ফিলিস্তিনের গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাতে আজ শুক্রবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব তুলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে রাশিয়া ও চীনের ভেটোতে প্রস্তাবটি পাস হয়নি।
অবিলম্বে গাজায় অন্তত ছয় সপ্তাহের জন্য যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানোর বিষয়টি তুলে প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, এটা হলে গাজার বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের সুরক্ষা ও ত্রাণসহায়তা পাঠানো যাবে। তবে চীন ও রাশিয়া বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের তোলা এ প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতির বিষয়েই রয়েছে অস্পষ্টতা। এ প্রস্তাব পাস হলে ইসরায়েল আরও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর ক্ষমতা পাবে। তাই এ প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে তারা।
গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আজ তোলা যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রস্তাব তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। কারণ, গত পাঁচ মাসে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর টানা হামলায় ৩২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হলেও যুক্তরাষ্ট্র ‘যুদ্ধবিরতি’ শব্দটি এড়িয়ে আসছিল। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বানসহ গাজায় যুদ্ধ বন্ধে নানা পদক্ষেপেও ভেটো দিয়েছে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, ‘পরিষদের অধিকাংশ সদস্যরাষ্ট্রই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও দুর্ভাগ্যবশত রাশিয়া ও চীনে এতে ভেটো দিল।’ ভোটাভুটির আগে তিনি বলেন, আজ এ প্রস্তাব গৃহীত না হলে সেটা হবে একটি ‘ঐতিহাসিক ভুল’।
ভোটাভুটির আগে যুক্তরাষ্ট্রের তোলা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে কথা বলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া। এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট না দিতে সদস্যদের আহ্বান জানান তিনি।
ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রস্তাব অতিশয় রাজনৈতিক এবং প্রস্তাবটিতে কার্যত ইসরায়েলকে গাজার রাফায় হামলা চালানোর ব্যাপারে ‘সবুজ সংকেত’ দেওয়ার বিষয়টি রয়েছে।
গাজার সর্বদক্ষিণে মিসর সীমান্তবর্তী একটি এলাকা রাফা। ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার মুখে অবরুদ্ধ উপত্যকাটির ২৩ লাখ ফিলিস্তিনির অর্ধেকের বেশি সেখানে ঠাঁই নিয়েছেন। রাফাতে অভিযান চালানোর হুমকি দিচ্ছে ইসরায়েল। যদিও যুক্তরাষ্ট্রসহ সবাই এর বিরোধিতা করে আসছে।
রুশ রাষ্ট্রদূত নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, এই প্রস্তাব পাস হলে যা ইচ্ছা তা–ই করার অবাধ ক্ষমতা পাবে ইসরায়েল। এ ছাড়া এর ফলে আরও ধ্বংসযজ্ঞ ও উচ্ছেদ দেখতে হবে হবে পুরো গাজাকে।
ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রস্তাবের বিকল্প হিসেবে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী কিছু সদস্যরাষ্ট্র একটি খসড়া প্রস্তাব দিয়েছে। খসড়া এই প্রস্তাব একপেশে নয়। এতে দুই দিকেই ভারসাম্য রাখা হয়েছে। ফলে এই প্রস্তাবে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর সমর্থন না দেওয়ার কারণ দেখছেন না।
এদিকে জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জুন বলেছেন, যুদ্ধবিরতির কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রস্তাব তোলা হলেও যুদ্ধবিরতির বিষয়েই রয়েছে ফাঁকি। তাই তাঁর দেশ এতে ভেটো দিয়েছে।
চীনা রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জুন বলেন, প্রস্তাবের মূল বিষয় যেটি হওয়া উচিত, সেই যুদ্ধবিরতির বিষয়টি এসেছে অস্পষ্টভাবে। এমনকি স্বল্প মেয়াদে যুদ্ধবিরতি চাওয়া হয়েছে কি না, সে প্রশ্নেরও উত্তর নেই।
বিকল্প যে খসড়া প্রস্তাবটি তোলা হয়েছে, বেইজিং তাতেই সমর্থন দিয়েছে বলে জানান ঝ্যাং জুন।