তাইওয়ানে গোল্ড অ্যাপোলো কোম্পানির প্রদর্শনীতে রাখা পেজার
তাইওয়ানে গোল্ড অ্যাপোলো কোম্পানির প্রদর্শনীতে রাখা পেজার

এখনো পেজার ব্যবহার করছেন কারা

যোগাযোগের যন্ত্র হিসেবে বর্তমান বিশ্বে মুঠোফোনের দাপট চলছে। কিন্তু গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে, যখন মুঠোফোন মানুষের হাতের নাগালে আসেনি, সে সময় তাৎক্ষণিক বার্তা প্রদানের জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠেছিল পেজার। যোগাযোগে তারবিহীন ছোট এ যন্ত্রের অতীত সুদিন এখন আর নেই।

কিন্তু জনপ্রিয়তা হারালেও কিছু ক্ষেত্রে যোগাযোগের জন্য পেজার এখনো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র হয়ে আছে। যেমন স্বাস্থ্যসেবা ও জরুরি পরিষেবা খাত। পেজার অনেক দিন ব্যবহার করা যায়। ব্যাটারির স্থায়িত্বের জন্যও যন্ত্রটির ধন্যবাদ প্রাপ্য।

যুক্তরাজ্যের একটি বড় হাসপাতালের এক জ্যেষ্ঠ সার্জন বলেন, এটা (পেজার) বিপুলসংখ্যক মানুষের সঙ্গে সবচেয়ে সস্তায় ও কার্যকরভাবে যোগাযোগের মাধ্যম। পেজারে বার্তা পাঠানো হয়, উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। লোকজনকে কোথায়, কখন ও কী জন্য যেতে হবে, তা জানাতে এ যন্ত্র ব্যবহার হয়।

তবে মুঠোফোনের দাপটে হাল আমলে আড়ালে পড়ে যাওয়া এই পেজার হঠাৎ করে বিশ্বজুড়ে খবরের শিরোনাম হয়ে উঠেছে। গত মঙ্গলবার লেবাননজুড়ে কয়েক হাজার পেজার বিস্ফোরিত হয়। নিহত হন অন্তত নয়জন, আহত প্রায় তিন হাজার মানুষ।

আমি ঠিক জানি না, এখন কেউ আর সেগুলো (পেজার) ব্যবহার করেন কি না। তাঁরা (অপরাধীরা) এখন সেলফোন, মুঠোফোন ব্যবহার করেন। কারণ, এগুলো খুব সহজে নষ্ট করে ফেলা যায় এবং নতুন আরেকটি ফোনে নতুন সিম নম্বর ব্যবহার করা যায়। এভাবে তাঁরা নজরদারি এড়ান।
কেন গ্রে, এফবিআইয়ের সাবেক এজেন্ট

লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সদস্যরা মূলত ওই পেজারগুলো ব্যবহার করতেন। লেবাননের একজন জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং আরও বেশ কয়েকটি সূত্রের মতে, ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ পেজারগুলোর ভেতরে বিস্ফোরক রেখে দিয়েছিল।

যুক্তরাজ্যজুড়ে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার (এনএইচএস) চিকিৎসক ও নার্সরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য সাধারণত পেজার ব্যবহার করেন। ২০১৯ সালে এনএইচএসে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার পেজার ব্যবহার করা হতো। অর্থাৎ বিশ্বে প্রতি ১০টি পেজারের একটির বেশি ব্যবহার হয়েছে এনএইচএসে। এনএইচএসের কর্মীদের পেজার ব্যবহার নিয়ে এটিই যুক্তরাজ্য সরকারের হাতে থাকা সর্বশেষ তথ্য।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কাজ করা চিকিৎসকেরা দায়িত্বপালনের সময় নিজের সঙ্গে পেজার রাখেন।

অনেক পেজারে আবার বার্তা আসার আগে সংকেত বাজে এবং এরপর ভয়েস বার্তা শোনা যায়। এ ব্যবস্থায় পুরো দলকে জরুরি কিছু নিয়ে একবারে সতর্ক করা যায় বলে মনে করেন এনএইচএসের জ্যেষ্ঠ এক চিকিৎসক। তিনি বলেন, মুঠোফোনে এটা সম্ভব নয়।

যুক্তরাজ্যে রয়্যাল ন্যাশনাল লাইফবোট ইনস্টিটিউশন (আরএনএলআই) ক্রুদের সতর্ক করতে পেজার ব্যবহার করে বলেও একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে। আরএনএলআই অবশ্য এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

প্রযুক্তি ব্যবহার করে মুঠোফোনের তুলনায় পেজারের অবস্থান খুঁজে পাওয়া কঠিন। কারণ, বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে পেজারে বার্তা পাঠানো হয়। অন্যদিকে মুঠোফোন কাছের মোবাইল টাওয়ার ব্যবহার করে কাজ করে। যে কারণে মোবাইল ফোনের অবস্থান খুঁজে পাওয়া বেশি সহজ।

পেজারের ওপর নজরদারি করা কঠিন

লেবাননের একটি সবজি বাজারে পেজার বিস্ফোরণের সময় লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা অবশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি কারণে পেজার ব্যবহার করেন। সশস্ত্র সংগঠনটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা ইসরায়েলের নজরদারি এড়াতে ও নিজেদের অবস্থান গোপন রাখতে চান।

প্রযুক্তি ব্যবহার করে মুঠোফোনের তুলনায় পেজারের অবস্থান খুঁজে পাওয়া কঠিন। কারণ, বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে পেজারে বার্তা পাঠানো হয়। অন্যদিকে মুঠোফোন কাছের মোবাইল টাওয়ার ব্যবহার করে কাজ করে। যে কারণে মুঠোফোনের অবস্থান খুঁজে পাওয়া বেশি সহজ।

এ ছাড়া পেজারে জিপিএসের মতো আধুনিক নেভিগেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায় না। যে কারণে অপরাধী চক্র বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক চক্রের ভেতর অতীতে পেজারের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। তবে এখন অপরাধী চক্র মুঠোফোনের ব্যবহার বেশি করে বলে জানান মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর (এফবিআই) সাবেক এজেন্ট কেন গ্রে।

মুঠোফোনের দাপটে হাল আমলে আড়ালে পড়ে যাওয়া এই পেজার হঠাৎ করে বিশ্বজুড়ে খবরের শিরোনাম হয়ে উঠেছে। গত মঙ্গলবার লেবাননজুড়ে কয়েক হাজার পেজার বিস্ফোরিত হয়। নিহত হন অন্তত নয়জন, আহত প্রায় তিন হাজার মানুষ।

কেন গ্রে বলেন, ‘আমি ঠিক জানি না, এখন কেউ আর সেগুলো (পেজার) ব্যবহার করেন কি না। তাঁরা (অপরাধীরা) এখন সেলফোন, মুঠোফোন ব্যবহার করেন। কারণ, এগুলো খুব সহজে নষ্ট করে ফেলা যায় এবং নতুন আরেকটি ফোনে নতুন সিম নম্বর ব্যবহার করা যায়। এভাবে তাঁরা নজরদারি এড়ান।’

একসময় মোটোরোলার মতো কোম্পানির মূল রাজস্ব আসত পেজার বিক্রি থেকে। কগনিটিভ মার্কেট রিসার্চের এপ্রিলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর পেজারের বৈশ্বিক বাজার ছিল ১৬০ কোটি মার্কিন ডলারের। মুঠোফোনের বাজারের তুলনায় এটি অনেক ছোট।

তবে স্বাস্থ্যসেবা খাতে পেজারের চাহিদা বাড়ছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০৩০ নাগাদ স্বাস্থ্য খাতে পেজারের চাহিদা ২০২৩ সালের তুলনায় ৫ দশমিক ৯ শতাংশ বাড়বে বলেও আভাস দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পেজারের বড় দুই বাজার উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপ। দুই বাজার থেকে যথাক্রমে ৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলার ও ৪৯ কোটি ৬০ লাখ ডলারের রাজস্ব আসে।