ইরানে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে অন্তত ৩৫৪ ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) গতকাল সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে।
ইরান হিউম্যান রাইটস বলছে, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ইরানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের হার অনেক বেশি।
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর অভিযোগ, কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানে গত সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে সমাজে ভীতি ছড়াতে দেশটির কর্তৃপক্ষ মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছে।
গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানের নীতি পুলিশের হেফাজতে মারা যান ২২ বছরের তরুণী মাসা। দেশটির কঠোর হিজাবনীতি না মানার অভিযোগে এর তিন দিন আগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
মাসার মৃত্যুতে ইরানজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। কয়েক মাস ধরে চলা এ বিক্ষোভে কয়েক শ ব্যক্তি নিহত হন। হাজারো বিক্ষোভকারীকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে দেশটি।
ইরান হিউম্যান রাইটস বলেছে, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে ইরানে কমপক্ষে ৩৫৪ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। ২০২২ সালের একই সময়কালে এ সংখ্যা ছিল ২৬১। অর্থাৎ, চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ইরানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের হার ৩৬ শতাংশ বেশি।
মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, এ বছরের প্রথম ছয় মাসে মাদকসংক্রান্ত অভিযোগে ২০৬ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তা ১২৬ শতাংশ বেশি।
ইরান হিউম্যান রাইটসের তথ্যমতে, ছয় মাসে যাঁদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ছয়জন ছিলেন নারী। এ ছাড়া দুজন পুরুষকে প্রকাশ্যে ফাঁসি দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
ইরান হিউম্যান রাইটসের পরিচালক মাহমুদ আমিরি-মোগাদ্দাম বলেন, সামাজিক ভীতি তৈরির পাশাপাশি আরও বিক্ষোভ-প্রতিবাদ রুখতে ইরানের কর্তৃপক্ষ মৃত্যুদণ্ডকে ব্যবহার করছে।
ইরানি কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত বিক্ষোভ-সম্পর্কিত ঘটনায় সাতজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো সতর্ক করে বলেছে, বিক্ষোভের ঘটনায় গ্রেপ্তার আরও অন্তত সাতজন মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঝুঁকিতে রয়েছেন।
চলতি বছরের শুরুর দিকে ইরান হিউম্যান রাইটস জানিয়েছিল, ইরানে ২০২২ সালে ৫৮২ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এই সংখ্যা ২০১৫ সালের পর সর্বোচ্চ।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্যমতে, চীনের পর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ইরানে।