আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ এবং যুদ্ধবিরতি আলোচনা অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফায় দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এখনো বন্ধ রয়েছে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাফা ক্রসিং। এদিকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আরও ৫৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এসব কথা জানায়।
যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ এবং হামাসের যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নেওয়ার ঘোষণা উপেক্ষা করে গত মঙ্গলবার মিসর সীমান্তবর্তী রাফা ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নেয় ইসরায়েলি বাহিনী। এরপর রাফার পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলসহ গাজার বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় হামলা চালায় দেশটি।
বর্তমানে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অংশ নিতে মিসরের রাজধানী কায়রোয় অবস্থান করছে ইসরায়েল ও হামাস প্রতিনিধিদল। তবে আলোচনায় সমঝোতার তেমন ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় হাসপাতালগুলো জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু করে গতকাল সকাল পর্যন্ত রাফাসহ গাজার বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। বিধ্বস্ত গাজা নগরীর একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে এক হামলায় একই পরিবারের সাতজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। আল-আহলি হাসপাতাল এসব কথা জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, মধ্য রাফার কয়েকটি আবাসিক ভবনে গোলাবর্ষণ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে এসব ভবনে আগুন ধরে যায়। অগ্নিনির্বাপণ দল ছুটে গেলেও অব্যাহত গোলাবর্ষণের কারণে আগুন নেভাতে তাদের হিমশিম খেতে হয়।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী রাফাসহ গাজার ১০০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রাফার পূর্বাঞ্চলে চালানো হামলায় হামাস যোদ্ধা নিহত ও তাদের সামরিক স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। রাফা ক্রসিংয়ের ফিলিস্তিন অংশে ‘নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু’তে হামলা চালানো হচ্ছে।
ইসরায়েলের হামলার মুখে মরিয়া হয়ে রাফা ছাড়ছেন ফিলিস্তিনিরা। সর্বশেষ ৪৮ ঘণ্টায় ৫০ হাজার বাসিন্দা রাফা ছেড়ে গেছেন বলে সিএনএন জানিয়েছে। তাঁদের অনেকেই দেইর আল-বালাহ এলাকায় তাঁবু টানিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ২০০ জন। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৩৪ হাজার ৮৪৪ জন নিহত হয়েছেন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাফায় ইসরায়েল বড় ধরনের স্থল অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে—এমন আশঙ্কার জেরে গত সপ্তাহে দেশটিতে বোমার একটি চালান স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রশাসনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
জাহাজ মারফত পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করা ওই চালানে ছিল ১ কোটি ৮০ লাখ ২ হাজার পাউন্ড ও ১৭ লাখ ৫০০ পাউন্ড ওজনের বোমা। যুক্তরাষ্ট্রে বিবিসির মিডিয়া পার্টনার সিবিএস নিউজকে এ তথ্য জানান ওই মার্কিন কর্মকর্তা।
ওই কর্মকর্তা বলেন, রাফায় বেসামরিক লোকজনের মানবিক চাহিদা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ ‘পুরোপুরি বিবেচনায়’ নেয়নি ইসরায়েল।
হোয়াইট হাউসের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান, রাফায় ইসরায়েলের বড় রকমের স্থল অভিযান চালানো উচিত হবে না। কারণ, সেখানে ১০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন যাঁদের অন্যত্র যাওয়ার জায়গা নেই।’