হামাস নেতা খলিল আল-হায়া
হামাস নেতা খলিল আল-হায়া

যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাইডেন: হামাস নেতা

ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে উপত্যকাটির শাসক গোষ্ঠী হামাস। সোমবার হামাস নেতা খলিল আল–হায়া বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ব্যক্তিগতভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মধ্যস্থতাকারীরা।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করছে মূলত কাতার ও মিসর। সোমবার হামাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, তাদের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়ে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানিকে ফোনে যুদ্ধবিরতির চুক্তির প্রস্তাব অনুমোদনের বিষয়টি জানিয়েছেন। মিসরের গোয়েন্দাবিষয়ক মন্ত্রী আব্বাস কামেলকেও একই কথা বলেছেন তিনি।

গাজায় যুদ্ধবিরতির চুক্তি বাইডেন প্রশাসনের অগ্রাধিকার তালিকার শীর্ষে রয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার। সোমবার তিনি বলেছেন, বর্তমানে যুদ্ধবিরতির চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা-সিআইএর প্রধান বিল বার্নস কাজ করছেন। বাইডেন প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে সবাই এখন যুদ্ধবিরতির চুক্তির জন্য চেষ্টা করছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন

সিআইএপ্রধান কাতারের দোহায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা শেষে সোমবারই জেরুজালেমে পৌঁছেছেন। সেখানে তিনি ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য। সিআইপ্রধানের দোহা সফরের পরপরই হামাসের পক্ষ থেকে চুক্তিতে রাজি হওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কারবি বলেছেন, সিআইপ্রধান মধ্যপ্রাচ্যে যে আলোচনা করেছেন, তার ফলশ্রুতিতেই হামাসের ওই প্রতিক্রিয়া এসেছে। তবে হামাস চুক্তির কী কী শর্তে রাজি হয়েছে, সে বিষয়ে মুখ খোলেননি যুক্তরাষ্ট্রের এই কর্মকর্তা।

জন কারবি বলেছেন, যুদ্ধবিরতির আলোচনা একটি জরুরি পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতিতে তিনি কিছু বলতে চান না, যাতে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনা যেন নস্যাৎ না হয়।

গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভেতরে ঢুকে হামলা চালায় হামাস। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। দেশটি থেকে প্রায় আড়ই শ জনকে ধরে এনে জিম্মি করে হামাস। সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৭৩৫ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আহত হয়েছে ৭৮ হাজারের বেশি মানুষ।

হামাসের রাজি হওয়া যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে তিনটি ধাপ রয়েছে বলে জানিয়েছেন খলিল আল–হায়া। তিনি বলেন, প্রথম ধাপে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের গাজায় নিজেদের বাসায় ফিরিয়ে আনা হবে। বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রীর সরবরাহ স্বাভাবিক করা হবে। এ ছাড়া হামাসের হাতে জিম্মি থাকা প্রত্যেক নারীকে মুক্তির বিনিময়ে ৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে ফিলিস্তিনের পক্ষে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের বিষয়ে আল–হায়া বলেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে পুরুষ জিম্মিদের মুক্তি দেবে হামাস। বিনিময়ে আরও ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে। তবে তাঁদের সংখ্যা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। আর তৃতীয় ধাপের মধ্যে থাকবে তিন থেকে পাঁচ বছরের জন্য গাজা পুনর্গঠন পরিকল্পনা বাস্তাবায়ন শুরু করা।

ইসরায়েল এই যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি হয়নি। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাস যে প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে তাতে ইসরায়েলের দাবিগুলো পূরণ হয়নি। তবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য কায়রোয় মধ্যস্থতাকারীদের একটি দল পাঠানো হবে।

ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা রাফায় অভিযান চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও জানিয়েছেন নেতানিয়াহু।