লেবাননে সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে ইসরায়েলই পেজারগুলোর (যোগাযোগযন্ত্র) ভেতর বিস্ফোরক লুকিয়ে রেখেছিল। গতকাল মঙ্গলবার বিস্ফোরণ ঘটানোর মধ্য দিয়ে অভিযানটি চালিয়েছে তারা। নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কয়েকজন মার্কিন ও অন্য কর্মকর্তা অভিযান সম্পর্কে এমন তথ্য প্রকাশ করেছেন।
গতকাল লেবাননজুড়ে ব্যবহৃত পেজারগুলোয় বিস্ফোরণ হয়। পেজার একধরনের ছোট যন্ত্র, যা সাধারণত হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করেন। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, পেজার বিস্ফোরণে অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২ হাজার ৭০০ জনের বেশি।
নিউইয়র্ক টাইমস যেসব কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে, তাঁদের কয়েকজন বলেন, তাইওয়ানের গোল্ড অ্যাপোলো কোম্পানি থেকে পেজারগুলো কিনেছিল হিজবুল্লাহ। তবে লেবাননে পৌঁছানোর আগেই সেগুলোতে গড়বড় করে দেওয়া হয়েছিল। পেজারগুলোর বেশির ভাগই ছিল কোম্পানির এপি৯২৪ মডেলের। তবে গোল্ড অ্যাপোলোর আরও তিনটি মডেলের পেজারও ওই চালানে ছিল।
ওই কর্মকর্তাদের দুজন বলেন, প্রতিটি পেজারের ব্যাটারির পাশে এক থেকে দুই আউন্স পরিমাণ বিস্ফোরক রেখে দেওয়া হয়েছিল। দূর থেকে যেন তা বিস্ফোরিত করা যায়, তা নিশ্চিত করতে সেখানে একটি সুইচও লাগিয়ে দেওয়া হয়।
দুই কর্মকর্তা বলেন, লেবাননে বেলা ৩টা ৩০ মিনিটের দিকে পেজারগুলোয় একটি বার্তা এসেছিল। দেখে মনে হচ্ছিল, বার্তাটি হিজবুল্লাহর নেতার কাছ থেকে এসেছে। আসলে ওই বার্তা বিস্ফোরকগুলোকে সক্রিয় করে তুলেছিল।
তিনজন কর্মকর্তার মতে, বিস্ফোরণের আগে কয়েক সেকেন্ডের জন্য যন্ত্রগুলোয় যেন সংকেত (বিপ) বেজে ওঠে, সে রকম করে তা ঠিক করা হয়েছিল।
গতকালের এ হামলার পরিকল্পনার জন্য হিজবুল্লাহ ইসরায়েলকে দায়ী করেছে। তবে এ অভিযান সম্পর্কে তাদের ধারণা কী, সে সম্পর্কে খুব একটা বিস্তারিত বলা হয়নি। ইসরায়েল হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। এর পেছনে নিজেদের দায়ও স্বীকার করেনি তারা।
মার্কিন এবং অন্য কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই অভিযানের স্পর্শকাতর বিষয়গুলো জানিয়েছেন।
হামলার ফুটেজ খতিয়ে দেখে সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক স্বাধীন ধারার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিস্ফোরক উপকরণের কারণেই যে ওই বিস্ফোরণ হয়েছে, তা নিশ্চিত।
সফটওয়্যার কোম্পানি উইথসিকিউরের গবেষণা বিশেষজ্ঞ এবং ইউরোপোলের সাইবার অপরাধবিষয়ক উপদেষ্টা মিকো হাইপোনেন বলেন, ‘এ ধরনের বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য এই পেজারগুলোয় সম্ভবত কোনো উপায়ে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। বিস্ফোরণের আকার এবং শক্তি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে এটি কেবল ব্যাটারিজনিত বিস্ফোরণ ছিল না।’
একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, তাইওয়ানের গোল্ড অ্যাপোলো কোম্পানি থেকে তিন হাজারেরও বেশি পেজার কেনা হয়েছিল। হিজবুল্লাহ পুরো লেবাননে তাদের সদস্যদের কাছে পেজারগুলো বিতরণ করেছিল। কিছুসংখ্যক পেজার ইরান ও সিরিয়ায় হিজবুল্লাহর মিত্রদের কাছেও পৌঁছেছিল। যে পেজারগুলো চালু ছিল এবং বার্তা গ্রহণ করছিল, সেগুলোই ইসরায়েলের হামলার সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কয়েকজন কর্মকর্তা ও নিরাপত্তাবিশেষজ্ঞ বলেছেন, চলতি বছরের শুরুর দিকে হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নসরুল্লাহ যোগাযোগের ক্ষেত্রে সেলফোনের ব্যবহার কঠোরভাবে সীমিত করেছিলেন। কারণ, তিনি মনে করেন, সেলফোনে ইসরায়েলি নজরদারি হওয়ার ঝুঁকি আছে।
আল–জাজিরার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, নসরুল্লাহর ওই আদেশের পর হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা যোগাযোগের জন্য পেজার প্রযুক্তি ব্যবহার করতেন।
কখন ওই পেজারগুলো অর্ডার করা হয়েছে এবং কখন সেগুলো লেবাননে পৌঁছেছে, সে সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।