গাজায় ইসরায়েলের বিমান থেকে ফেলা বোমায় জ্বলছে ভবন। ফিলিস্তিন, ৯ অক্টোবর, ২০২৩
গাজায় ইসরায়েলের বিমান থেকে ফেলা বোমায় জ্বলছে ভবন। ফিলিস্তিন, ৯ অক্টোবর, ২০২৩

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলার শুনানি শুরু করছে আইসিজে

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলা আজ বৃহস্পতিবার ৯০তম দিনে গড়িয়েছে। তবে উপত্যকাটিতে ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংসতা কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। গাজায় দেশটির কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আদালতটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ১১ ও ১২ জানুয়ারি এ নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

আজ আইসিজে এক বিবৃতিতে বলেছে, নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে দুই দিন ধরে ওই শুনানি কার্যক্রম চলবে। ১১ তারিখ আদালতে নিজেদের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করবে দক্ষিণ আফ্রিকা। পরদিন ১২ জানুয়ারি এর বিরুদ্ধে যুক্তি তুলে ধরবে ইসরায়েল।

গত শুক্রবার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। মামলায় বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েল গাজার ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে, গণহত্যা চালাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও গণহত্যা চালানোর ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।’ একই সঙ্গে ইসরায়েল যেন উপত্যকাটিতে অবিলম্বে সামরিক অভিযান বন্ধ করে, সে নির্দেশ দিতে আইসিজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

দক্ষিণ আফ্রিকার তোলা সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল। এক্সে (সাবেক টুইটার) দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিওর হায়াত বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার তোলা ‘অপবাদ’ প্রত্যাখ্যান করছে ইসরায়েল। একই প্রতিক্রিয়া দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুরও। তিনি বলেছেন, গাজা যুদ্ধে ‘অনন্য এক নৈতিকতা’ দেখিয়েছে তাঁর দেশ।

জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আইনি সংস্থা আন্তর্জাতিক বিচার আদালত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠিত এই আদালত দুই দেশের মধ্যে বিরোধ মেটাতে পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন। আইসিজের দেওয়া সিদ্ধান্তগুলো মেনে চলার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে তা মানার জন্য কোনো দেশের ওপর খুব কম শক্তিই খাটাতে পারেন এই আদালত।

সমালোচনায় যুক্তরাষ্ট্র
আইসিজেতে দক্ষিণ আফ্রিকার তোলা অভিযোগগুলো মানতে নারাজ ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। দক্ষিণ আফ্রিকার করা মামলাটি নিয়ে সমালোচনা করে গতকাল বুধবার হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কারবি বলেছেন, ‘মামলাটি অযৌক্তিক, বিপরীতমুখী ও সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন।’

এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত (ইসরায়েলের) এমন কোনো কর্মকাণ্ড দেখিনি, যাকে গণহত্যা বলা যেতে পারে। গণহত্যা অবশ্যই জঘন্য একটি নৃশংসতা। তাই এই অভিযোগগুলো হালকা করা উচিত হবে না।’

গাজা যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সমর্থন জানানোয় দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত হয়েছে মার্কিন প্রশাসনের। এর আগে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল। এই যুদ্ধে ইউক্রেনের পক্ষে থাকা পশ্চিমা দেশগুলোর দলে ভেড়েনি দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটি গত বছর রাশিয়ায় এক জাহাজ সমরাস্ত্র পাঠিয়েছিল বলে অভিযোগ তুলেছিল যুক্তরাষ্ট্র।

আবার মধ্যপ্রাচ্য সফরে ব্লিঙ্কেন
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন আজ নতুন করে মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু করছেন। গত ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত শুরুর পর এটি মধ্যপ্রাচ্যে এককভাবে ব্লিঙ্কেনের চতুর্থ এবং ইসরায়েলে পঞ্চম সফর। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সফরকালেও তিনি সঙ্গী ছিলেন।

গাজায় চলমান যুদ্ধ আঞ্চলিকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার মধ্যে সংকটকালীন এ সফরে যাচ্ছেন ব্লিঙ্কেন। গত মঙ্গলবার লেবাননের বৈরুতের উপকণ্ঠে সম্ভাব্য ইসরায়েলি হামলায় শীর্ষস্থানীয় এক হামাস নেতা নিহত হন। এ ছাড়া লোহিত সাগরে পণ্যবাহী জাহাজে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের হামলার জেরে গাজা যুদ্ধ আঞ্চলিকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার গতকাল বলেন, এই সংঘাতের মাত্রা এখন যে অবস্থায় আছে, তা আরও ছড়িয়ে পড়লে তা কারও স্বার্থ হাসিল করবে না। এতে এ অঞ্চলের কোনো দেশ কিংবা বিশ্বের কোনো দেশেরই স্বার্থ হাসিল হবে না।

এক পরিবারের ১৪ সদস্য নিহত
এদিকে গাজায় নির্বিচার হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। উপত্যকার দক্ষিণে খান ইউনিসের পশ্চিমে আল-মাওয়াসি এলাকার একটি বাড়িতে গতকাল বুধবার রাতে হামলা চালানো হয়েছে। এতে এক পরিবারের ১৪ সদস্য নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু। খান ইউনিসে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্টের প্রধান কার্যালয়েও হামলা হয়েছে। এতে একজন নিহত ও সাতজন আহত হয়েছেন। এ নিয়ে ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় ২২ হাজার ৪৩৮ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হলো।

এরই মধ্যে গাজার মেয়র ইয়াহিয়া আল–সারাজ উপত্যকাটির ১৯ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য জরুরি ভিত্তিতে জ্বালানি, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী দিয়ে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন। এই ফিলিস্তিনিদের ৪০ শতাংশই এখন দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছেন।