গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৩৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন সাড়ে ৮৫ হাজারের বেশি
গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৩৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন সাড়ে ৮৫ হাজারের বেশি

জাতিসংঘের প্রতিবেদন: গাজায় হামলায় যুদ্ধাপরাধ করেছে ইসরায়েল

গাজা যুদ্ধ নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার পর্ষদের একটি তদন্ত প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান হামলায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে ইসরায়েল। একই সঙ্গে গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে চালানো হামলায় যুদ্ধাপরাধ করেছে হামাসসহ ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠনগুলোও। জাতিসংঘের মানবাধিকার পর্ষদের এক তদন্ত প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

গতকাল বুধবার জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পর্ষদের অধিবেশনে গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় সংঘটিত ঘটনা নিয়ে ওই প্রতিবেদনের ওপর আলোচনা হয়। এ-সংক্রান্ত তদন্তে বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দায়ী।

অধিবেশনে পর্ষদের চেয়ারপারসন নাভি পিল্লাই বলেন, ইসরায়েল জোর করে গাজার প্রায় পুরো জনগোষ্ঠীকে ছোট আবদ্ধ এলাকায় ঠেলে দিয়েছে, যা অনিরাপদ এবং বসবাসের অযোগ্য। তিনি আরও বলেন, ‘ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসক্ষমতার অস্ত্রের উদ্দেশ্যমূলক ব্যবহার দৃশ্যত বেসামরিক জনগোষ্ঠীর ওপর ইচ্ছাকৃত ও সরাসরি হামলাই ছিল।’

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার সময় হামাসসহ অন্য ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠনগুলোর যোদ্ধারাও যুদ্ধাপরাধ করেছে বলে জানান নাভি পিল্লাই।

এদিকে গাজায় আবারও শরণার্থীদের তাঁবুতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। নিরাপদ ঘোষিত আল-মাওয়াসি এলাকায় চালানো এ হামলায় কমপক্ষে সাতজন নিহত হয়েছেন। রাতে যখন এ হামলা চালানো হয়, তখন এসব তাঁবুতে ঘুমিয়ে ছিল শিশুরা।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭১ জন। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ৩৭ হাজার ৩৯৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন সাড়ে ৮৫ হাজারের বেশি।

লেবাননে ‘সর্বাত্মক হামলার’ প্রস্ততি

লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ইসরায়েল। এ-সংক্রান্ত পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে দেশটির সামরিক বাহিনী। ইসরায়েলের বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা এ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

হিজবুল্লাহ ইসরায়েলি বন্দরনগরী হাইফার ড্রোনে ধারণ করা একটি ভিডিও প্রচার করে। এরপর গত মঙ্গলবার দিনের শেষ দিকে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ ও সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।

গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর লেবানন সীমান্তে ইসরায়েলি বাহিনী ও হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটছে। তবে এ সংঘাত এখন সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নিতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইসরায়েল ও লেবানন সীমান্তের উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা আমোস হোচস্টেইনকে ইসরায়েল ও লেবাননে পাঠান।

হিজবুল্লাহর প্রচার করা ভিডিওটি দিনের বেলায় ধারণ করা হয়েছিল। ৯ মিনিটের এই ভিডিওতে সামরিক-বেসামরিক স্থাপনাগুলোর অবস্থান দেখানো হয়। এর মধ্যে আছে অস্ত্র উৎপাদন কারখানা ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা থেকে শুরু করে শপিংমল ও আবাসিক এলাকার চিত্র।

এ ভিডিও প্রচারের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট দেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাৎজ। তিনি বলেন, ‘আমরা লেবানন ও হিজবুল্লাহর বিষয়ে আমাদের অবস্থান পরিবর্তনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দ্বারপ্রান্তে রয়েছি। একটি সর্বাত্মক যুদ্ধে হিজবুল্লাহ ধ্বংস হয়ে যাবে আর লেবানন ব্যাপক হামলার মুখে পড়বে।’

এরপর এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তে স্থল অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন সামরিক বাহিনীর নর্দান কমান্ডের প্রধান অরি গর্ডিন।