ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার দক্ষিণে চার এলাকা থেকে এবার বাসিন্দাদের সরে যেতে বলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে করে চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন এলাকাগুলোর বাসিন্দারা। সেখানে গত বুধবার রাতভর তীব্র বোমাবর্ষণও করা হয়েছে। অথচ দক্ষিণ গাজাকেই এত দিন বেসামরিক লোকজনের জন্য ‘নিরাপদ’ বলে অভিহিত করে আসছিল ইসরায়েলি বাহিনী।
আজ বৃহস্পতিবার দক্ষিণ গাজার বনি শুহাইলা, খুজা, আবাসান ও কারারা এলাকায় আকাশ থেকে লিফলেট ফেলেছে ইসরায়েল। তাতে লেখা ছিল, ‘নিজেদের নিরাপত্তার জন্য ঘরবাড়ি থেকে দ্রুত আপনাদের সরে যেতে হবে। আপনারা পরিচিত আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর দিকে যাত্রা শুরু করুন।’ লিফলেট পাওয়া এলাকা চারটি খান ইউনিস এলাকার পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত।
এই চার এলাকায় এক লাখের বেশি মানুষের বসবাস। এ ছাড়া ইসরায়েলের হুমকিতে উত্তর গাজা থেকে পালিয়ে আসা হাজার হাজার ফিলিস্তিনি সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। গত অক্টোবরের শেষের দিকে উত্তর গাজায় স্থল অভিযান শুরুর আগে সেখান থেকে বাসিন্দাদের সরে যেতে বলেছিল ইসরায়েলি বাহিনী। জাতিসংঘের তথ্য, গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার দুই–তৃতীয়াংশই ভিটেমাটিছাড়া হয়েছেন।
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলার পর গাজায় অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে উপত্যকাটিতে সাড়ে ১১ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা উত্তর গাজার বাসিন্দাদের। স্থল অভিযান শুরুর পর ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংসতা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না সেখানকার হাসপাতালগুলোও। গাজায় ইসরায়েলি হামলার আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেছে কাতার।
আল-শিফা হাসপাতালে তল্লাশি অব্যাহত
আজ উত্তর গাজায় অবস্থিত উপত্যকাটির সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল–শিফায় তল্লাশি চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখানে জ্বালানি, অক্সিজেনসহ জরুরি নানা পণ্য ছাড়া আটকে রয়েছেন শতাধিক রোগী ও আশ্রয় নেওয়া হাজার হাজার বেসামরিক লোক। হাসপাতালটির চিকিৎসাকর্মীরা সম্প্রতি জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনী হাসপাতালটি ঘেরাও করে রাখার ফলে সেখানে কয়েক ডজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ইনকিউবেটরে থাকা তিনটি নবজাতকও রয়েছে।
আল–শিফা হাসপাতাল অবরুদ্ধ করার কারণ হিসেবে ইসরায়েলের দাবি, হাসপাতালটির নিচে সুড়ঙ্গে হামাসের প্রধান কার্যালয় রয়েছে। তবে হাসপাতালটিতে প্রবেশের দ্বিতীয় দিনেও এর সপক্ষে বড় কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি তারা। আজ হাসপাতালের ভেতরে এক ইসরায়েলি সেনার করা একটি ভিডিওতে সেখান থেকে কয়েকটি অস্ত্র উদ্ধার করতে দেখা গেছে। ভিডিও ভুয়া বলে দাবি হামাসের।
এরই মধ্যে আজ ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, যুদ্ধের পর গাজায় হামাসের পুনরায় সক্রিয় হওয়া ঠেকাতে সেখানে ইসরায়েলের ‘একটি শক্তিশালী বাহিনী’ মোতায়েন রাখা প্রয়োজন। তবে গতকাল বুধবারই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, গাজা দখল করা ইসরায়েলের জন্য ‘বড় একটি ভুল’ হবে। এদিকে বাইডেন বলেছেন, তিনি নেতানিয়াহুকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, দ্বিরাষ্ট্রিক সমাধানই সংকটের একমাত্র উপায়।