গাজায় ইসরায়েলের বোমা হামলার পর কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যায়। আজ খান ইউনিসে
গাজায় ইসরায়েলের বোমা হামলার পর কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যায়। আজ খান ইউনিসে

গাজায় নিহত ২৭ হাজার ছাড়াল

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার ১১৮তম দিনে মৃত্যু ২৭ হাজার ছাড়িয়েছে। এখনো উপত্যকাটির বিভিন্ন প্রান্ত কেঁপে উঠছে ইসরায়েলের বোমা ও গোলার আঘাতে। চরম সংকটময় এ পরিস্থিতিতে চলছে যুদ্ধবিরতির জোর তৎপরতা। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও গাজায় শান্তির আহ্বান জানিয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর সংঘাত শুরুর পর থেকে উপত্যকাটিতে ২৭ হাজার ১৯ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন ৬৬ হাজার ১৩৯ ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হামলার পর শুরু হওয়া সংঘাতে ইসরায়েলের নিহত হয়েছেন ১ হাজার ১৩৯ জন।

ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছেন, আজ গাজা নগরের পশ্চিমাঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র ও কামানের গোলা ছুড়ে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হয়েছে এ অঞ্চলের রেমাল ও তাল আল-হাওয়া এলাকায়। এতে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন। উপত্যকার দক্ষিণে জায়তুন এলাকায় ইসরায়েলের যুদ্ধবিমানের বোমার আঘাতেও কয়েকজন হতাহত হয়েছেন।

গাজার মধ্যাঞ্চলে একটি আবাসিক ভবনে ইসরায়েলের বোমা হামলায় দুই ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ অঞ্চলের দেইর আল-বালাহ এলাকায় বোমায় নিহত হয়েছেন আরও একজন। এরই মধ্যে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার আবাসিক ভবনগুলোয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে আগুন দিচ্ছেন ইসরায়েলি সেনারা।

এদিকে উত্তরাঞ্চলের বেইত লাহিয়া এলাকার একটি স্কুলে গণকবরে প্রায় ৩০টি মরদেহ পাওয়া গেছে। সেখানে পাওয়া হাতকড়া পরানো ও চোখ বাঁধা মরদেহগুলো ‘যু্দ্ধাপরাধের’ প্রমাণ বলে মন্তব্য করেছেন ফিলিস্তিনি মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবী ডায়ানা বুটু।

ইসরায়েলের এই অব্যাহত হামলা ও নৃশংসতার মুখে ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন গাজার ১৯ লাখ বাসিন্দা। তাঁদের বেশির ভাগই গাজার দক্ষিণে রাফা সীমান্ত এলাকায় নানা আশ্রয়শিবিরে চরম মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা মাইকেল রায়ান গত বুধবার বলেন, ত্রাণের অভাবে গাজার মানুষেরা ক্ষুধায় কাতর হয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।

গাজায় শান্তির আহ্বান গুতেরেসের

গাজায় শান্তির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘অনেক দেরি হওয়ার আগেই এ অঞ্চলকে আরও সহিংসতায় জড়িয়ে পড়া থেকে আমাদের রক্ষা করতে হবে।’ ফিলিস্তিনিদের অধিকারবিষয়ক এক কমিটির বৈঠকে গতকাল বুধবার এমন আহ্বান জানান তিনি।

এ সময় অধিকৃত পশ্চিম তীর প্রসঙ্গে গুতেরেস বলেন, ‘আমরা গাজার মানুষের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মোকাবিলায় কাজ করছি। একই সঙ্গে পূর্ব জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীরে দিন দিন খারাপ হতে থাকা পরিস্থিতির দিকেও নজর রেখে চলেছি। পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারীদের ব্যাপক সহিংসতায় আমি খুবই শঙ্কিত।’

জাতিসংঘ মহাসচিবের এমন আহ্বানের পর আজও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি অভিযান ও ধরপাকড়ের ঘটনা ঘটেছে। ওয়াফার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এদিন পূর্ব জেরুজালেমে পবিত্র আল-আকসা মসজিদে ইসরায়েলি পুলিশের ছত্রচ্ছায়ায় হামলা চালিয়েছেন বসতি স্থাপনকারীরা।

যুদ্ধবিরতির তৎপরতা

গাজায় নতুন করে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির লক্ষ্যে কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় জোর তৎপরতা চলছে। আজ এ নিয়ে আলোচনা করতে হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়ার মিসরের রাজধানী কায়রোয় যাওয়ার কথা ছিল।

যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে মধ্যস্থতাকারীরা প্যারিসে আলোচনার পর ইসরায়েলের সঙ্গে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতিসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে হামাস।

হামাসের একটি সূত্র এএফপিকে বলেছে, এ যুদ্ধবিরতির জন্য তিন ধাপের পরিকল্পনা আছে। শুরুতে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে গাজা উপত্যকার মানুষদের জন্য আরও বেশি করে ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। ওই পর্যায়ে শুধু হামাসের হাতে আটক থাকা নারী, শিশু ও ষাটোর্ধ্ব অসুস্থ ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়া হবে। বিনিময়ে ইসরায়েল থেকে কিছুসংখ্যক ফিলিস্তিনি কারাবন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে।