গোলান মালভূমি ও সিরিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতি রেখার কাছে ইসরায়েলের সেনাদের একটি সাঁজোয়া যান
গোলান মালভূমি ও সিরিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতি রেখার কাছে ইসরায়েলের সেনাদের একটি সাঁজোয়া যান

গোলান মালভূমিতে বসতি আরও বাড়ানোর উদ্যোগ ইসরায়েলের

অধিকৃত গোলান মালভূমিতে ইহুদি বসতি আরও বাড়াতে চায় ইসরায়েল। দেশটির সরকার এ–সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তাঁদের এই পদক্ষেপ জরুরি ছিল। কারণ, ইসলামপন্থী বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের সীমান্তে একটি ‘নতুন ফ্রন্ট’ খোলা হয়েছে।

গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলি বসতি দ্বিগুণ করতে চান বলেও জানিয়েছেন নেতানিয়াহু। গতকাল রোববার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু এ কথা বলেন।

১৯৬৭ সালে ছয় দিনের যুদ্ধের পর ইসরায়েল গোলান মালভূমির বড় অংশের দখল নেয়। আন্তর্জাতিক আইনে ইসরায়েলের এই দখল অবৈধ।

বিদ্রোহীদের অভিযানের মুখে ৮ ডিসেম্বর সিরিয়া ছেড়ে পালিয়ে যান আসাদ। আসাদ পালিয়ে যাওয়ার পর ইসরায়েলি বাহিনী গোলান মালভূমির নিরপেক্ষ অঞ্চলের (বাফার জোন) ভেতরে প্রবেশ করে। এই নিরপেক্ষ অঞ্চল সিরিয়া থেকে গোলান মালভূমিকে পৃথক করেছে।

ইসরায়েলি বাহিনী নিরপেক্ষ অঞ্চলে প্রবেশ করার বিষয়ে যুক্তি হিসেবে বলেছে, দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ পরিবর্তন হওয়ার অর্থ যুদ্ধবিরতি চুক্তি ‘ভেঙে পড়া’।

একদিকে ইসরায়েলি বাহিনী গোলান মালভূমির নিরপেক্ষ অঞ্চলে প্রবেশ করছে, অন্যদিকে নেতানিয়াহু বলেছেন, তাঁর দেশ সিরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে আগ্রহী নয়।

সিরিয়ার বিষয়ে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা বাস্তবতার নিরিখে সিরিয়ার বিষয়ে ইসরায়েলের নীতি নির্ধারণ করব।’

গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলের ৩০টির বেশি বসতি রয়েছে। যেখানে প্রায় ২০ হাজার মানুষ বসবাস করেন। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ওই বসতি অবৈধ। যদিও এ নিয়ে ইসরায়েলের আপত্তি আছে।

গোলান মালভূমির যে অঞ্চলে ইসরায়েল বসতি স্থাপন করছে, সেখানে ইসরায়েলিদের পাশাপাশি প্রায় ২০ হাজার সিরীয় বসবাস করে। তারা মূলত দ্রুজ আরব। ইসরায়েল যখন ওই অঞ্চলের দখল নেয়, তখন দ্রুজ আরবরা তাদের বসতি ছেড়ে যায়নি।

নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল ওই অঞ্চলের দখল রাখবে, সমৃদ্ধ করবে ও স্থিতিশীল রাখবে। তবে গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলি বসতি বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন দেখছেন না দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট।

ওলমার্ট বিবিসিকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী (নেতানিয়াহু) বলেছেন, আমরা সিরিয়ার সঙ্গে সংঘাত বাড়াতে আগ্রহী নই এবং আমরা আশা রাখছি, বর্তমানে সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া নতুন বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ের প্রয়োজন পড়বে না। তবে কেন আমরা ঠিক এর বিপরীত কাজটাই করছি? আমাদের যথেষ্ট সমস্যা রয়েছে, যেগুলোর সমাধান পেতে হবে।’

নেতানিয়াহু এই বক্তব্যের কয়েক দিন আগে সিরিয়ার বর্তমান নেতা আহমেদ আল-শারা তাঁর দেশের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ইসরায়েলের চলমান হামলার তীব্র সমালোচনা করেন।

সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৮ ডিসেম্বরের পর সিরিয়ায় সাড়ে ৪ শর বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। তার মধ্যে ৭৫টি গত শনিবার সন্ধ্যার পর।

আল-শারা, যিনি আবু মোহাম্মদ আল-জুলানি নামে অধিক পরিচিত। ইসরায়েলের হামলার বিষয়ে তিনি বলেছেন, ওই হামলা চালিয়ে ইসরায়েল ‘লাল দাগ অতিক্রম’ করছে এবং ওই অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়িয়েছে।

তবে তিনিও বলেছেন, সিরিয়া প্রতিবেশী কোনো দেশের সঙ্গে যুদ্ধ চায় না।