অনেক মাস’ অভিযান চলতে পারে বলেও মন্তব্য করেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী।

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার তিন মাস পেরিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় প্রায় ২৫ হাজার মানুষের প্রাণ গেছে। উপত্যকার ৮৫ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

হামলায় লাগাম টানতে এবং গাজায় প্রাণঘাতী যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা চালিয়ে যেতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ চাপের মুখে রয়েছে নেতানিয়াহু প্রশাসন।

যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরায়েলের অনেক মিত্র বহুল আলোচিত ‘দুই রাষ্ট্রভিত্তিক’ সমাধানের কৌশলের কথা বলছে। এর অর্থ ভবিষ্যতে ইসরায়েলের পাশে পৃথক ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ওই অঞ্চলে টেকসই শান্তি বজায় রাখা।

বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন, গাজায় রক্তপাত বন্ধে কূটনৈতিক আলোচনা ভালো কৌশল হতে পারে। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো আলোচনার টেবিলে বসলে সমাধানের একটা পথ বেরিয়ে আসবে। সহিংসতা পরিহার করা যাবে। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহুর এমন মন্তব্য ইঙ্গিত দেয়, তিনি ঠিক উল্টোটা ভাবছেন।

গতকালের সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরের সম্পূর্ণ ভূখণ্ডের নিরাপত্তা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় ইসরায়েল। এই ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়ে থাকে।

নেতানিয়াহু আরও বলেন, এটা খুবই প্রয়োজনীয় একটা শর্ত এবং এটা সার্বভৌমত্বের (ফিলিস্তিনের) ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রসঙ্গ টেনে নেতানিয়াহু বলেন, ‘কী করার আছে? আমাদের আমেরিকান বন্ধুদের আমি এই সত্যটা বলেছি। সেই সঙ্গে ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য ক্ষতির কারণ হবে, এমন বাস্তবতা চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টাও বন্ধ করে দিয়েছি।’

নিজের রাজনৈতিক জীবনের বড় সময়জুড়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ধারণার বিরোধিতা করে এসেছেন নেতানিয়াহু। এমনকি গত মাসেও তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ার প্রচেষ্টা রুখতে পেরে তিনি গর্বিত। তাই গাজায় প্রাণহানি চলমান থাকা অবস্থায় নেতানিয়াহুর এমন মন্তব্য মোটেও অবাক করা নয়।

কিন্তু এবারই প্রথম ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ার বিষয়টি নিয়ে ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক চাপ প্রত্যাখ্যান করার কথা প্রকাশ্যে জানালেন। সেই সঙ্গে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়ার কথাও জানালেন।

বিশ্লেষকদের একটা অংশ মনে করে, এমন অবস্থান নেতানিয়াহু ও তাঁর প্রশাসনের সঙ্গে পশ্চিমা মিত্রদের সম্পর্কে ব্যবধান বেড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়।