কাতারের টেলিভিশন চ্যানেল আল–জাজিরাসহ কয়েকটি বিদেশি সংবাদমাধ্যমের সম্প্রচার বন্ধে সরকারকে ক্ষমতা দিয়ে একটি আইন অনুমোদন করেছে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট।
ইতিমধ্যে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, আল–জাজিরার আঞ্চলিক কার্যালয় বন্ধে তিনি ‘দ্রুত ব্যবস্থা’ নেবেন।
ইসরায়েলের এ পদক্ষেপে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ফিলিস্তিনের গাজায় বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশ ইসরায়েলের তরফে নিষিদ্ধ।
অবরুদ্ধ ও নরকপুরীতে পরিণত হওয়া এ উপত্যকা থেকে হাতে গোনা যে কয়েকজন সাংবাদিক যুদ্ধের খবর সংগ্রহ করতে পারছেন, আল–জাজিরার স্থানীয় কর্মীরা তাঁদের কয়েকজন।
ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেট বিলটি অনুমোদন করায় এখন সরকার যেসব বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে বিবেচনা করবে, সেসব ‘সাময়িকভাবে’ নিষিদ্ধ করার অনুমতি পাবে।
ইসরায়েল থেকে আল–জাজিরা আর সম্প্রচার চালাতে পারবে না।—বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী
এ আইনের আওতায় ইসরায়েলে বিদেশি সংবাদমাধ্যমের সম্প্রচার একই সময় ৪৫ দিন পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা যাবে। তবে এ মেয়াদ নবায়নযোগ্য। আগামী জুলাই পর্যন্ত কিংবা গাজায় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় লড়াই শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
আল–জাজিরার সম্প্রচার বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘ইসরায়েল থেকে আল–জাজিরা আর তাদের সম্প্রচার চালাতে পারবে না।’ এই সম্প্রচার নেটওয়ার্ককে ‘সন্ত্রাসী চ্যানেল’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেন তিনি।
কয়েক বছর ধরেই ইসরায়েলি কর্মকর্তারা আল–জাজিরাকে ‘ইসরায়েলবিরোধী পক্ষপাতদুষ্ট’ চ্যানেল বলে অভিযুক্ত করে আসছিলেন। গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালানোর পর টেলিভিশন চ্যানেলটির বিরুদ্ধে তাঁদের এ সমালোচনা জোরাল হয়েছে। ইসরায়েলের দাবি, হামাসের সঙ্গে আল–জাজিরার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। তবে সম্প্রচারমাধ্যমটি এ দাবি দৃঢ়ভাবে নাকচ করে।
অবরুদ্ধ ও রক্তাক্ত উপত্যকা গাজা থেকে হাতে গোনা যে কয়েকজন সাংবাদিক যুদ্ধের খবর সংগ্রহ করতে পারছেন, আল–জাজিরার স্থানীয় কর্মীরা তাঁদের কয়েকজন।
এদিকে আল–জাজিরা এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আল–জাজিরা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর নেতানিয়াহু তাঁর চলমান আক্রমণকে কোনোভাবেই যৌক্তিক বলে বিশ্বের সামনে হাজির করতে পারবেন না। তবে যা পারবেন তা হলো, এই সম্প্রচার নেটওয়ার্ক ও এর কর্মীদের অধিকারের বিরুদ্ধে নতুন নতুন মিথ্যা তথ্য ও উসকানিমূলক বক্তব্য হাজির করতে।’
কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেলটি আরও বলেছে, নেতানিয়াহুর উসকানিমূলক বক্তব্য এবং অপমানজনক ভাষায় মিথ্যা অভিযোগের পর বিশ্বজুড়ে আল–জাজিরার কর্মী ও এর কার্যালয়ের নিরাপত্তার জন্য তাঁকে দায়ী করবে আল–জাজিরা। চ্যানেলটি তাদের কর্মীদের উদ্দেশ্যমূলকভাবে ইসরায়েল নিশানা বানাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে।
সম্প্রতি গাজায় ইসরায়েলের হামলায় যেসব সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন হামজা আল দাহদুহ। তিনি গাজায় আল–জাজিরার ব্যুরো প্রধান ওয়ায়েল আল দাহদুহের ছেলে। তবে ইসরায়েল সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু বানানোর কথা অস্বীকার করেছে।