হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর আগামীকাল শুক্রবার অনেকটা নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে যাচ্ছেন ইরানের জনগণ। ধারণা করা হচ্ছে, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ কেউ এই নির্বাচনে জয় পাবেন। অর্থাৎ এ নির্বাচনের ফল খামেনির উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করবে।
খামেনির বর্তমান বয়স ৮৫ বছর। ধারণা করা হচ্ছে, যিনি ইরানের প্রেসিডেন্ট হবেন, তিনি পরবর্তী সময়ে খামেনির উত্তরসূরি নির্বাচনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকবেন। এবারের নির্বাচনের আগে খামেনি তাই প্রার্থী হিসেবে তাঁর রক্ষণশীল ধারণা পোষণ করে এমন ব্যক্তিদের আধিপত্য নিশ্চিত করেছেন।
ইরানের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন ইসরায়েল-হামাস দ্বন্দ্বের কারণে আঞ্চলিক উত্তেজনা চলছে। এ ছাড়া ইরানের দ্রুত অগ্রসরমাণ পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধে পশ্চিমা চাপ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দেশটির ভেতরে অসন্তোষ বাড়ছে। তবে কট্টর পশ্চিমা বিরোধী খামেনির উত্তরসূরি বাছাই নিয়ে ইরানের ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ বেশি।
এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ছয়জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনই রক্ষণশীল ও একজন মধ্যপন্থী। দেশটিতে নির্বাচন-সংক্রান্ত বিষয় দেখভালের দায়িত্বে থাকা খামেনি-ঘনিষ্ঠ গার্ডিয়ান কাউন্সিল তাঁদের অনুমোদন দিয়েছে। তাঁরা হলেন পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফ, পরমাণু কর্মসূচিবিষয়ক সাবেক মধ্যস্থতাকারী সাইদ জালিলি, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তফা পোউর মোহাম্মাদি, তেহরানের মেয়র আলী রেজা জাকানি, বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট আমির হোসেইন গাজিজাদেহ হাশেমি ও পার্লামেন্ট সদস্য মাসুদ পেজেশকিয়ান। এই ছয়জনের মধ্যে মাসুদ পেজেশকিয়ান ছাড়া সবাই রক্ষণশীল বলয়ের।
খামেনির পক্ষ থেকে অবশ্য এখনো জনসম্মুখে কোনো প্রার্থীকে সমর্থনের কথা জানানো হয়নি। তবে গত মঙ্গলবার টেলিভিশনে দেওয়া এক বক্তৃতায় খামেনি বলেন, ‘যিনি মনে করেন আমেরিকার আনুকূল্য ছাড়া কিছুই করা যাবে না, তিনি দেশটা ভালোভাবে পরিচালনা করতে পারবেন না।’
দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে বলা হয়, খামেনির উপদেষ্টা ও দেশটির রেভল্যুশনারি গার্ডসের সাবেক প্রধান ইয়াহিয়া রহিম সাফাভি ভোটারদের এমন একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে আহ্বান জানান, যাঁর দৃষ্টিভঙ্গি খামেনির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না। তিনি বলেন, জনগণকে এমন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হবে, যিনি নিজেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা ভাববেন। তিনি বিভাজন সৃষ্টি করবেন না।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানের প্রেসিডেন্টের ভূমিকা বড় করে দেখা হলেও দেশের প্রকৃত ক্ষমতা থাকে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার হাতে। পররাষ্ট্র বা পারমাণবিক নীতি ও সরকারের বিভিন্ন শাখার নিয়ন্ত্রণ, সামরিক, গণমাধ্যম ও বিভিন্ন আর্থিক সম্পদের বিষয়ে তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেন।