ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধে মানবিক বিরতি এবং আরও বেশি মানবিক করিডর গঠনে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। তবে ইসরায়েল এ প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলি দূত গিলাড এরডান বলেছেন, প্রস্তাবটি বাস্তবসম্মত নয়।
তবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত প্রস্তাব ইসরায়েলের নাকচ করার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময় ইসরায়েল একই কাজ করেছে। সংক্ষেপে সেসব ঘটনা জেনে নিই—
আরব–ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হয় ১৯৬৭ সালে। ওই বছর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলের দখলদারত্বের সমালোচনা করে একাধিক প্রস্তাব পাস হয়েছিল। এসব প্রস্তাবের একটিও আমলে নেয়নি ইসরায়েল। কয়েক ডজনের বেশি প্রস্তাব মানতে ওই সময় দেশটি অস্বীকৃতি জানায়।
রাফাহ শরণার্থীশিবিরে ২০০৪ সালে একের পর এক ফিলিস্তিনি বসতি ধ্বংস করতে শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এই কার্যক্রমের সমালোচনা করে তা বন্ধ করতে নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব পাস হয়, কিন্তু তা ইসরায়েল শোনেনি। বসতি ধ্বংসের কার্যক্রম চালিয়ে যায় দেশটি। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব পাসের পরবর্তী সাত দিনে রাফাহ শরণার্থীশিবিরে ১৬৭টি ভবন গুঁড়িয়ে দেয় ইসরায়েল।
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের হামলা বন্ধ ও অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকরে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব পাস হয়। কিন্তু তখনকার ইসরায়েলি প্রশাসন তা মানতে অস্বীকৃতি জানায়। নির্বিচার হামলা অব্যাহত রাখায় তখনকার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্টের প্রতি হতাশা প্রকাশ করেন জাতিসংঘের মহাসচিবের দায়িত্বে থাকা বান কি মুন।
সময়টা ২০১৬ সাল। অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের বসতি স্থাপনের প্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব পাস হয়। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার প্রস্তাবটির শর্ত মানতে অস্বীকৃতি জানায়। প্রস্তাবটির পক্ষে সমর্থন জানানোয় সেনেগাল ও নিউজিল্যান্ড থেকে রাষ্ট্রদূত ফিরিয়ে নেয় ইসরায়েল।
গাজায় চলমান যুদ্ধে মানবিক বিরতি এবং আরও বেশি মানবিক করিডর গঠনের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব তোলে মাল্টা। গতকাল বুধবারের ভোটাভুটির পর প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে প্রস্তাবটির পক্ষে ১২টি দেশ ভোট দেয়। ভোটদানে বিরত ছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং রাশিয়া।
প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ার পরপরই নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া ভাষণে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলি দূত গিলাড এরডান বলেন, ইসরায়েল এ প্রস্তাব মানবে না। তাঁর দাবি, গাজায় মানবিক পরিস্থিতির উন্নয়নে ইসরায়েল এমনিতেই সাধ্যমতো সবকিছু করছে।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালায়। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। যদিও শুরুতে এ সংখ্যা ১ হাজার ৪০০ বলে দাবি করেছিল দেশটি। এ ছাড়া ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি করে রেখেছে বলে ইসরায়েল দাবি করে আসছে।
হামাসের হামলার জবাবে ওই দিনই গাজায় ব্যাপক পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। নির্বিচার ও বিরামহীন হামলায় গাজায় ১১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এর বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
অবরুদ্ধ গাজায় দেখা দিয়েছে চরম মানবিক সংকট। পাশাপাশি চলছে একের পর এক হামলা। ইসরায়েলি বোমার আঘাত থেকে বিদ্যালয়, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স, শরণার্থীশিবির—কিছুই বাদ যাচ্ছে না।