ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে থাকা একটি ক্রসিং দিয়ে গাজায় ত্রাণের ট্রাক প্রবেশ করছে
ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে থাকা একটি ক্রসিং দিয়ে গাজায় ত্রাণের ট্রাক প্রবেশ করছে

গাজায় খাদ্যবোঝাই শতাধিক ত্রাণের লরি লুট

গাজায় জাতিসংঘের পাঠানো খাদ্যপণ্যবোঝাই ১০৯টি লরিতে ভয়াবহ লুটপাট হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)।

ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে ইসরায়েলনিয়ন্ত্রিত কেরেম শালম ক্রসিং দিয়ে ত্রাণের ওই লরিগুলো পার হওয়ার সময় লুটপাটের ঘটনা ঘটে। ৯৭টি লরি নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেগুলোর চালকদের বন্দুকের ভয় দেখিয়ে লরিতে থাকা ত্রাণ খালি করে দিতে বাধ্য করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, মুখোশপরা একদল মানুষ গ্রেনেড ছুড়ে ত্রাণের লরিবহরে হামলা চালায়।

কারা এই হামলা চালিয়েছে, তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন ইউএনআরডব্লিউএর কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি। তিনি বলেন, ‘গাজার আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ার অর্থ এই পরিবেশে ত্রাণ সরবরাহ কার্যক্রম পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’

গাজার ২০ লাখ মানুষ মানবিক ত্রাণের ওপর নির্ভর করে সম্পূর্ণরূপে বেঁচে আছে। তাই এ বিষয়ে এখনই হস্তক্ষেপ না করলে ছোট ওই ভূখণ্ডটিতে খাবারের যে ভয়াবহ সংকট চলছে, তা আরও মারাত্মক রূপ নেবে বলে সতর্ক করেছে ইউএনআরডব্লিউএ।

গত শনিবার ত্রাণের লরি লুটের ঘটনা নিয়ে প্রথম খবর প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স। গাজায় ইউএনআরডব্লিউএর একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স বলেছিল, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে কেরেম শালম থেকে ত্রাণের লরির ওই বহরটিকে ‘অচেনা একটি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল’।

গাজায় হামাস পরিচালিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, তাদের নিরাপত্তাকর্মীরা ‘ট্রাকের ত্রাণ চুরির সঙ্গে জড়িত অপরাধী দলের ২০ জনের বেশি সদস্যকে হত্যা করেছে’। সেখানকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের সহায়তায় ওই অভিযান পরিচালিত হয়েছে।

গতকাল সোমবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে লাজারিনিকে ত্রাণবোঝাই লরিবহরের যাওয়ার রাস্তা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না। তবে তিনি ত্রাণ লুটের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

লাজারিনি বলেন, ‘আমরা অনেক আগেই (গাজায়) আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ার বিষয়ে সতর্ক করেছিলাম। চার থেকে পাঁচ মাস আগেও আমাদের স্থানীয় ব্যবস্থা ছিল। গাজায় আমাদের লোকজন ছিল, যারা ত্রাণের বহর পাহারা দিয়ে নিয়ে যেত। এখন সেই ব্যবস্থা একেবারেই নেই। এর অর্থ গাজার দক্ষিণাঞ্চলে আমরা এমন একটি পরিবেশে আছি, যেখানে স্থানীয় অপরাধী দল, স্থানীয় পরিবারগুলো যেকোনো ব্যবসা বা যেকোনো কর্মকাণ্ডের দখল পেতে পরস্পরের সঙ্গে লড়াই করছে। সেখানে এমন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে যে (ত্রাণ) কার্যক্রম পরিচালনা করা অসম্ভব।’

গাজার দক্ষিণের নগর খান ইউনিসে খাবারের খোঁজে মরিয়া একদল মানুষ ইউএনআরডব্লিউ পরিচালিত একটি কারিগরি কেন্দ্রে তাণ্ডব চালানোর চেষ্টা করে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, তারা ভেবেছিল সেখানে ত্রাণ রাখা হয়েছে। কিন্তু ত্রাণের লরিবহরে আগেই লুটপাট হয়েছে। কারিগরি কেন্দ্রের গুদামগুলোতে তাই নেওয়ার মতো কিছুই ছিল না।

ত্রাণের লরিবহর লুটের বিষয়ে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করা হয়নি।