ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের পাঁচ মাস হতে চলল। অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার বড় শিকার শিশুরা। গুলি-বোমার পাশাপাশি সেখানে শিশুরা মারা যাচ্ছে ক্ষুধা ও অপুষ্টিতেও। ত্রাণ বিতরণে ইসরায়েলের বাধার কারণে ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে গত কয়েক দিনে ১০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এ ছাড়া এই যুদ্ধে গাজায় নিহত ৩০ হাজার ফিলিস্তিনির এক-তৃতীয়াংশের বেশি শিশু।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার রাতে জানায়, পানিস্বল্পতা ও ক্ষুধায় উত্তর গাজার কামাল আদওয়ান হাসপাতালে আরও চার শিশু মারা গেছে। এ নিয়ে কয়েক দিনে ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে মারা যাওয়া শিশুর সংখ্যা ১০–এ গিয়ে ঠেকেছে।
এর আগে উত্তর গাজার আল-শিফা হাসপাতালে দুই শিশুর মৃত্যু হয় বলে গত বুধবার জানিয়েছিল গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর আগে একই কারণে কামাল আদওয়ান হাসপাতালে আরও চার শিশুর মৃত্যু হয়েছিল।
গত সপ্তাহে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, গাজার সব এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণসহায়তা না পৌঁছানো গেলে আসছে দিনগুলোয় দুর্ভিক্ষের কারণে হাজারো মানুষ মারা যেতে পারে।
বিবিসি রেডিও ফোর-কে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস, যুক্তরাজ্যের নির্বাহী পরিচালক নাটালি রবার্টস বলেছেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহে উত্তর গাজায় খুবই নগণ্যসংখ্যক ত্রাণবহর গেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। সেখানকার বাসিন্দারা খাওয়ার জন্য কিছু পাচ্ছেন না।’
গাজায় হামলার শুরু থেকেই ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিয়ে আসছে ইসরায়েল। গাজার ভেতরে ত্রাণ বিতরণের সময়ও কয়েক দফা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ভোরে গাজা নগরীর দক্ষিণে ত্রাণের জন্য অপেক্ষমাণ মানুষের ওপর ইসরায়েলের বিমান ও গোলা হামলায় ১১২ জন নিহত হন। আহত হয়েছেন ৭৫০ জনের বেশি।
এমন সময় এ হামলা চালানো হলো, যখন উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষ আসন্ন বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। বৈশ্বিক সংস্থাটি বলেছে, সেখানকার প্রায় তিন লাখ বাসিন্দা খাবার ও সুপেয় পানি পাচ্ছেন না বললেই চলে।
তবে মানবিক ত্রাণসহায়তা প্রদানে বাধা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে দেশটি।
ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থানবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ্পে লাজ্জারিনি জেরুজালেমে সাংবাদিকদের বলেন, জানুয়ারি থেকে গাজায় সার্বিকভাবে ত্রাণ সরবরাহের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ১৯৩ জন নিহত হয়েছেন বলে গতকাল শুক্রবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজার ২২৮–এ দাঁড়িয়েছে। নিহত ফিলিস্তিনিদের প্রায় সাড়ে ১২ হাজারই শিশু।
এ ছাড়া ইসরায়েলি হামলায় আহত হয়েছেন ৭১ হাজার ৩৭৭ জন। এ ছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন প্রায় আট হাজার। ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি ও স্থাপনার ধ্বংসস্তূপের নিচে তাঁদের মরদেহ পড়ে আছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার ত্রাণ নিতে জড়ো হওয়া ক্ষুধার্ত মানুষের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স, তুরস্ক, ইতালি, কলম্বিয়া, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ ও জাতিসংঘ নিন্দা জানিয়েছে।
এ ঘটনায় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনি গুতেরেস নিন্দা জানিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল এ ঘটনাকে ‘একেবারে অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এ ঘটনা হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধবিরতির আলোচনা জটিল করে তুলবে। এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে চীন। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। এ হামলার প্রতিবাদে ইসরায়েল থেকে অস্ত্র না কেনার ঘোষণা দিয়েছেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্র।
তুরস্ক বলছে, এ ঘটনার মধ্য দিয়ে ইসরায়েল আরেকটি মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার ওপর আবারও জোর দিয়েছে সৌদি আরব।