ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের কাছে নিজের পদত্যাগপত্র হস্তান্তর করছেন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শতায়েহ (বাঁয়ে)। রামাল্লা, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের কাছে নিজের পদত্যাগপত্র হস্তান্তর করছেন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শতায়েহ (বাঁয়ে)। রামাল্লা, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ইসরায়েলকে মোকাবিলায় ‘ঐক্যবদ্ধ’ হওয়ার কৌশল খুঁজছে হামাস ও ফাতাহ

ইসরায়েলকে মোকাবিলায় ফিলিস্তিনের ফাতাহ ও গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস নিজেদের মধ্যে ‘একতাবদ্ধ হওয়ার পদক্ষেপ’ খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

রাশিয়ায় ওই দুই পক্ষের প্রতিনিধিদের মধ্যে এক বৈঠকের পর গতকাল শুক্রবার এ তথ্য জানানো হয়।

গাজায় ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধ ও যুদ্ধপরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে গত বৃহস্পতিবার মস্কোয় অনুষ্ঠিত হয় এ বৈঠক। এতে ইসলামিক জিহাদসহ অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরাও অংশ নেন।

গত সোমবার ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শতায়েহ প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের কাছে পদত্যাগপত্র পেশ করেন। এ ঘটনার পর মস্কোয় ফাতাহ ও হামাস প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হলো।

মোহাম্মদ শতায়েহ ফিলিস্তিনের দল-উপদলগুলোর মধ্যে মতৈক্যের আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিছু বিশ্লেষক বলেন, তাঁর এ পদত্যাগের মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনে একটি টেকনোক্র্যাট সরকার প্রতিষ্ঠার পথ খুলতে পারে; যা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শেষে ফাতাহনিয়ন্ত্রিত পশ্চিম তীর ও হামাসশাসিত গাজার শাসন পরিচালনা করবে।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত ইস্যুতে সাম্প্রতিক সময়ে মস্কো ফাতাহ-হামাসসহ সব ফিলিস্তিনি পক্ষের সঙ্গে একটা সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা চালিয়ে আসছে।

আরব ও পশ্চিমা নেতারাও ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের মধ্যে সংস্কার আনতে চাপ দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনের সম্ভাব্য পুনর্গঠন প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনা করছেন।

বৈঠক শেষে ফাতাহ ও হামাসের প্রতিনিধিরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, তাঁরা যাতে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) ব্যানারে আসতে পারেন, সে লক্ষ্যে একটি সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গত বৃহস্পতিবারের ‘গঠনমূলক’ আলোচনায় প্রতিনিধিরা গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের বের করে দেওয়া ও একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রগঠনের প্রয়োজনীয়তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে একমত হয়েছেন।

হামাস ও ইসলামিক জিহাদকে পশ্চিমা কিছু দেশ সন্ত্রাসী সংগঠন বলে আখ্যায়িত করে থাকে। তবে পশ্চিম তীরে শাসন পরিচালনাকারী ফাতাহকে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

হামাসকে পিএলওর অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চালানো আলোচনা এ পর্যন্ত সাফল্যের মুখ দেখেনি। ২০০৭ সালে গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে উৎখাত করে হামাস। এরপর পশ্চিম তীরে ফাতাহর কার্যক্রম সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত ইস্যুতে সাম্প্রতিক সময়ে মস্কো ফাতাহ-হামাসসহ সব ফিলিস্তিনি পক্ষের সঙ্গে একটা সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা চালিয়ে আসছে।

অন্যদিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলার সমালোচনা, ইউক্রেনে মস্কোর চলমান অভিযান ও ইরানের সঙ্গে ক্রেমলিনের ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েলের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক বাধায় পড়েছে।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। হামলায় ১ হাজার ২০০ জনের মতো নিহত হন। এ সময় আরও ২৫৩ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা।

এ ঘটনার পাল্টা জবাবে ওই দিন থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। তাদের নারকীয় হামলায় এখন পর্যন্ত ৩০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে ধ্বংস হয়ে গেছে গাজার অর্ধেকের বেশি বাড়িঘরসহ অন্যান্য স্থাপনা।

আরও পড়ুন:

গাজায় ত্রাণ সংগ্রহে জড়ো হওয়া মানুষের ওপর হামলার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দা